এপ্রিল ১৮, ২০২১
ফেসবুক বন্ধুদের কল্যাণে পারুলিয়ায় দৃষ্টিনন্দন মদিনা মসজিদ নির্র্মাণ
মীর খায়রুল আলম: বর্তমান সময়ের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের অন্যতম ফেসবুক। এই ফেসবুকের মাধ্যমে বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের খবর নেওয়া। সারাসরি ভিডিও, অডিও কল, ছবি ও জরুরী তথ্য আদান প্রদান করা হয়। এই ফেসবুকের মাধ্যমে সমাজে যেমন ভালো কিছু করা সম্ভব তেমনই মিথ্যা তথ্য বা গুজব ছড়ানো খুব সহজ ব্যাপার পরিণত হয়েছে। তবে ফেসবুকের কল্যাণে অনেক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন অনেকে। আবার সামাজিক ও ব্যক্তি সমস্যা তুলে ধরেও তার সুফল মিলছে। তেমনই একটি ভালো কাজের সুফল মিলেছে সাতক্ষীরার পারুলিয়ায়। ফেসবুকের স্টাটাস ও লাইভে বৃত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। আর এই এটির নাম দেওয়া হয়েছে মদিনা মসজিদ। বর্তমান মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা ফজলুল হক আমিনীর উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় ফেসবুকের বন্ধু, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও কুয়েত রিলিফের আর্থিক সহযোগিতায় ৫মাসে নির্মাণ হয়েছে মসজিদটি। পারুলিয়া টু বদরতলা সড়কের ভাটা সংলগ্ন মসজিদটি বিভিন্ন রং বেরং ও কারুকাজে নির্মাণ হওয়ায় এলাকার মানুষের নজরকাড়তে শুরু করেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদটি ব্যবহার উপযোগী হলেও পুরোপুরি নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি এখনো। তবে মদিনা মসজিদ নির্মাণের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাফেজ মাওলানা ফজলুল হক আমিনি কয়েক মাস আগে দক্ষিণ পারুলিয়া পূর্বপাড়ায় একজন প্রতিবন্ধী যুবকের জানাজার নামাজ পড়তে এসে দেখেন ওই এলাকায় কোন মসজিদ নেই। ওখান থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দুরে মসজিদ হওয়ায় এলাকার মানুষের অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। এমনকি ওয়াক্তিও নামাজ পড়তে গেলেও তারা সময় মত পৌঁছাতে পারেন না। আর তাই তিনি উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয়দের ডেকে একটি মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব দেন। স্থানীয়রা সম্মতি দেওয়ায় তিনি জায়গা খুঁজতে শুরু করেন। অবশেষে স্থানীয় বৃদ্ধ কাছেদ আলী গাজী তার বাড়ির পাশের প্রায় ৫শতক জমি মসজিদ নির্মাণের জন্য দান করেন। তার এই দান করা জমির অংশে পুকুর ভরাট করে নিচ থেকে পিলার নির্মাণ করে ধাপে ধাপে কাজ শুরু হয়। স্থানীয়দের কিছু সহযোগিতা নিয়ে কাজ শুরুর পর দেখা দেয় অর্থ সংকট। আর এই সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছে যেয়ে এবং ফেসবুকে মসজিদ নির্মাণের জন্য মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন হাফেজ মাওলানা ফজলুল হক আমিনী। তার এই প্রচেষ্টায় বিভিন্ন মানুষ সাড়া দিতে থাকে। এভাবে মসজিদের নিচের তলার কাজ শেষ হয়। পরে আবারো ফেসবুক লাইভ করে ২য় তলার জন্য সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। এরপর খেজুরবাড়িয়া গ্রামের কৃতিসন্তান উপ-সচিব আকবর আলীর সাথে যোগাযোগ করেন তিনি। তার মাধ্যমে কুয়েত রিলিফের সাথে ফজলুল হক আমিনীর সাথে যোগাযোগ করে দেন তিনি। এরপর সংস্থা থেকে পরিদর্শন করে কুয়েত রিলিফের মাধ্যমে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার সহযোগিতা পেয়ে কাজ শুরু করেন। সবমিলে বর্তমান পর্যন্ত ২য় তলায় কাজ শেষ করতে খরচ হয়েছে ৯ লক্ষার্ধীক টাকা। মসজিদটি আয়তনে ছোট হওয়ায় প্রতি তলায় ৫টি সারিতে ১শত মানুষ একসাথে নামাজ আদায় করতে পারবে। মসজিদটি ২তলায় ৬টি জানালা, একটি প্রধান গেট ও ৬টি ফ্যান রয়েছে। কিন্তু এখনো প্রয়োজন আরও ১৫টি ফ্যান। তবে মসজিদের জায়গাটি সাপমারা খালের পাড়ে হওয়ায় নিচতলার কাজ শেষ না হওয়ায় বর্তমানে আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া ২য় তলায় রং আর সাজে মনোমুগ্ধকর করে তোলা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে প্রতিদিন মানুষ সরকারি নির্দেশনা মেনে নামাজ আদায় করছে। তবে, খালের পাড়ে উন্মুক্ত স্থানে মসজিদটি হওয়ায় দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। মসজিদটি সৈন্দর্য্য বৃদ্ধি করতে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের টালস ও লাইট। তাছাড়া উন্মুক্ত পরিবেশে এমন দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছে একনিমিশে। মসজিদের জমিদাতা বৃদ্ধ কাছেদ আলী গাজী জানান, হুজুর যখন মসজিদ নির্মাণের কাজ করতে চেয়েছিল। কিন্তু জমির অভাবে মসজিদ নির্মাণ হচ্ছিল না। আমাকে বিষয়টি জানালে আমি বাড়ির পাশের একটি অংশ মসজিদের জন্য দিয়ে দেই। মসজিদটি নির্মাণ হওয়ায় আমাদের খুবই কাজে আসছে। আমরা সহজে সেখানে নামাজ আদায় করতে পারছি। আর মসজিদটি অনেক সুন্দর ভাবে তৈরি করা হয়েছে। দেখলে মনটা ভরে যায়। মসজিদের বর্তমান ইমাম ও মুল উদ্যোক্তা ফজলুল হক আমিনী বলেন, মসজিটি নির্মাণ করতে যেয়ে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। স্থানীয়রা পর্যাপ্ত অর্থ দিতে না পারলেও শ্রম দিয়ে এবং তাদের সমার্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এমনকি স্থানীয় এক হিন্দু যুবকও মসজিদ নির্মাণ কালে শ্রম দিয়েছেন। বিষয়গুলো ভাবলে খুবই শান্তি লাগে। তাছাড়া মসজিদের জমিদাতার নিজে থাকেন একটি কুড়ে ঘরে। তিনি এই কাজে যে ভূমিকা রেখেছেন তা সত্যি আনন্দের। এছাড়া একজন ভ্যানচালক মসজিদের খাটিয়া প্রদান করেছেন। তার কোন সন্তান নেই তাই ভ্যান চালিয়েছেন আবার রাতে মসজিদের কাজে শ্রম দিয়েছেন। এমনকি তার স্ত্রীর মারা গেলে কানের স্বর্ণের দুল মসজিদে দান করে দেওয়ার জন্যও বলেছেন। তিনি আরো বলেন, মসজিদটি নির্মানে ফেসবুক বন্ধু, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, কুয়েত মিশন ব্যাপক ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি এসব মানুষের কাছে সত্যি ঋণী। আমার কথায় তারা অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বলে সুন্দর মসজিদ নির্মাণ হয়েছে। তবে নির্মাণ করতে যেয়ে এখনো ৫ লাখ ৫২ হাজার ৫৯ টাকা বাকি রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি আসায় অনেকে ফেসবুক বন্ধু টাকা পাঠাতে পারছেন না। তবে, যদি কেউ আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণে অংশ নিতে চান তাহলে তাদের দান পাঠাতে পারেন। সরাসরি অথবা দান পাঠাতে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৯১৫-৪৮৪৬৭৫ নম্বরে। এদিকে, একজন ব্যক্তির প্রচেষ্টায় ভূমিহীন প্রত্যন্ত এলাকায় দৃষ্টি নন্দন মসজিদ ঘর নির্মাণ করায় সকলের কাছে প্রশংসা পাচ্ছেন ফজলুল হক আমিনী। শুধু ভালো চিন্তা আর প্রচেষ্টা থাকলে সমাজে অনেক ভালো কিছু করা সম্ভব। এটি তারই উদাহরণ বহন করে। মদিনা মসজিদের প্রসার ছড়িয়ে পড়–ক সেই প্রত্যাশা সকলের। 8,402,140 total views, 559 views today |
|
|
|