জুন ২৯, ২০২০
সরোয়ার-সিদ্দিক দুই ভাইয়ের ভুল কবুল: কলারোয়ার ওসির হস্তক্ষেপে কিশোরী মিতুর সমস্যার সমাধান
ডেস্ক রিপোর্ট: অবশেষে কিশোরীবধু অসহায় সাবিকুন্নাহার মিতুর সাথে তার স্বামীর সৃষ্ট সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াসের উপস্থিতিতে গত ছয় মাস ধরে চলে আসা সমস্যার সমধান হয়। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলার জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান ছামছুুদ্দিন আল মাসুদ বাবু, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মাষ্টার আজিজুর রহমান, সরসকাটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক তৌফিক টিপু পবিত্র সাহা, সাংবাদিক মোশাররফ হোসেন প্রমুখ। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৬ জুলাই সরোয়ার মালী সিদ্দিক মালীকে তার মেয়ের চিকিৎসায় খরচ হওয়া টাকার মধ্যে চার লাখ টাকা পরিশোধ করবে। সরোয়ারের ছেলে অসুস্থ স্ত্রীকে তালাক দিবে। ভবিষ্যতে এ নিয়ে আর কোন ঝামেলা সৃষ্টি করা যাবে না। ঘটনার বিবরনে প্রকাশ, গত চার বছর পূর্বে ক্ষেত্রপাড়া গ্রামের সিদ্দিক মালীর মেয়ে সাবিকুন্নাহার মিতুর সাথে সিদ্দিকের চাচাতো ভাই সরোয়ার মালীর ছেলে মো: হুসাইন মালী ওরফে হোসেন মালীর বিয়ে হয়। হোসেন মালী ও মিতু আপন চাচাতো ভাই বোন। দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠায় হোসেন মালী ফুসলিয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মিতুকে বিয়ে করে। এবিয়ে দুই পরিবার প্রথমে মেনে না নিলেও সময় গড়িয়ে যাওয়ার সাথে বিষয়টি স্বাভাবিক হয়ে আসে। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিয়ে বিষয়টি মেনে নেয়া হয়। এরই মধ্যে সাবিকুন্নহার সন্তান সম্ভাবা হয়ে পড়ে। অপ্রাপ্ত বয়সে মা হবে মিতু এটা মানতে নারাজ হোসেন মালীর বাবা মা। মিতুর গর্ভপাত ঘটানো হয় কাউকে না জানিয়েই। এভাবে দ্বিতীয় দফায় গর্ভপাত ঘটানোর ফলে মিতুর শাররীক জটিলতা দেখা দেয়। অসুস্থ মিতুকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া হলে ১০ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়ে যায় বাবা সিদ্দিক মালীর। হোসেন মালী ও তার পিতা সরোয়ার মালী মিতুকে শতভাগ দেখভাল না করায় আত্মবিশ^াস হারিয়ে সিদ্দিক মালী উউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের শরনাপন্ন হয়। সেখানে কয়েক দফা সালিশ বৈঠক হলেও প্রত্যাশা আর প্রাপ্তী নিয়ে বাধে টানা পোড়েন। এভাবে দীর্ঘ ছয় মাস সিদ্দিক মালী ও সরোয়ার মালী বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও নেতা কর্মীদের কাছে নালিশ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নজরে আসে কলারোয়ার থানাও অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াসের। তিনি উদ্যোগ নেন সমস্যা সমাধনের। এস আই তৌফিক টিপুর মাধ্যমের আকস্মিক ডেকে নেন সিদ্ধিক মালী ও সরোয়ার মালীর পরিবারকে। দুপুরে ওসির রুমে বসে উভয় পক্ষ তাদের সমস্যার কথা শোনান। মামলায় না যেয়ে ওসির নির্লোভ ও বাস্তবধমী এক প্রস্তাবে উভয় পক্ষ সামাজিক ভাবে বিষয়টি সমাধান করে নেয়ার প্রস্তাব দেন। এসময় পরস্পর চাচাতো ভাই সরোয়ার ও সিদ্দিক মালী তাদের সন্তানদের বিয়ে, অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে, গর্ভপাত, মেয়ের চিকিৎসা নিয়ে জটিলাসহ নানা খরচ বহন নিয়ে একে অপরের ভুল কবুল (স্বীকার) করে নেন। সততার উজ্জল দৃষ্টান্ত চলমান সময়ের শ্রেষ্ট ও মানবীক পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেয়ায় সরোয়ার মালী, সিদ্দিক মালীসহ উপস্থিত সকলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ইউপি চেয়াম্যান বাবু, মাষ্টার আজিকসহ উপস্থিত সূধী জনেরা বলেন, ভবিষ্যতে একই গোত্রের দুই পরিবার মিলে মিশে থাকার জন্য ওসির এ ভ‚মিকা এলাকাবাসি যুগ যুগ ধরে মনে রাখবে। শেষে এস আই তৌফিক টিপু দুই পরিবরের প্রধান দুই ভাইয়ের হাতে হাত দিয়ে মিলিয়ে দেন। এসময় রোগাক্রান্ত ও মৃত্যুপথযাত্রী সন্তান মিতুর আগামী দিনে কি হবে এমন কথা ভেবে চোখের পাতা ভিজে আসে অসহায় পিতা সিদ্দিক মালীর। অন্যদিকে মিতু ভালোবেসে গত চার বছর আগে যার হাত ধরে ঘর ছেড়ে বাড়ি ছেড়েছিলো স্বামী নামে সেই হোসেন মালীর চোখে মুখে দেখা যায়নি কোন প্রতিক্রিয়ার ছাপ। 8,641,994 total views, 6,993 views today |
|
|
|