মার্চ ১৩, ২০২২
মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় সাতক্ষীরার রাজাকার আবুল হাশেম ও মুজিবর গ্রেপ্তার
ডেস্ক রিপোর্ট: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতা বিরোধী অপরাধে আন্তজার্তিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে পুলিশ দু’ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। রবিবার দুপুর একটার দিকে গোয়েন্দা পুলিশ তাদেরকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার চাপড়া ও পাইথলী খামার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাতক্ষীরা শহরের পাকাপুলের পাশে চাপড়া লজের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর গুলিবর্ষণ করে পাক হানাদার ও তাদের সহযোগী রাজাকাররা। এ সময় রিক্সা চালক আব্দুর রাজ্জাক গুলিতে নিহত হয়ে প্রথম শহীদ হন। এ হত্যাকাÐে জড়িত ছিলেন আশাশুনি সদরের চাপড়া গ্রামের সদরউদ্দিন সরদারের ছেলে রাজাকার কমাÐার লিয়াকত হোসেন, তার ভাই মুজিবর রহমান, আবুল হাশেমের ভাই বাকী বিল¬াহসহ কয়েকজন। এর কয়েকদিন পর মুজিবর সরদার, লিয়াকত সরদার ও আবুল হাশেম এর নেতৃত্বে আশাশুনি সদরের চাপড়ার আনছারউদ্দিন, আশাশুনি গ্রামের গোরা চাঁদ ঠাকুর, শরাফপুরের,লোকনাথ দাস, তারাপদ দাস, কেষ্টপদ দাসসহ কয়েকজনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কুল¬ার মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। লুটপাট চালানো হয় ওই সব বাড়িতে। এ ঘটনায় আশাশুনি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন সানা বাদি হয়ে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার হিসেবে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় রাজাকার কমাÐার লিয়াকত সরদার, তার ভাই মুজিবর সরদার ও আবুল হাশেম সরদারকে আসামী করা হয়। তৎকালিন জেলা ও দায়রা জজ মামলাটি ঢাকা আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করেন সহকারি পুলিশ সুপার এমএ রাজ্জাক। ২০১৭ সালের ২৬ মে ঘটনাস্থল ঘুরে সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে সাক্ষীদের জবানবন্দি নেন এমএ রাজ্জাক। সাক্ষী দেওয়ার অপরাধে বুধহাটা দক্ষিণ পাড়ার আকবর আলীকে একটি চায়ের দোকান থেকে তুলে এনে লোহার রড দিয়ে হাত ও পা ভেঙে দেন রাজাকার আবুল হাশেম সরদার। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে এমএ রাজ্জাক অবসরে যান। পরবর্তীতে ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করেন সহকারি পুলিশ সুপার আমিনুর রশীদ। তিনি আন্তজার্তিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত এটর্ণি জেনারেল সাইদুর রহমান ও সহকারি এটর্ণি জেনারেল ব্যারিষ্টার রাজিয়া সুলতানা চমন ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। একপর্য়ায়ে বাদির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ও রাজাকার কমাÐার লিয়াকত সরদার দু’ মাস আগে মারা যাওয়ায় তদন্তকারি কর্মকর্তা আবুল হাশেম সরদার ও মুজিবর সরদারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন আন্তজার্তিক আপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাড. গোলাপ আরিফ টিপু। রবিবার ওই প্রতিবেদন শুনানীর সময় রাষ্ট্রপক্ষ দু’ আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইলে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করেন। মানবতাবিরোধী অপারাধে (আইসডি বিডি মিস কেস৩/২২ মামলায়) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি সংক্রান্ত বিশেষ ম্যাসেজ সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মহোদয়কে পাঠানো হয়।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সংক্রান্ত ম্যাসেজ পেয়ে রবিবার দুপুর একটার দিকে আবুল হাশেম সরদারকে পাইথলী গ্রামের নিজ খামারবাড়ি ও মুজিবর রহমানকে চাপড়া গ্রামের তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে সোমবার সকাল ১০টায় আন্তজার্তিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করানো হবে। 8,623,663 total views, 3,215 views today |
|
|
|