মে ১৩, ২০২০
রিপোর্টে নাম ডা. শাহিনুর রহমান, স্বাক্ষর করেন নাহিদ!
মোস্তাক আহমেদ, কলারোয়া প্রতিনিধি : কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের খোরদো বাজারে নাহিদ হোসেন দেড় বছর আগে ‘গাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামে একটি চেম্বার খুলে বসেন। রোগীদের আকৃষ্ট করতে সুসজ্জিত চেম্বার, কম্পিউটার বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য ল্যাব এছাড়াও রয়েছে সেন্টারের সামনে আকর্ষণীয় সাইনবোর্ড, ঔষধ লেখেন বাহারি রংয়ের প্যাডে। যদিও প্যাডে নিজের নাম বা নিবন্ধনের কোন নম্বর নেই! রয়েছে ডা. শাহিনুর রহমান’র নাম, তবে স্বাক্ষর করেন নাহিদ হোসেন। যদিও ডা. শাহিনুর রহমানকে এলাকায় কেউ চেনে না বা এই নামে কোন ডাক্তার আছে কিনা সেটাও জানেন না। তারপরও তিনি গর্ভবতী মায়েদের আলট্রাসনোগ্রাফি, রক্তসহ বিভিন্ন পরীক্ষা, এক্স-রে-সহ নিয়মিত রোগী দেখছেন। আর এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট ও কথিত ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সুস্থ হওয়ার তো দুরের কথা আরও বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে রোগীদের। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার কাঠালতলা গ্রামের আবু বক্করের ছেলে নাহিদ প্রায় ৭/৮ বছর আগে যশোরে একটি বে-সরকারি ক্লিনিকে ল্যাবে সহকারী হিসেবে কাজ করতো। বেশ ২/৩ বছর কাজ করার পর মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারে নিজেই খুলে বসেন ‘গাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টার’। বিভিন্ন টেস্টসহ নিয়মিত রোগী দেখা শুরু করেন। কয়েক বছর রমরমা ব্যবসার পর প্রতারণার শিকার রোগীরা স্থানীয় সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগ করলে স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করলে তিনি সেখানে ব্যবসা বন্ধ করে চলে আসেন কলারোয়া উপজেলার খোরদো বাজারে। পরে স্থানীয় একটি দালাল সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় বাজারের এশিয়া ব্যাংকের নীচ তলায় পুনরায় শুরু করেন ‘গাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামে প্রতারণার ব্যবসা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার এক নিকট আত্মীয় বলেন, নাহিদ যশোরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে কাজ করতো। ২/৩ বছর কাজ করে সেখান থেকে ফিরে এসে নিজেই ‘গাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ খুলে চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু করেন। তিনি বলেন, এর আগে মনিরামপুরের রাজগঞ্জ বাজারে সেন্টারটি চালু করলেও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠায় বর্তমানে কলারোয়ার খোরদো বাজারে পুনরায় সেন্টারটি চালু করে ব্যবসা করছেন। মঙ্গলবার (১২ মে) সকালে খোরদো গ্রামের রুহুল আমীনের অন্ত:সত্তা স্ত্রী হোসনেয়ারা আলট্রাসনো রিপোর্ট ভুল দেয়ায় তিনি স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন এবং ভুয়া ক্লিনিক বন্ধের দাবি করেন। এ সময় তিনি জানান, গত ৯ মে কলারোয়া পৌর সদরের মুন্না ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আলট্রাসনো পরীক্ষা করান। পরে ১২ মে তিনি পুনরায় পরীক্ষা করার জন্য খোরদো বাজারের গাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে নাহিদ জানান, এখানে এমবিবিএস ডাক্তার রয়েছেন এছাড়া তার সেন্টারে উন্নত মানের সব পরীক্ষা করা হয়। এ সময় তিনি রাজি হলে নাহিদ তার আলট্রাসনো পরীক্ষা করেন এবং পূর্বে তার মুন্না ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে একই রকম রিপোর্ট তৈরি করে দেন শুধুমাত্র সন্তান ভূমিষ্ঠের তারিখ দুই সপ্তাহ এগিয়ে এনে রিপোর্ট দেন। ভুক্তভোগীর স্বামী রুহুল আমীন জানান, রিপোর্টের নীচে ডা. শাহিনুর রহমানের (এমবিবিএস) নাম লেখা ও স্বাক্ষর করা। অথচ উক্ত সময়ে গাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শাহিনুর রহমান নামে কোন এমবিবিএস ডাক্তার না থাকলেও সে নিজেই ডাক্তারের নাম ব্যবহার করে স্বাক্ষর করে অসহায় মানুষদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে। চিকিৎসা সেবা দেয়ার নামে কথিত ডাক্তার নাহিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে জন্য তিনি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এদিকে খোরদো বাজারের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ জানান, ছয় মাস আগে মাটিতে পড়ে আমার কোমরের হাড় সামান্য ভেঙে যায়। এ সময় আমি নাহিদের গাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্সরে করার পর তিনি জানান, আমার হাড়ে কোন সমস্যা হয়নি। এ সময় আমি সুস্থ হওয়ার জন্য তার কথা শুনে প্রায় দশ হাজার টাকার ঔষধ সেবনের পরও উন্নতি না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যায় এবং সেখানে রিপোর্টে আমার কোমরের হাড়ে ফাটল ধরা পড়ে। পরবর্তীতে আমি সুস্থ হতে নিজের জমি বিক্রি করে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ করে বর্তমানে ভালো আছি। কিন্তু আমার যে ক্ষতি হয়েছে তার মূল্য কি চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণাকারী নাহিদ দেবে? তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলাকায় অনেক অসহায় মানুষ রয়েছে যারা ভন্ড চিকিৎসক নাহিদের কাছে প্রতারিত হয়েছেন কিন্তু স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাকে আশ্রয় দেয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তিনিও নাহিদকে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ এবং তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা সিভিল সার্জনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ বিষয়ে গাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মালিক নাহিদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আলট্রাসনোসহ বিভিন্ন রক্তের টেস্ট করেন বলে স্বীকার করেন। তবে রিপোর্টের নীচে ডা. শাহিনুর রহমানের স্বাক্ষর কে করেছে এবং তিনি কোন এলাকায় কর্মরত আছেন এমনটি জানতে চাইলে নাহিদ হোসেন বলেন, আপনি আসেন, একসাথে বসে আলাপ করব বলেই তিনি ফোন বন্ধ করে দেন। কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমানের কাছে গাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক নাহিদের প্রতারণার বিষয়ে অবহিত করা হলে তিনি দ্রæত খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। 8,644,122 total views, 474 views today |
|
|
|