এপ্রিল ১৪, ২০২০
সাতক্ষীরায় সীমান্ত পথে আসছে অবৈধ রেণু : করোনার শঙ্কায় স্থানীয়রা
মীর খায়রুল আলম, নিজস্ব প্রতিনিধি : বিশ্বব্যাপী করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে। আর এর মধ্যে ভারত থেকে চোরাই পথে আসছে চিংড়ি পোনা। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, একটি অসাধু সিন্ডিকেট সাতক্ষীরার ইছামতি সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে ভারত থেকে বাগদার ডিম বা নপলি এনে পোনা উৎপাদন করে মনোপলির ব্যবসা করছে। চিংড়ি উৎপাদনের সাথে জড়িতরা বলছেন, চোরাই পথে আসা ভারতীয় ডিমে উৎপাদিত পোনা খুবই দুর্বল ও নিম্নমানের। এমনকি কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এ সব পোনা ঘেরে ছাড়লে ভাইরাস ও অন্যান্য জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করছেন তারা। একই সাথে ভারত থেকে আসার পথে করোনা ভাইরাসের জীবাণু বহন করছে কি’না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ভারত থেকে আসা চিংড়ির পোনা সাতক্ষীরা, খুলনা, পাইকগাছাসহ বিভিন্ন এলাকার হ্যাচারীতে চলে যায়। সেখানে নামমাত্র কোন রকম লালন পালন করে বিক্রয় করা হয় চাষিদের মাঝে। আর এতে বিপদের সম্ভবনা বেশি থাকে। তাই অবিলম্বে এ পোনার বাজারজাত বন্ধে পদক্ষেপ নিতে এবং চিংড়ি শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘প্রশাসনের তৎপরতায় বদলে গেছে চোরাচালানীদের কারবার। এখন আর লোক পাঠিয়ে বা নৌকায় করে এসব রেনু পাচার করা হয় না। বিশেষ কায়দায় সুতা/দড়ির মাধ্যমে এপার থেকে ওপারের মালামাল পারাপার করা হয়। এতে খুব সহজে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক, চিংড়ি পোনা সহ বিভিন্ন মালামাল আনা নেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের এই চক্রের এক সদস্যকে ভারতীয় গলদার রেণুসহ আটক করে বিজিবি। আটক শাহাবুদ্দীন সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী হাড়দ্দাহ গ্রামের আবু বকর গাজীর ছেলে। গত রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকাল ৩টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর স্লুইজ গেইট এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাখরা কোমরপুর বিওপি’র হাবিলদার মহিউদ্দীনের নেতৃত্বে ভারত থেকে নিয়ে আসা ১৭ পলিব্যাগ গলদার রেণুসহ চোরাকারবারীকে আটক করেন ওই বিজিবি সদস্যরা। পরে বিজিবির পক্ষ থেকে আটককৃত গলদার রেণুসহ চোরাকারবারী শাহাবুদ্দীনকে দেবহাটা থানায় হস্তান্তর করে। একই সাথে তার বিরুদ্ধে (নং-০১) মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ভাঁতশালা কোম্পানী সদরের কোম্পানী কমান্ডার আমিনুল ইসলাম। তবে সীমান্ত পাড়ের মানুষেরা মনে করেন পরীক্ষা ছাড়া অবাধে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এভাবে চিংড়ির পোনা ঢুকে পড়লে মৎস্য ও সামাজিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়তে পারে। এমনকি এই পোনার সাথে করোনা ভাইরাসের জীবাণু দেশে প্রবেশ করে তা মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। যার মধ্যে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা। কেননা ভারত থেকে আসা মাছের রেনু উপজেলার বিভিন্ন হ্যাচারীর পাশাপাশি চলে যায় কুলিয়া মৎস্য রেনু আড়তে। সেখানে পাইকারি দরে জেলা ও জেলার বাহিরের চাষি এবং ব্যাবসায়ীরা সেগুলো নিজ এলাকায় নিয়ে যায়। ফলে এতে ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভবনা বিরাজ করছে। এতে তারা সব সময় আতঙ্কে রয়েছে বলেও জানায়। জেলা চিংড়ি রেণু পোনা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. আবুল কালাম বাবলা বলেন, ‘যখন কক্সবাজারের রেণু পোনা বন্ধ থাকে তখন কিছু কিছু রেণু ভারত থেকে আসে। কিন্তু এখন কক্সবাজারের মাছ আসছে তাছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে ভারত পুরো লকডাউন সুতরাং এখন রেণু পোনা আসার প্রশ্নই ওঠেনা। আর চোরাই পথে কোন রেণু পোনা ভারত থেকে আসছে বলে আমার জানা নেই’। এ বিষয়ে দেবহাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার বদরুজ্জামান জানান, ‘দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে চিংড়ির পোনা বা চিংড়ি আনা সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ। যদি কেউ এর সাথে জড়িত থাকেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মৎস্য খ্যাতে উন্নয়নে সরকারের নির্দেশ মোতাবেক আমরা কাজ করে যাচ্ছি’। উপজেলার মৎস্য সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে তার দপ্তর থেকে পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলেও জানান। 8,474,685 total views, 2,325 views today |
|
|
|