জানুয়ারি ২১, ২০২০
সাপমারা খাল খনন শেষ হওয়ার আগেই পাড়ে ধস
মীর খায়রুল আলম, নিজস্ব প্রতিনিধি: বহুল আলোচিত সাপমারা খাল খনন কাজ শেষ হওয়ার আগেরই পাড়ে ধস নামতে শুরু করেছে। এতে কাজের সচ্ছতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধস নামায় সরকারের কোটি কোটি টাকা জলে ভেসে যেতে বসেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনোমতে দায়সারাভাবে খাল খনন করা হচ্ছে। বিস্তৃর্ণ এলাকার কৃষি, মৎস্যঘের সহ নানামুখী যে সুবিধার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল, তার কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করছেন তারা। খনন সঠিক ও যথাযথ না হওয়ায় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানাতে এলাকাবাসী প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানা গেছে। আবেদনের সঙ্গে তাঁরা এলাকার কয়েকশত মানুষের স্বাক্ষর যুক্ত করেছেন। আবেদনে তাঁরা লিখেছেন, মূল অংশে খনন কাজ না করে খননযন্ত্র দিয়ে আঁচড়ে টেনে খালের পাড়ে ¯েøাপ করার চেষ্টা চলাচ্ছে ঠিকাদাররা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পটুয়াখালির মেসার্স এম কে এমবিইউ (জেভি) এবং মেসার্স আবুল কালাম আজাদ বাস্তবায়ন সহযোগী হিসাবে কাজ করছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, খননযন্ত্রের সাহায্যে খাল খনন চলছে। কোনোমতে মাটি খুঁড়ে তা পাড়ে তোলা হচ্ছে। স্থানীয়দের সহায়তায় মেপে দেখা যায়, নকশা অনুযায়ী যে মাপ হওয়ার কথা, তার অর্ধেকও খনন হয়নি। স্থানীয় অনেকেই খাল খনন কাজ চলার সময়গুলোতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের উপর নজর রাখেন। কিন্তু অধিকাংশরাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া হুমকিতে প্রতিবাদের সাহস হারিয়ে ফেলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জন প্রতিনিধি জানান, তাদের বিরুদ্ধে গেলে সরকারি কাজে বাধা দেয়া ও চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা দিয়ে জেলে ভরা হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়েছে । তারা আরো জানান, খালের বিভিন্ন অংশ দখল করে অনেকেই বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। কেউ আবার খালের বিভিন্ন অংশ বন্দোবস্ত নিয়ে ব্যবহার করছেন। কোন স্থানে স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার কোথাও অর্থের দাপটে টিকে আছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মী ইয়াসিন আরাফাত বলেন, আমাদের যা নিয়ম সে অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। কোন অনিয়ম করা হচ্ছে না। তবে স্থান ভেদে এক এক রকম ভাবে খনন করা হচ্ছে। খনন কাজের সহকারী ঠিকাদার আক্কেল আলী জানান, ধস নামলে কি করার। আবার কাজ করতে হবে। অর্থের বিনিময়ে অসহায়দের বসতবাড়ি উচ্ছেদ করা হলেও প্রভাবশালীদের ভবন কিভাবে দাঁড়িয়ে আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে জানান, খাল খনন করতে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে খালের জায়গায় কিছু ঘর রয়েছে। তবে তাদের থেকে টাকা নেওয়ার বিষয় অস্বীকার করেন আক্কেল আলী। তাছাড়া কাঁদা পানি না শুকিয়ে কাজ করা হলে খনন কাজ কতটুকু সঠিক ভাবে সম্পন্ন হবে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব জায়গায় কাঁদা পানি। এসব ধরতে গেলে তো কাজ করা যাবে না। কাজ শেষ করতে না পারলে বিল পাওয়া যাবে না। পাউবো’র পারুলিয়া শাখা পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা রহমান জানান, যে সব জায়গায় মাটি ধস নামছে, কাঁদা শুকিয়ে গেলে আবারও মাটি দেওয়া হবে। কাজের সমস্যা থাকলে সরাসরি জানাবেন, দরকার হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে, খালটিতে এখনও অনেক স্থানে পানি আছে, তার মধ্যেই খনন কাজ চলছে। পাড়ের গাছগুলো উপড়ে ফেলা হয়েছে। খননযন্ত্র দিয়ে পাড়ে কিছু কিছু মাটি ফেলা হচ্ছে। কোনো রকম মাটি না কেটে এক্সেভেটর দিয়ে খালের কিছু মাটি টেনে পাড়ে লেপে সমান করে দেওয়া হচ্ছে। দায়সারা ভাবে কাজ শেষ করে জোয়ারের পানি তুলে দিয়ে না যেতে পারে সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারি জরুরী বলে মনে করেন খাল পাড়ের মানুষেরা। তাই সাপমারা খাল পুন:খননের মধ্য দিয়ে দেবহাটা-আশাশুনি উপজেলা অর্থনীতির পরিবর্তন আনতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল। 8,478,522 total views, 691 views today |
|
|
|