অক্টোবর ৫, ২০১৯
মুক্তিযোদ্ধা হয়েও পদমর্যাদা-ভাতা থেকে বঞ্চিত সামছুর আলী
এম.আর মামুন, বল্লী প্রতিনিধি: সামছুর আলী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও পাননি পদমর্যাদা, ভাতাসহ সরকারি সুযোগ সুবিধা। ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করলেও বর্তমানে অভাব অনাটন আর সন্তানদের অবহেলায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা সামছুর আলী সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। মুক্তিযোদ্ধা সামছুর আলী জানান, আমি ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ শুনে বাড়িতে আর বসে থাকতে পারিনি। যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে ভারতীয় সীমান্তবর্তী ভাদিয়ালী হাকিমপুর মুক্তিফৌজ অপারেশন ক্যাম্পে চলে যাই। নাম দেই মুক্তি ফৌজে। কয়েকদিন মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিতে থাকি। ট্রেনিং শেষ হতে না হতেই আমাদের ক্যাপ্টেনের নির্দেশে ঝাঁপিয়ে পড়ি মিশনে। প্রথম দিনেই গোলাবারুদ বহন করে হানাদার বাহিনীর কয়েকটি ক্যাম্প ধ্বংস করেছিলাম। মিশন শেষ করে ক্যাম্পে ফিরে আসি। ক্যাম্পে ফেরার পর আমাদের ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন শফিউল্লাহ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, ‘এগিয়ে যাও, তুমি পারবে সামছুর আলী’। চোখ বন্ধ করলে আজও সেই দিনগুলো আমার সামনে ভেসে ওঠে, কানে বাজে সেসব কথা। তিনি আরও জানান, আমার মুক্তি ফৌজে নাম দেয়ার কথা অজানা এক রাজাকারের মাধ্যমে পাক বাহিনী জানতে পারে। এজন্য আমার পিতা এবং মেজো ভাইকে তুলে নিয়ে যায় মিলিটারিরা। আমার বাপ-ভাইদের ওপর চালানো হয় নির্মম অত্যাচার। তারা জানতে চেয়েছিল সামছুর আলী কোথায় গেছে, কোথায় থাকে। শিকার না করাতে তাদের উপর চালানো হয় অমানুষিক অত্যাচার। তাদেরকে কালো কাপড় পরিয়ে রাখা হয় হত্যা করার জন্য। ভাগ্যের জোরে সে দিন মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরে আসেন আমার পিতা এলাহী বক্স দফাদার এবং মেজো ভাই আনছার আলী। তারপর দেশ স্বাধীন হলো আমিসহ আরও অনেকে বাড়িতে ফিরে আসি। সেই থেকে আর কেউ কোনো দিন খোঁজ খবর নেয় না। মুক্তিযোদ্ধা সামছুর আলী দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরার একান্ত সাক্ষাৎকারে অশ্রæসিক্ত নয়নে তার অতীত এবং বর্তমান দুরবস্থার এসব কথা জানান। তিনি আরও জানান, ৭০ বছরের জীবনে তার স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে এবং ছেলে তিনটি বিয়ে করে যার যার মত পরিবার নিয়ে তারা আলাদা হয়ে থাকে। কেউ বাবার খোঁজ খবর নেয় না। ফলে অতি কষ্টের সাথে স্ত্রীকে নিয়ে দিন কাটছে তার। চোখে ভালো দেখতে পায় না, শরীরের শক্তি কমে যাওয়ায় উপার্জন করতে পারে না। এলাকার মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে দু:খ কষ্টের মাঝে কাটছে তার দিন। এমতাবস্থায় তার দু:খ দুর্দশার ও মানবেতর জীবন থেকে মুক্তি পেতে প্রধানমন্ত্রীসহ জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সেই সাথে তার ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে চান সামছুর আলী। 8,503,175 total views, 577 views today |
|
|
|