জানুয়ারি ৮, ২০২৫
কলারোয়ায় এসিল্যান্ড না থাকায় ভূমি সেবায় চরম ভোগান্তিতে জনসাধারন
নিজস্ব প্রতিনিধি : প্রায় এক মাস এসিল্যান্ড না থাকায় এবং ভূমি সেবার অনলাইন সার্ভার বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে কলারোয়া উপজেলার সেবা প্রত্যাশী গ্রাহকরা। চিকিৎসার প্রয়োজনে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে না পারায় নিজের সম্পদকে ‘পুথিগত বিদ্যা, আর পর হস্তে ধন’-এর সঙ্গে তুলনা করছেন ভুক্তভোগী জনসাধারণ। নজিরবিহীন জনভোগান্তির পাশাপাশি শুধু এ কারণেই সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। জমির মিউটেশন, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা ও জমি ক্রয়-বিক্রয় করার কাজ করতে না পেরে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়াসহ সারা দেশের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। দীর্ঘ এক মাস যাবৎ কলারোয়া এসিল্যান্ড না থাকায় এবং অনলাইন সার্ভার বন্ধ থাকায় ভূমিসেবা সেক্টরে বিপত্তির পাশাপাশি সরকারও হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। গত বছরের ১৯ নভেম্বর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) আবদুল্লাহ-আল-ইমরান পদোন্নতি জনিত কারনে বদলী হওয়ায় এবং ২৬ নভেম্বর থেকে সারা দেশে ভূমি সেবা অনলাইন সার্ভার বন্ধ রয়েছে। সফটওয়্যারগুলো ধীরগতিসম্পন্ন হওয়ায় ই-নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর ও খতিয়ান সেবা পেতে অসুবিধা হচ্ছে। বলা হচ্ছে সেবা প্রাপ্তিতে গতিবৃদ্ধি করতে কাজ চলছে। কিন্তু দীর্ঘ এক মাস এসিল্যান্ড না থাকায় ও সার্ভার বন্ধ থাকায় সারা দেশের চেয়ে কলারোয়া উপজেলায় ভূমি সেবা কার্যক্রমে ব্যাপক প্রতিকূল প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের ৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে প্রতিদিন বহু লোকজন ভূমি সেবা পেতে যাতায়াত করে থাকে। জমির কাগজপত্র ঠিক করা, ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়া, ই-নামজারির কাজ করা, খতিয়ান সেবা নিতে ভূমি অফিসে যাওয়া শত শত মানুষ ‘অনলাইন সার্ভার বন্ধ, পরে আসেন’ – এমন বক্তব্য শুনতে শুনতে হতাশ হয়ে পড়েছেন। ভূমি অফিসে হাঁটতে হাঁটতে নিরাশ হয়ে যাওয়া যুগিখালী ইউনিয়নের তালুন্দিয়া গ্রামের আফিলউদ্দিনের ছেলে সাইফুল আসলাম জানান, হার্টের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন এ কারনে জরুরী ভিত্তিতে জমি বিক্রি করে চিকিৎসা নিতে দেশের বাহিরে না যেতে পারলে যে কোন সময় মারা যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন সম্পদ থাকতেও বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া ছাড়া কোন পথ দেখতে পারছি না। বাঁটরা গ্রামের আ: ওয়াজেদ আলী জানান, জালালাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে তিনি এক মাস হাঁটছেন কিন্তু সার্ভার কাজ করছে না শুনতে শুনতে হতাশ হয়ে গেছেন। চিকিৎসার খরচ মেটাতে জমি বিক্রয় করার জন্য নামজারির কাজ করতে এসেছেন। নামজারি হচ্ছে না, চিকিৎসা নিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। জয়নগর গ্রামের আ:বারীক গাইন জানান, তিনি প্রায় এক মাস নামজারির আবেদন করতে ভূমি অফিসে হাঁটছেন। অনলাইন সমস্যার কারণে অপেক্ষা করতে করতে চোখ ছানাবড়া হতে চলেছে। ছেলের বিদেশ যাওয়ার ভিসার মেয়াদ শেষের পথে জমি বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতি হযে যাবে। দলুইপুরের সুরুত আলী জানান, ভূমি অফিসে হাঁটতে হাঁটতে জুতা ক্ষয় হয়ে গেল কিন্তু নামজারি করানো হলো না। ঝিকরা গ্রামের বাবলু, কয়লা গ্রামের সাবেক মেম্বর খালেক মোড়ল জানান, অনলাইন সমস্যায় তারা নামজারি ও ভূমি উন্নয়ন কর দিতে পারছে না। কিন্তু কবে কাজ করাতে পারব বুঝতে পারছি না। কাকডাঙ্গা গ্রামের শফিউর জানান, তিনি একটি জমি ক্রয়ের জন্য দলিল রেজিস্ট্রি করতে ২০ দিন ধরে হাঁটছেন। দলিল লেখার পর রেজিস্ট্রি করাতে পারছেন না। এ ব্যাপারে একজন দলিল লেখক জানান, নামজারি ও চেক দাখিলা কাটতে না পারায় জমি রেজিস্ট্রি করার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সপ্তাহে যেখানে ১৫০-২০০টি দলিল রেজিস্ট্রি হতো এখন সেখানে ৪০-৫০টিও হচ্ছে না। কেউ জরুরি প্রয়োজনে দলিল করতে আসছেন, কেউ চিকিৎসা বা অন্য কোনো কাজে টাকার প্রয়োজন মেটাতে জমি বিক্রয় করতে আসছেন, কিন্তু রেজিস্ট্রি করতে না পেরে বারবার ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। এতে জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা নাজেহাল ও সমস্যায় ভুগছেন। রেজিস্ট্রি অফিসের সঙ্গে জড়িতরা বিপত্তিতে রয়েছে। অপরদিকে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা দাখিলা) পরিশোধ করতে না পারা, নামজারি ও জমি রেজিস্ট্রি করতে না পারায় সরকারও হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এসিল্যান্ডের দায়িত্বে থাকা জহুরুল ইসলামের নিকট মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি এ কারনে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। 8,910,452 total views, 2,056 views today |
|
|
|