সমীর রায়, আশাশুনি : মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে আশাশুনির বুধহাটায় নিবেদিতা নার্সিংহোমে দুই রোগীর মৃত্যু হওয়ায় ক্লিনিকের সেবার মান নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
রোগির পরিবার ও স্থানীয়দের সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার কচুয়া (হামকুড়া) গ্রামের রণজিৎ সরকারের ছেলে প্রদীপ সরকারের স্ত্রী অনুরাধা সন্তান প্রসবের জন্য ১১ দিন পূর্বে নিবেদিতা নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিকের মালিক ও চিকিৎসক ডা. অরুন কুমার ব্যানার্জী রোগি দেখে সিজার করার সিদ্ধান্ত নেন। যথারীতি সিজার করা হলে একটি পুত্র সন্তান আলোর মুখ দেখে। সন্তান আলোর মুখ দেখানোর খুশির খবরটি পেয়ে যাকে সবার থেকে বেশী খুশী হবার কথা সেই মা অনুরাধা সিজারের পর থেকে সুস্থ হতে পারেনি। ৩দিন ক্লিনিকে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে রোগিতে সাতক্ষীরা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানে আইইউসিতে দীর্ঘ কষ্টকর পরিণতির মধ্যে থেকে ৭দিন পর রবিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌছানোর পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়। প্রতিবেশী ও সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, ভুল অপারেশনের কারণে সিজারের পর রোগির প্রাণ গেছে।
অপরদিকে গত সোমবার (১১ এপ্রিল) ক্লিনিকে উত্তর চাপড়া গ্রামের দুই সন্তানের জননী নাজমা খাতুনের প্রাণ গিয়েছিল ভুল অপারেশনের কারণে। নাজমার স্বামী নুর উদ্দিন জানান, সোমবার সকাল ১১ টার দিকে ক্লিনিকের সহযোগি গোপাল কুমারের মাধ্যমে তিনি তার স্ত্রীর পিত্তথলির পাথর অপারেশন করার জন্য নিয়ে যান। তাকে বলা হয় পিত্তথলির পাথর অপারেশন করতে সাতক্ষীরা থেকে বড় ডাক্তার আনা হবে এবং ১৬ হাজার টাকা চুক্তি হয়। কিন্তু অপারেশনের সময় ক্লিনিকের মালিক নিজেই অপারেশন করেন। অপারেশন থিয়েটার থেকে বলা হয় রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ। তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল নিতে হবে। ঐদিন রাত ৮টার দিকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে থাকাবস্থায় পরদিন সন্ধ্যা ৭.৩০ টার দিকে রোগি মারা যায়। তিনি আরো বলেন, নাজমা খাতুন অপারেশনের আগে সুস্থ ছিলেন। একটা ছেলে এবং একটা মেয়ে নিয়ে তাদের সোনার সংসার ছিল। আজ তারা নিঃস্ব হয়ে গেছে। তিনি এর উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন। ক্লিনিকে কোন ডিপ্লোামা নার্স, নেই ল্যাব টেকনিশিয়ান। সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে চলছে এই ক্লিনিকটি। অবিলম্বে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েন ভুক্তভোগি এলাকাবাসী।
এব্যাপারে ক্লিনিক মালিকের সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. হোসাইন শাফায়েত বলেন, রোগির সমস্যা থাকতে পারে, আবার ভুল অপারেশনের কারণে হতে পারে। অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।