জুলাই ৩, ২০২০
কোরবানির পশুর কাঙ্খিত মূল্য নিয়ে শঙ্কায় জেলার ১২ হাজার ৭৬১ খামারি
মাজহারুল ইসলাম : ফারুক গাইন এক জন সফল গরুর খামারি। গরু পালন করে প্রতিবছর তিনি ৫ লক্ষাধিক টাকা লাভ করেন। এবারও লাভের আশায় ১২ টি উন্নত জাতের ষাঁড় পালন করেছেন। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে কোরবানির হাটে পশুর দাম নিয়ে তিনি শঙ্কিত। আলাপ কালে তিনি বলেন, এবার হাটে পশুর দাম খুব বেশি হবে না। লাভের আশা করলে খামারের গরু খামারেই থেকে যাবে। সামাজিক দুরত্ব মেনে জেলার বাইরে গরু নিয়ে যাওয়া তার ওপর বেচা বিক্রি সব কিছুতেই সীমাবদ্ধতা থাকবে। একটি গরু সারা বছর লালন পালন করে ব্যায়ও বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে পশু খাদ্যের সংকটও চলছে। এখন তিনি চিন্তিত। কোরবানির হাতে পশুর দম নিয়ে তার মতো চিন্তিত জেলার প্রায় সব খামারিরা। আসন্ন কুরবানির ঈদ উপলক্ষে সাতক্ষীরা জেলার সকল খামারে পর্যাপ্ত গবাদি পশু প্রস্তুত থাকলেও কাক্সিক্ষত মূল্য নিয়ে তাই শঙ্কায় আছে খামারিরা। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এবছর আগাম কুরবানির পশুর হাট না বসায় ও খামারে খামারে ক্রেতাদের লোকসমাগম না থাকায় হতাশায় দিন গুনছেন জেলার খামারিরা। বেশ কয়েক জন খামারিদের সাথে কথা বলে তারা জানান, গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে দুই একটা গরু ছাগল পালন করা হয়। মধ্যবিত্তরাও সারা বছর তাকিয়ে থাকেন কোরবানির হাটে বেশি লাভে তাদের পালন করা পশু বিক্রির জন্য। এর উপর পেশাদার খামিরাতো আছেই। কোরবানির পশুর দাম নিয়ে এসব খামামিদের কপালে যেন চিন্তার ভাজ। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, জেলায় মোট ১২ হাজার ৭শ’ ৬১ জন খামারি আছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় খামারি আছে ১ হাজার ৯শ’ ২৮ জন, কালিগঞ্জ উপজেলায় আছে ২ হাজার ৪শ’ ২৭ জন, শ্যামনগর উপজেলায় ৭শ’ ৪৫ জন, আশাশুনি উপজেলায় ১ হাজার ৩শ’ ৯১ জন, কলারোয়া উপজেলায় ২ হাজার ৭শ’ ৫৯ জন, তালা উপজেলায় ২ হাজার ৫শ’ ৪১ জন ও দেবহাটা উপজেলায় খামারি আছে ৯শ’ ৭০ জন। জেলায় মোট ১২ হাজার ৭শ’ ৬১ জন খামারিদের খামারে কোরবানির উপযুক্ত বিক্রয়যোগ্য গরু প্রস্তুত আছে ৩০ হাজার ১শ’ ২০টি, ছাগল আছে ২৭ হাজার ৪শ’ ৮৪টি ও ভেড়া আছে ২ হাজার ৭শ’ ৪৩টি। এছাড়া জেলায় মোট গবাদি পশু আছে ৫৭ হাজার ৬শ’ ৭টি। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে খামারিরা এবার কোরবানির হাটের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন জেলার একাধিক খামারি। জেলার বেশিরভাগ খামারিরা বলছেন, ধার-দেনার টাকায় লালন-পালন করে বড় করা গরু-ছাগলগুলো আগাম বিক্রির চেষ্টা করছি। কিন্তু অন্য বছরের মতো এবছর বাড়ি বাড়ি ঘুরে কোরবানি দেয়ার মত সামর্থ্যবানদের গরু কেনার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া ব্যাপারীদেরও গরু কেনায় খুব একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। কলারোয়া উপজেলার খামারি আব্দুল জলিল জানান, ‘প্রতিবছর কোরবানির আগে গরু বিক্রি করে লাভের মুখ দেখলেও এ বছর লোকসান গুণতে হবে বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু মোটা-তাজা করতে খরচ বেশি পড়েছে। কিন্ত করোনা ভাইরাসের কারণে গরুর হাট বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছি। ধার-দেনা করে গুর পুষে এখন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছি’। কালিগঞ্জ উপজেলার খামারি বিল্লাল হোসেন জানান, ‘করোনার কারণে এবছর মানুষের মনে শান্তি নেই। কোরবানি ঈদের আর মাত্র মাস খানেক বাকি আছে, কিন্তু এখনও কেউ গরু কিনতে আসাতো দুরের কথা দামও শোনেনি’। তালা উপজেলার খামারি প্রশান্ত ঘোষ জানান, ‘দুগ্ধ খামারের পাশাপাশি কোরবানির জন্য কিছু গরু পালন করি। প্রতিবছর লাভবান হলেও এবছর গরু বিক্রি করতে পারব কি’না তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। করোনার এ সংকটময় মুহ‚র্তে কেমন দাম পাব তা নিয়েও সংশয়ে আছি। করোনার ফলে এ বছর কোরবানি পশু বিক্রি কমে যেতেও পারে’। সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ‘করোনা ভাইরাসের প্রভাবে জেলায় এ বছর কোরবানির পশুর হাট বসবে কি’না তা এই মুহ‚র্তে বলতে পারছি না। আবার কোরবানির পশুর দাম কমবে এমনটাও বলা যাচ্ছে না, যেহেতু এখন মাংসের দাম আগের মতই আছে। এখনও অনেক সময় আছে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে খামারিদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই’। 8,471,695 total views, 3,311 views today |
|
|
|