এপ্রিল ২৯, ২০২০
বাংলাদেশে মে মাস পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারে
ন্যাশনাল ডেস্ক : বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস বিস্তারের ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণ অনুযায়ী মে মাস পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে মৃত্যু হতে পারে প্রায় ৮শ’ থেকে ১ হাজার জনের। করোনা বিস্তারের ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের তৈরি প্রক্ষেপণ থেকে এমন তথ্য সরকারকে জানিয়েছে দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়া ওই সভার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংযুক্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, ডিজিএফআই এবং এনএসআই ও মহা-পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভার সভাপতি করেনা ভাইরাস প্রতিরোধ, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন। সংক্রমণের বর্তমান পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য চালু এবং প্রস্তুত করা হাসপাতাল সুবিধার বর্ণনা দেন। ওই বর্ণনায় তিনি জানান, বর্তমানে ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে সরকারি হাসপাতালে প্রায় ৬ হাজার শয্যা করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এই কার্যক্রমে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালকে কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে পরিচালনার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। করোনা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে প্রধানমন্ত্রীর সার্বক্ষণিক তদারকি, সহায়তা ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জানান, সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ডিজিএফআই ও এনএসআই মহা-পরিচালক সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দিচ্ছেন। এই রোগের বিস্তারের গতি প্রকৃতি ও ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণ নিয়ে রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যেসব সম্ভাব্য সিনারিও প্রস্তুত করেছেন, তার ভিত্তিতে এর মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। করোনা বিস্তারের ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, বিশেষজ্ঞরা দুটি Scenario প্রস্তুত করেছেন। প্রথমটি কনজারভেটিভ। যে প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ৩১ মে পর্যন্ত ৪৮ থেকে ৫০ হাজার ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারেন এবং মৃত্যু হতে পারে প্রায় ৮শ’ থেকে ১ হাজার জনের। এছাড়া অন্য একটি প্রক্ষেপণ অনুসারে, এই আক্রান্ত সংখ্যা হতে পারে প্রায় ১ লাখ। তিনি জানান, এই Worst case Scenario বিবেচনায় রেখে আমাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া এসব scenario modeling-এ অনেকগুলো Factor বিবেচনা ও ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন: Lock down, Awareness, Social distancing ইত্যাদি এবং এগুলোর বর্তমান পর্যায়। তবে এই প্রক্ষেপণটি যথাযথভাবে প্রণয়ন করে প্রস্তুতি ও রিসোর্স প্ল্যানিং করা প্রয়োজন বলে সভায় মত দিয়েছেন এনএসআইয়ের মহা-পরিচালক। আলোচ্য প্রক্ষেপণটি বিবেচনায় রেখে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার প্রস্তুতি গহীত হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সর্বশেষ চিকিৎসা নির্দেশনা অনুসারে আক্রান্তদের মধ্যে ২০ শতাংশ রোগীর হাসপাতাল নেবার প্রয়োজন পড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) জানান, সারাদেশে কোভিড-১৯ রোগীদের হাসপাতাল সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিকের একটি ম্যাপিং সম্পন্ন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী বর্তমানে সরকারিভাবে প্রায় ৬ হাজার শয্যা প্রস্তুত আছে। এর ধারবাহিকতায় সরকারি ও বেসরকারি মিলে সারাদেশে মোট ২০ হাজার শয্যা প্রস্তুত করা হচ্ছে। সভায় কোভিড-১৯ এর বিস্তার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় প্রক্ষেপণ তৈরি করে নীতি নির্ধারকদের অবহিত করার সিদ্ধান্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য প্রণীত প্রটোকল অনুয়ায়ী টেলিমেডিসিন গাইডলাইন প্রস্তুত করে রোগীদের ঘরে বসে চিকিৎসা দেওয়া সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেসব এলাকায় করোনার প্রাদুর্ভাব বেশি, সেসব এলাকায় লকডাউন ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় করোনা চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার সব সুবিধা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনে নতুন চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। এসব হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকা ও খাওয়ার সুব্যবস্থা করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় প্রতি সপ্তাহে একটি করে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করারও সিদ্ধান্ত হয়। 8,474,305 total views, 1,945 views today |
|
|
|