এপ্রিল ১৪, ২০২০
করোনা: জেলায় মোট ১৮ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায়
ডেস্ক রিপোর্ট : সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা ও সরকারি আদেশ অমান্য করে ৬ টার পর দোকান খোলা রাখা এবং বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করার অপরাধে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে মোট ১৮৪৭ টি মামলায় ১৮ লক্ষ ৬৪ হাজার ২শ’ ৯৪ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলাব্যাপী বিভিন্ন অভিযানে সর্বশেষ তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ৪১ টি মামলায় ১ লক্ষ ৪ হাজার ৬শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৪ টি মামলায় ৫১ হাজার ৩শ’ টাকা, তালা উপজেলায় ১টি মামলায় ৫শ’ টাকা, দেবহাটা উপজেলায় ৪ টি মামলায় ১৩শ’ টাকা, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৩ টি মামলায় ২৬ হাজার টাকা, শ্যামনগর উপজেলায় ১ টি মামলায় ৪হাজার টাকা, আশাশুনিতে ১৫ টি মামলায় ৯ হাজার ২শ’ টাকা, কলারোয়া উপজেলায় ৩ টি মামলায় ১ হাজার টাকা এবং জেলা প্রশাসনের ১০টি মামলায় ১১ হাজর ৬শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর অফিসে ত্রাণ তহবিল খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের ত্রাণ তহবিলে জেলা কৃষি বিভাগ তাদের ১ দিনের বেতন সমপরিমান অর্থ ১লক্ষ ৩০ হাজার ৮শ’ ৩৫ টাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সাতক্ষীরা এর তহবিলে এবং উপজেলা পর্যায়ে ৫৫ হাজার ২শ’ ৬৩ টাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ত্রাণ তহবিলে আর্থিক সাহায্য হিসেবে প্রদান করেছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে জেলার চিংড়ি চাষের উপর প্রভাবকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল তার অফিস কক্ষে সাতক্ষীরা জেলার চিংড়ি চাষী এবং প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা সভা করেছেন। করোনা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে চিংড়ি খাত ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলেন জেলা প্রশাসক। সাতক্ষীরাতে ৮৬ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয় এবং ১ লক্ষ ৪২ হাজার টন মাছ উৎপন্ন হয় যার মধ্যে ৩ থেকে ৪ হাজার মে. টন বাগদা চিংড়ি এবং ৮০০ থেকে ৯০০ মে. গলদা চিংড়ি। এই শিল্পের সাথে প্রায় ৬৭ হাজার কৃষক এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় ২.২০ লক্ষ মানুষ জড়িত। এই মুহূর্তে উৎপাদিত চিংড়ি স্থানীয়ভাবে এবং দেশের অভ্যন্তরে কীভাবে বাজারজাত করা যায় এবং বাকি চিংড়ি সংরক্ষণ করা যায় সেবিষয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া সকল চিংড়ি চাষীর ডাটাবেস করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে আগামীকাল এ বিষয়ে আরও একটি সভা করে চূড়ান্ত সুপারিশ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হবে। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ‘জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ত্রাণ মনিটরিং কমিটি গঠন প্রক্রিয়া চলমান আছে। গতকাল সাতক্ষীরার তালা উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে ‘তালা উপজেলায় করোনা প্রতিরোধে ত্রাণ, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক দূরত্ব বিষয়ক’ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ এবং দুই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় করোনা প্রতিরোধে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। উপজেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন অবনতি না ঘটে এবং কোন গুজব যেন সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসক সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন। ত্রাণ বিতরণে কোন অনিয়ম, দুর্নীতি ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সবাইকে সাবধান করেন। চিকিৎসকদের পাশে সব সময় আছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে স্থানীয় তহবিল গঠন করতে বলেন। জেলা পুলিশ, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং এনজিও সহ সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান জেলা প্রশাসক। অপরদিকে আজ মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলার প্রতিটি উপজেলায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সহকারী কমিশনারদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং আনসারের সমন্বয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতকরণ ও অভিযান আরো জোরদার করা হয়েছে। গত ৪/৫ দিনে নারায়নগঞ্জ, মাদারিপুর এবং শরিয়তপুর থেকে সেখানে ঘোষিত লক ডাউনের মধ্যেও ১০ হাজারের মত মানুষ সাতক্ষীরা জেলাতে এসেছে। এদের মধ্যে ১৮৭৬ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে এবং ৫৯৬৫ জনকে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৬ জন, শ্যামনগর উপজেলায় ১০৭ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৫৫৯ জন এবং আশশুনি উপজেলায় ০৩ জন, দেবহাটা উপজেলায় ২৪ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং আনসার ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে।যে সকল মানুষ লক ডাউন উপেক্ষা করে বিভিন্ন জেলা থেকে সাতক্ষীরা জেলা সীমান্তে আসছে তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া অমানবিক। যারা ফিরে আসছেন তাদের প্রাতিষ্ঠানিক এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে। অমান্যকারীর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। গত ৬ এপ্রিল ২০২০ তারিখে ভারত থেকে থেকে আসার জন্য ১৩ জনকে সাতক্ষীরা যুব ভবনে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সার্বক্ষণিক তাদের খোজখবর নিচ্ছেন। জেলা প্রশাসন থেকে তাদের খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা হচ্ছে। তারা সকলেই সুস্থ আছেন। তথ্য অধিদপ্তরের একটি সহ মোট ৩টি সচেতনতামূলক মাইকিং প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে এবং শতভাগ হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান ছাড়া অন্যসব দোকান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এ জেলাকে করোনা ঝুঁকি মুক্ত রাখতে জেলার সাথে পার্শ্ববর্তী জেলার সকল সীমান্ত এবং আন্ত: উপজেলা সীমান্ত জরুরী সেবা ব্যতীত (যেমনঃ রোগীবাহী গাড়ী, ঔষধ পণ্যবাহী গাড়ী ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মালামালবাহী গাড়ী) সকল প্রকার যানবাহন ও জনচলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সাতক্ষীরা থেকে করোনা টেস্টের জন্য এ পর্যন্ত ১৭০ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। ১৬ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। আশার কথা হলো সবাই করোনা নেগেটিভ। করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শেণি-পেশার মানুষ যারা ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকাভুক্ত হতে সংকোচবোধ করছে কিন্তু খাদ্য সংকট আছেন তাদের নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নাম্বারসহ এসএমএস এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক নিজে তাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। রাতে গোপনে তাদের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেওয়া হচ্ছে। “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার” শিরোনামে ঘরে ঘরে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান মোটরসাইকেল দল। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে প্রাপ্ত ৫৭ মধ্যবিত্ত পরিবারকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া, আমতলা, মধুমালার ডাংগী, ব্রহ্মরাজপুর, পুরাতন সাতক্ষীরা, সুলতানপুর, কুখরালি বলফিল্ড, ফিংড়ি, লাবসা,ঝাউডাংগা ও আবাদের হাট এলাকার এ সকল পরিবারকে উপহার পৌঁছে দেয়া হয়। ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসকের নম্বরে এসএমএস থেকে প্রাপ্ত ৪৮১ টি পরিবারসহ মোট ৫২১ পরিবারের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সংকটকালীন সময়ে সাতক্ষীরা জেলার দুস্থ শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার নিয়ে পাশে দাড়িয়েছেন জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল। প্রতিটি উপজেলায় ইউনিয়ন ভিত্তিক দুস্থ ও সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বাহিরে থাকা গরীব মানুষের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেয়া হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় থেকে পাওয়া মোট বরাদ্দ থেকে ইতোমধ্যে উপজেলা, পৌরসভার অনুকূলে ৮০০ টন চাল এবং ৩৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌরসভার মেয়রগণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করে এই ত্রাণ সহায়তা কর্মহীন হয়ে পড়া দুস্থ অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে উপজেলা ও পৌরসভার ৪২,৫০০ পরিবারের মাঝে সরকারি ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। সকল সরকারি ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে সকলকে ব্যাগের গায়ে “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার” কতাটি লিখে দেয়া হচ্ছে। মসজিদে নামাজ ও জামায়াতের বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সর্বসাধারণের মধ্যে প্রচারের জন্য উপপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সাতক্ষীরাকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারনা চালাচ্ছে। জেলা প্রশাসক জেলার জনপ্রতিনিধি মাননীয় সংসদ সদস্যবর্গের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে জেলার পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে আলোচনা এবং পরামর্শ গ্রহণ করে করোনা মোকাবেলায় সর্বাত্মক কর্মসূচী বাস্তবাযন করে চলেছেন। এছাড়া, জেলা সদরের সিনিয়র সিটিজেনদের সাথে নিয়মিত ফোনে খোঁজ নিচ্ছেন এবং তাদেরকে ঘরের বাইরে না যেতে বিশেষ অনুরোধ করছেন। সরকারি ত্রাণের তালিকা এবং বিতরণে অনিয়ম স্বজনপ্রীতি ও দূর্ণীতি হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করা হবে। এছাড়া, দোকান খুলে দেয়ার কথা বলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী দোকানদারদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘরে থাকুন, বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন, নিরাপদে থাকুন। আপনি ঘরে থাকলে ভালো থাকবে আপনার পরিবার, ভালো থাকবে জাতি, ভালো থাকবে দেশ। জনস্বার্থে সকল কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। 8,474,713 total views, 2,353 views today |
|
|
|