এপ্রিল ১০, ২০২০
জেলায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছে ৬৫০: আইসোলেশনে ২ জন
নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা জেলাব্যাপী ৬শ’ ৫০ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ২ জনকে। এর মধ্যে নারায়নগঞ্জ থেকে আগত ৮ জনকে দেবহাটা উপজেলায় বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। আশাশুনি উপজেলায় ২শ’ ৫০ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ও ৫শ’ ৫০ জনকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া আজ (শুক্রবার) সকালে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ১শ’ জনকে বড়দল ইউনিয়নে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলায় ৩শ’ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৫শ’ জনকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে। এখনও যারা কোয়ারেন্টিনের বাহিরে আছে তাদেরকে চেকপোস্ট বসিয়ে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অপরদিকে, দেশের কয়েকটি জেলায় করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ায় ঐ সকল জেলা লক ডাউন ঘোষণার প্রেক্ষিতে সেখানে কর্মরত লোকজন নিজ নিজ জেলায় ফিরতে চেষ্টা করছে। এ প্রেক্ষিতে সাতক্ষীরা জেলাকে করোনা ঝুঁকি মুক্ত রাখতে সাতক্ষীরা জেলার সাথে পার্শ্ববর্তী জেলার সকল সীমান্ত এবং আন্তঃউপজেলা সীমান্ত জরুরী সেবা ব্যতীত (যেমন: রোগীবাহী গাড়ী, ঔষধ পণ্যবাহী গাড়ী ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মালামালবাহী গাড়ী) সকল প্রকার যানবাহন ও জনচলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে। অমান্যকারীর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ‘সাতক্ষীরা শহরে এবং প্রতিটি উপজেলায় রাস্তায় রাস্তায় জীবাণু নাশক স্প্রে করা হচ্ছে। মেশিনের মাধ্যমে রাস্তায় পানি ছিটানো অব্যাহত আছে। জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ১ হাজার লিটারের ২টি পানির ট্যাংকের মাধ্যমে প্রতিদিন জীবানু নাশক স্প্রে করা হচ্ছে। গত ৬ এপ্রিল ২০২০ তারিখে ভারত থেকে থেকে আসার জন্য ১৩ জনকে সাতক্ষীরা যুব ভবনে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে এবং ২ জনকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সার্বক্ষণিক তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। তারা সকলেই সুস্থ্য আছেন। তাদের থাকা, খাওয়সহ সকল বিষয়ে জেলা প্রশাসক নিজে মনিটরিং করছেন। এছাড়া সাতক্ষীরা থেকে করোনা টেস্টের জন্য এ পর্যন্ত ১২০ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। ৮ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। আশার কথা হলো সবাই করোনা নেগেটিভ। জেলা প্রশাসন সূত্র আরও জানায়, প্রতিটি উপজেলায় ইউনিয়ন ভিত্তিক দুস্থ ও সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বাহিরে থাকা গরীব মানুষের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া মোট বরাদ্দ থেকে ইতোমধ্যে উপজেলা, পৌরসভার অনুকূলে ৪শ’ ২৫ মে: টন চাল এবং ১৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌরসভার মেয়রগণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করে এই ত্রাণ সহায়তা কর্মহীন হয়ে পড়া দুস্থ অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে উপজেলা ও পৌরসভার ৪২ হাজার ৫শ’ পরিবারের মাঝে সরকারি ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলায় হিজড়া জনগোষ্ঠীর ৭০ জন সদস্যের মধ্যে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি লবন, ১ লিটার তৈল এবং একটি সাবানের প্যাকেজ সমাজ কল্যাণ তহবিল হতে বিতরণ করা হয়েছে। শিশু খাদ্যের জন্য সরকারের দেয়া ২ লক্ষ টাকায় উপজেলায় এবং পৌরসভার অনুকূলে উপবরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলায় ৬শ’ হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শেণি-পেশার মানুষ যারা ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকাভুক্ত হতে সংকোচবোধ করছে কিন্তু খাদ্য সংকট আছেন তাদের নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নাম্বারসহ এসএমএস এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক নিজে তাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। রাতে গোপনে তাদের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত এ ধরনের ২শ’ ৮৫ ব্যক্তিকে সরকারি ত্রাণ সহায়তা তাদের সামাজিক মর্যাদা রক্ষা করে বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিদিন এ কার্যক্রম চলছে। ত্রাণ সামগী বিতরণের ক্ষেত্রে নিরাপদ সামিজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে ত্রাণসামগী বিতরণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কেউ যদি সামিজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয় তাহলে যিনি বিতরণ করবেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে ডাক্তার, মেডিকেল স্টাফ এবং নার্সদের চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে এম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক রাখা হয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮৫০ টি পিপিই মজুত রয়েছে। এবং সিভিল সার্জন, সাতক্ষীরা ১০০০ পিপিই প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিতরণ করেছেন। এছাড়া জেলার সাতটি উপজেলায় সেনাবাহিনীর ৭টি টিমসহ জেলা সদরে পুলিশ এবং আনসারের সমন্বয়ে ৪টি টিম নিয়ে জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটগণ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। তথ্য অধিদপ্তরের একটি সহ মোট ৩টি সচেতনতামূলক মাইকিং অব্যাহত আছে’। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্যে অনুরোধ করা হয়েছে। 8,474,696 total views, 2,336 views today |
|
|
|