এপ্রিল ১৩, ২০২০
অন্য জেলা থেকে আসা ১৩৫৮ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে: বাড়িতে ৪৭৩৪ জন
ডেস্ক রিপোর্ট : সাতক্ষীরা জেলাতে বাইরের জেলা থেকে আসা মানুষের মধ্যে ১ হাজার ৩শ’ ৫৮ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ও ৪ হাজার ৭শ’ ৩৪ জনকে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৬ জন, শ্যামনগর উপজেলায় ৩শ’ ৫০ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৯শ’ ৫২ জন এবং আশশুনি উপজেলায় ৪০ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং আনসার ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, ‘যে সকল মানুষ লক ডাউন উপেক্ষা করে বিভিন্ন জেলা থেকে সাতক্ষীরা জেলা সীমান্তে আসছে তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া অমানবিক। যারা ফিরে আসছেন তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৩শ’ ৫৮ জনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে’। এদিকে রোববার (১২ এপ্রিল) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা এবং বরিশাল বিভাগের জেলা সমূহের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জেলাবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানান সাথে সাথে সাতক্ষীরা জেলাতে করোনা প্রতিরোধে সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। জেলার সকল মাননীয় সংসদ সদস্য, জেলা পুলিশ, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা পরিষদসহ সম্মিলিত উপায়ে সাতক্ষীরা জেলা করোনা মোকাবিলার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে মর্মে জেলা প্রশাসক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। করোনা চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে জানিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থার সার্বিক দিক তুলে ধরেন তিনি। এছাড়াও সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর থেকে ৫ হাজার মানুষ সাতক্ষীরা জেলায় এসেছে। তাদেরকে কোয়ারান্টিনে রাখা হলেও জেলাবাসী এ নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন মর্মে জেলা প্রশাসক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাতক্ষীরা জেলার সম্মিলিত কার্যক্রমের বিষয়ে আগ্রহ সহকারে শুনেন এবং তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সাতক্ষীরা জেলাতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে দুধ অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে যেগুলো স্থানীয় মিষ্টির দোকানে সরবরাহের কথা বলেন। সামনে চিংড়ি মৌসুমে চিংড়ি রপ্তানি করতে না পারলে চিংড়ি খাতের সাথে জড়িতরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সেটিও তুলে ধরেন জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল। এ বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবগত হয়ে সাতক্ষীরার দুধ ও চিংড়ি সংরক্ষণ করতে নির্দেশনা প্রদান করেন’। অপরদিকে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সাতক্ষীরাবাসীকে অনুপ্রাণিত করে বিনোদনের যোগান দিতে ও করোনা ক্লান্তি কাটাতে সন্ধ্যায় ফেসবুক লাইভ ও ডিস ক্যাবল চ্যানেল কবিতা পাঠ করেন জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল। কবিতা আবৃত্তির পাশাপাশি মানুষকে নিয়মিত হাত ধোয়া ও সচেতন হতে পরামর্শ দেন তিনি। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্র আরও জানায়, ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা, সরকারি আদেশ অমান্য করে ৬ টার পর দোকান খোলা রাখা এবং বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করার অপরাধে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন অভিযানে সর্বশেষ তথ্য মতে এখন পর্যন্ত ৩৪ টি অভিযানে ৩৯ টি মামলায় ৬২ হাজার ৮শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৫ টি মামলায় ১৪ হাজার টাকা, তালা উপজেলায় ৩ টি মামলায় ১০ হাজার ৫শ’ টাকা, দেবহাটা উপজেলায় ১ টি মামলায় ৫শ’ টাকা, শ্যামনগর উপজেলায় ৮ টি মামলায় ২৮ হাজার ৮শ’ ৫০ টাকা, আশাশুনি উপজেলায় ৭ টি মামলায় ২২শ’ টাকা, কলারোয়া উপজেলায় ৭ টি মামলায় ১৬শ’ টাকা এবং জেলা প্রশাসনের ৮ টি মামলায় ৫ হাজার ২শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরা থেকে করোনা টেস্টের জন্য এ পর্যন্ত ১শ’ ৪৩ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। ৯ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। আশার কথা হলো সবাই করোনা নেগেটিভ। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যারা ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকাভুক্ত হতে সংকোচবোধ করছে কিন্তু খাদ্য সংকট আছেন তাদের নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নাম্বারসহ এসএমএস এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক নিজে তাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। রাতে গোপনে তাদের বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার’ শিরোনামে ঘরে ঘরে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ মোটরসাইকেল দল। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে প্রাপ্ত ৪৪টি মধ্যবিত্ত পরিবারকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া, আমতলা, মধুমাল্লারডাংগী, ব্রহ্মরাজপুর, পুরাতন সাতক্ষীরা, সুলতানপুর, কুখরালি বলফিল্ড, ফিংড়ি, লাবসা, ঝাউডাংগা ও আবাদের হাট এলাকার এ সকল পরিবারকে উপহার পৌঁছে দেয়া হয়। ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসকের নম্বরে এসএমএস থেকে প্রাপ্ত ৪শ’ ৩৭ টি পরিবারসহ মোট ৪শ’ ৭৭ পরিবারের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সংকটকালীন সময়ে সাতক্ষীরা জেলার দুস্থ শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল। এছাড়া সরকারি ত্রাণের তালিকা এবং বিতরণে অনিয়ম স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করা হবে। এছাড়া, দোকান খুলে দেয়ার কথা বলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী দোকানদারদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল। তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা ঘরে থাকুন, বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন, নিরাপদে থাকুন। আপনি ঘরে থাকলে ভালো থাকবে আপনার পরিবার, ভালো থাকবে জাতি, ভালো থাকবে দেশ। জনস্বার্থে সকল কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে’। 8,474,494 total views, 2,134 views today |
|
|
|