সৌমেন মজুমদার, তালা প্রতিনিধি: তালার জেঠুয়ায় কৃষি জমিতেই গড়ে উঠেছে ইট ভাটা। পাশাপাশি প্রায় অর্ধ কি:মি: দূরে গড়ে ওঠা মুন’র পরে এবার চলতি মৌসুমে জনবহুল এলাকার কৃষি জমিতে নতুন করে একই এলাকায় গড়ে উঠল বিসমিল্লাহ ব্রিক্স নামে আরেকটি ইট ভাটা। এতে করে জনবহুল এলাকার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রাচীনতম গ্রাম্য জেঠুয়া হাট-বাজার, জালালপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জগরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এতিম খানা, জেঠুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জনবহুল ঘোষ পাড়া, কপোতাক্ষের কোল ঘেঁষে রয়েছে জনবহুল মালোপাড়ার অবস্থান। এলাকাবাসী জানায়, শুরু থেকেই ভাটা মালিকরা জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৩ শ’কোটি টাকা ব্যয়ে খননকৃত কপোতাক্ষের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাটি কর্তন, নদী তীরের মাটি কর্তন থেকে শুরু করে কৃষকদের প্রলুব্ধ করে কৃষি জমির মাটি কেটে ভাটা পরিচালনা করে আসছে। এতে একদিকে যেমন অবাধ মাটি কর্তনে এলাকা বিরাণ ভূমিতে রুপ নিচ্ছে অন্যদিকে এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এর কু-ফলও ভোগ করছেন এলাকা বাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমরা দেশের উন্নয়নের জন্য শিল্পায়নে যাব তবে কৃষিকে বাদ দিয়ে নয়। কেননা, দেশের উন্নয়ন এখনও অনেকাংশে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তিন ফসলি জমিতে তো ইন্ডাস্ট্রি করতেই পারবে না। আর যদি এক ফসলি জমি, যেখানে চাষাবাদ হয় না, সেখানে হবে। তবে, যত্রতত্র করতে পারবে না। ’কৃষি জমি বাঁচাতে হবে। কারণ, ১৬ কোটির ওপর মানুষের মুখের খাবারের জোগান আসে কৃষি থেকেই। প্রধানমন্ত্রীর আহŸানকে উপেক্ষা করে কৃষি জমি নষ্ট করে সাতক্ষীরার তালায় স্থাপন করা হয়েছে ইট ভাটাগুলি।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে দেখা যায়, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের জেঠুয়ায় বাহারি প্রচারণায় জনবহুল এলাকার ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে বিসমিল্লাহ ব্রিকস ইট ভাটা। অটো ভাটার প্রচার দিয়ে তারা গত ২৫ জুন মঙ্গলবার এর উদ্বোধন করেন। অটো ভাটার নামে প্রচার দিলেও মূলত তারা সেখানে হাওয়া ভাটা তৈরির কার্যক্রম শুরু করেছে। এর আগে মাত্র আধা কি:মি: দূরত্বে ওই এলাকায় মুন ব্রিক্স নামে আরও একটি ইট ভাটার কার্যক্রম চালু রয়েছে। সর্বশেষ দু’দুটি ইট ভাটার অবাধ পরিবেশ শাসনে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংসায় রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করছে সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এতিমখানা, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হাট-বাজার থেকে শুরু করে সু-প্রাচীনকাল থেকে বসবাসরত এলাকা বাসী। তারা তদন্তপূর্বক ঐ এলাকায় ভাটার কার্যক্রম বন্দে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে দেখা যায়, তালা উপজেলার জেঠুয়া গ্রামের মোবারক হোসেন ও আব্দুর রশিদ সরদারের ছেলে হাফেজ জহুরুল ইসলাম একই এলাকার কামরুল ইসলাম, মো: মোতালেবদের কাছ থেকে ১১ নং জালালপুর ইউনিয়নের জেঠুয়া মৌজার জে.এল নং-১৩০, সিট নং-১ এলাকার প্রায় ৪ একর সম্পত্তি ইজারা নিয়ে ২৫ জুন মঙ্গলবার সকালে উদ্বোধনের মাধ্যমে ইট ভাটা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। যার একপাশে রয়েছে, ঐতিহ্যবাহী জেঠুয়া হাট-বাজার, জনবহুল মালোপাড়া, ঘোষপাড়া, অন্য পাশে জালালপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জগরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জেঠুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি এতিম খানা ও অপর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঐতিহ্যের ধারক কপোতাক্ষ নদ। এলাকা বাসীর দাবি, প্রথমত মালিক পক্ষ অটো ভাটার নামে প্রচার দিলেও মূলত তারা সেখানে জিকজাঁক হাওয়া ভাটা তৈরির কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জনবহুল ও বিভিন্ন সামাজিক, শিক্ষা, ধর্মীয় ও মানবিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইটভাটা স্থাপিত হলে এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে সর্বস্তরের মানুষ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। শুধু এখানেই শেষ নয়, নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ভাটার জমির ইজারা দাতা ও মালিক পক্ষ পরস্পর যোগসাজশে বসত-ভিটা থেকে শুরু করে ফসলি জমির দাগ-খতিয়ান সম্পৃক্ত করে ইজারা চুক্তি সম্পন্ন করলেও মূলত তারা বিআরএস খাস খতিয়ানের জমিতেই ভাটা স্থাপন করছেন। এছাড়া ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ৫৯ নং আইনের (বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় ২০ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে প্রকাশিত এবং পরবর্তীতে অধ্যাদেশ নং০২/২০১৮ সংশোধিত) এর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে সম্পূর্ণ ভুল বুঝিয়ে তারা সেখানে ইট ভাটার লাইসেন্স নেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আইনের ৮ এর (১) ধারায় আবাসিক, সংরক্ষিত বা বনিজ্যিক এলাকা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষি জমি, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, ডিগ্রেডেড এয়ার শেড। একই ধারার উপধারা (২) অনুযায়ী এই আইন কার্যকর হবার পর নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার অভ্যন্তরে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কোন আইনের অধীন কোনরুপ অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স, যে নামেই অভিহিত হউক, প্রদান করিতে পারবেন না। আইনের ৩ নং ধারায় ক) উপধারায় বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ এলাকার সীমারেখা হতে ন্যূনতম ১ কি:মি: দুরত্বের মধ্যে, ঙ) উপধারায় বিশেষ কোন স্থাপনা রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বা অনুরুপ কোন স্থান বা প্রতিষ্ঠান হতে ১ কি:মি: দুরত্বের মধ্যেসহ নানা শর্তানুযায়ী ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না। তবে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ ঐ এলাকায় ভাটা স্থাপন করেছেন। এ ব্যাপারে ভাটার ম্যানেজার মফিজুল ইসলাম নিকট ভাটার বৈধতা বা কাগজপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব কিছুই ঠিক আছে তবে তা মেজ ভাইয়ের কাছে রয়েছে। এ ব্যাপারে তালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শুভ্রাংশু শেখর দাশের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাটার তদন্তভার তার কাছে রয়েছে। তবে ট্রেনিংয়ের কারণে বাইরে থাকায় তিনি এখনও রিপোর্ট জমা দেননি। এদিকে তদন্তের আগেই অনুমোদন ও এর কার্যক্রম শুরুর বিষয়টিকে রীতিতম এলাকা বাসী ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন। তাদের কার্যক্রমে এলাকা বাসীর মধ্যে রীতিমত নানা আশঙ্কায় আতংক বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি উপজেলায় নতুন এসেছেন। এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। এলাকা বাসী ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবিষয়ে সবুজ আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলা সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন ভাটা মালিকরা সাধারণত অর্থশালী হওয়ায় টাকার জোরে নিয়ম বহিভূতভাবে এ কাজ করে থাকেন, তিনি আরও বলেন বর্তমান জেলা প্রশাসক অনেক আন্তরিক তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আমি আশাবাদি। সর্বশেষ আইনকে অমান্য করে জনবসতিপূর্ণ কৃষি জমিতে একের পর এক ভাটা স্থাপন ও পরিবেশ বিপর্যয়ে এলাকাবাসী সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তদন্ত রিপোর্ট জমা না হলেও উদ্বোধন হয়েছে তালার জেঠুয়ার ইট ভাটা
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/