সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
নির্মাণের এক মাস পার না হতেই সড়কের বেহাল দশা
নাজমুল হক, পাটকেলঘাটা প্রতিনিধি: সদ্য নির্মাণ করা তালা উপজেলার ধলবাড়িয়া-কলাপাতা সড়কটি এক মাস পার না হতেই ভেঙে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এক মাস আগে এই সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে বলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান খুলনার এফ কে ট্রেডার্সের মালিক সোহেল হোসেন এলজিইডিকে চিঠি দিয়ে জানায়। অথচ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধলবাড়িয়া থেকে কলাপাতা যেতে কয়েক স্থানে পিচের রাস্তা নষ্ট হয়ে বড় বড় খাদে পরিণত হয়েছে। যথাযথ প্রযুক্তি ব্যবহার না করে অপরিকল্পিতভাবে নি¤œ মানের খোয়া ও পর্যাপ্ত বালি না দিয়ে কাদার উপর বিটুমেন দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করায় এ অবস্থা হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মো: মনিরুল ইসলাম এই প্রতিনিধিকে জানান, রাস্তার নির্মাণ কাজের সময় আমরা দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবাদ করলে ঠিকাদার আমাদেরকে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ হিসেবে জেল হাজত খাটানোর হুমকি প্রদান করে। রাস্তা নির্মাণে দুর্নীতি দৃশ্যমান হওয়ায় স্থানীয় মো: আনারুল ইসলাম সহ ১৫ জন স্থানীয় আম জনতা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করলে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জরুরী ভিত্তিতে এলজিইডি এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে সরেজমিনে তদন্তকালে দেখা যায় ধলবাড়িয়া থেকে ১০০ গজ দুরে জনৈক মোতালেব সাহেবের বাড়ির সামনে একটি বিচুলি বোঝায় ইঞ্জিন ভ্যান রাস্তার উপর খাদে কাত হয়ে পড়ে আছে। ভ্যানের ড্রাইভার কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ঠিকাদারকে গালিগালাজ করতে থাকে। মোতালেব সাহেবের স্কুল পড়ুয়া কন্যা মার্জিয়া (১৩) এ প্রতিনিধিকে জানায়, ‘রাস্তার এই অবস্থার কারণে বৃষ্টি হলেই কাদামাটি মেখে কাপড় চোপড় নোংরা অবস্থায় স্কুলে যেতে হয়’। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, রাস্তা করার সময় আমরা বাধা দিতে গেলে ঠিকাদার সকলকে শাসিয়ে যায় এবং পুলিশকে দিয়ে আমাদের হয়রানি করে। সুভাষিণী মাদ্রাসার শিক্ষিকা স্মৃতি রানি বলেন, আমি নিয়মিত এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করি কিন্তু সদ্য তৈরি এ রাস্তাটি নির্মাণে ঠিকাদার এতই দুর্নীতি করেছে যে এক মাসের মধ্যেই রাস্তাটি খানা খন্দে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন আমি এই ২ কি: মি: রাস্তা পায়ে হেঁটে কর্দমাক্ত অবস্থায় স্কুলে যায়। তাছাড়া পাকা রাস্তায় এত কাদা পানির কারণে অনেক শিক্ষার্থীরা স্কুলেও আসতে চায় না। স্থানীয় বাসিন্দা ওজিয়ার রহমান জানান, এ রস্তাটির নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের কারণে ভাইপো আনারুল ও মেম্বর শহিদুল বাধা দিতে গেলে তাদেরকে জেল খাটানোর ভয়ভীতি দেখান। ঠিকাদার সোহেল হোসেন এ বিষয়ে জানান, ‘আমি সিডিউল অনুযায়ী এ রাস্তার কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তবে স্থানীয় কতিপয় চিহ্নিত কর্তা ব্যক্তিরা আমাকে কাজের সহযোগিতা তো দূরের কথা চাঁদার দাবি করলে তা না দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। তারা ইনটেনশোনালি দশ চাকার বালুর ট্রাক ঢুকিয়ে রাস্তাটি নষ্ট করেছে। এমনকি উনারা নেগেটিভ সোলোভের মাটি কাটতে দেয়নি’। স্থানীয়রা বলছেন, এই ঠিকাদার তালা উপজেলা প্রকৌশলীর বন্ধুবর হওয়ায় দাপটের সঙ্গে দুর্নীতি করে গেছেন। এ বিষয়ে তালা উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আবু সাঈদ মো: জসিম কে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, দেড় বছরের ভিতরে কোন রাস্তার সমস্যা হলে ঠিকাদার ঠিক করে দেবে এবং ধলবাড়িয়া-কলাপাতা রোডের বেহাল অবস্থা আমার অবগত হয়েছে। বৃষ্টির মৌসুম শেষে ঠিকাদার ক্ষতস্থানগুলো পুনরায় নির্মাণ করে দেবে। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুমার কুন্ডু এ ঠিকাদারের দুর্নীতির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উক্ত ঠিকাদারকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। আগামী শুকনো মৌসুমে ঠিকাদার রাস্তা ঠিক করে দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। 8,503,600 total views, 1,002 views today |
|
|
|