সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯
কণ্ঠ শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের ৬৫তম জন্মদিন আজ
এম.আর মামুন বল্লী প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান সুরের রানী, বিশ্ব বরেণ্য সংগীত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের ৬৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৫৪ সালের আজকের এই দিনে (৪ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। লুতফর রহমান ও বেগম মৌলুদা খাতুনের কন্যা সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি এক পুত্র শ্রাবণ ও এক কন্যা ফাইরুজ ইয়াসমিন এর মাতা। প্রয়াত বড় বোন ফরিদা ইয়াসমিন যখন গান শিখতে দূর্গাপ্রসাদ রায়ের কাছে যেতেন তখন ছোট্ট সাবিনাও উপস্থিত থাকতেন। পরবর্তীতে ওস্তাদ পি.সি গোমেজের কাছে একটানা ১৩ বছর তালিম নিয়েছেন। মাত্র ৭ বছর বয়সে স্টেজ প্রোগ্রামে অংশ নেন তিনি। ছোটদের সংগঠন খেলাঘরের সদস্য হিসেবে রেডিও ও টেলিভিশনে নিয়মিত গান গেয়েছেন। প্রয়াত বরেণ্য সুরকার সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষের সংগীত পরিচালনায় এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমাতে ১৯৬২ সালে শিশু শিল্পী হিসাবে প্রথম গান করেন। তবে ১৯৬৭ সালে আমজাদ হোসেন ও নূরুল হক বাচ্চু পরিচালিত আলতাফ মাহমুদের সংগীত পরিচালনায় ‘মধু জোছনা দীপালি গানটি গাওয়ার মধ্য দিয়ে প্লেব্যাক শিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর লাভ করা বরেণ্য এই সংগীত শিল্পী ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পদক সহ সর্বোচ্চ ১৩ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে আতাউর রহমান পরিচালিত সুজন সখী, সিনেমাতে গান গাওয়ার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, চাষি নজরুল ইসলামের ‘চন্দ্রনাথ’, মইনুল হোসেনের ‘প্রেমিক’, বুলবুল আহমেদ এর ‘রাজরক্ষী শ্রীকান্ত’, আমজাদ হোসেনের ‘দুই জীবন’, কাজী হায়াৎ এর ‘দাঙ্গা’, মতিন রহমানের ‘রাঁধা কৃষ্ণ’ মোহাম্মাদ হোসেনের ‘আজ গায়ে হলুদ’, ও চাষী নজরুল এর দেবদাস চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও উত্তম কুমার পুরস্কার ১৯৯১ সালে, এইচ এম ভি ডাবল প্লাটিনাম ডিস্ক, বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ থেকে সংগীতে ১৯৮৪ সালে ‘ডক্টরেট ডিগ্রি’ লাভ করেন। ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালে জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৯৭৫ সালে পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৯৯৫ সালে শেরে বাংলা স্মৃতি পদক, ১৯৯২ সালে অ্যাস্ট্রোলজি পুরস্কার, ১৯৯২ সালে জিয়া স্মৃতি পদক এবং নিউইয়র্ক লস অ্যাঞ্জেলস থেকে ‘বেস্ট সিঙ্গার’ পুরস্কার পেয়েছেন। গান গাওয়ার জন্য সাবিনা ইয়াসমিন ইংল্যাÐ, সুইডেন, নরওয়ে, হংকং, আমেরিকা, বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। এছাড়া ভারত, পাকিস্তানে বহুবার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় গান গেয়েছেন। সাবিনা ইয়াসমিন গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘উল্কা’ নামের সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। তিনি ২০১০ সালে ‘চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ’ নির্বাচনে একজন বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সাবিনা ইয়াসমিনের ক্যারিয়ারে খান আতাউর রহমানের অবদান অনেক। সাবিনা ইয়াসমিন যিনি ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে গানের ভুবনে বিচরণ করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র রুনা লায়লা ছাড়া তার সমকক্ষ হয়ে এত লম্বা সময় ধরে আধিপত্য বজায় রাখতে পারেননি। গত কয়েক দশকে তিনি সর্বমোট কত হাজার গান গেয়েছেন তার সঠিক হিসাবও হয়তো তিনি নিজেই জানেন না। সেই আব্দুল আলীম থেকে শুরু করে এখনকার সব উঠতি গায়কের সাথেও অবিরাম গেয়ে চলেছেন একের পর এক গান। গেয়েছেন উপমহাদেশের বরেণ্য সুরকার আর.ডি বর্মণের সুরে বিখ্যাত কিশোর কুমার ও মান্না দের সাথেও ডুয়েট গান গেয়েছেন এই গুণী শিল্পী। ১৯৮৫ সালে গানের জন্য ভারত থেকে ডক্টরেটও লাভ করেছেন। দীর্ঘ সংগীত জীবনে ১৬ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন সংগীত জগতের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র। খ্যাতনামা বাংলাদেশি এই সংগীত শিল্পী দেশাত্মবোধক গান থেকে প্রায় চার দশক ধরে বাংলা গানের বিভিন্ন ধারার নানান উচ্চাঙ্গ ধ্রæপদ, লোক সংগীত থেকে আধুনিক বাংলা গান সহ চলচ্চিত্র মিশ্র আঙ্গিকের সুরে শিল্পীর অবাধ যাতায়াতে সংগীত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের খ্যাতি বিশ্বব্যাপী। বিখ্যাত দেশাত্মবোধক গান ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’, ‘জন্ম আমার ধন্য হলো’ ও আমার বাংলা মা’, ‘মাঝি নাও ছাড়িয়া দে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ’ ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’, বঙ্গবন্ধু স্মরণে ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’, সহ অসংখ্য কালজয়ী গানের শিল্পী তিনি। ছায়াছবিতে গেয়েছেন ১২ হাজারেরও বেশি মন মাতানো সব গান। ২০০৭ সালে সাবিনা ইয়াসমিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু সকল শ্রোতা ও ভক্তদের দোয়া ও ভালোবাসায় আবারও সুস্থ হয়ে ওঠেন। মন মাতানো জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শিকড়ের টানে, প্রিয় মাতৃভূমির টানে সর্বশেষ ২০১৭ ডিসেম্বরে বল্লী মো. মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে সাতক্ষীরায় আসেন। সাতক্ষীরার বল্লীতে এসে তিনি গণমানুষের মাঝে কালজয়ী গান পরিবেশন করেন এবং তাদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা গ্রহণ করেন। আজ তাঁর এই শুভ জন্মদিনে ‘দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরা’ সহ সাতক্ষীরাবাসির পক্ষ থেকে জানাই জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। 8,505,103 total views, 2,505 views today |
|
|
|