Site icon suprovatsatkhira.com

ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চিহ্নিত না থাকায় বিড়ম্বনা

নূর মনোয়ার : কয়েক বছর আগেও সাতক্ষীরার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় চলাচলের জন্য সাইকেলের পিছনে কাঠের উপর স্পন্স দিয়ে যাত্রী পরিবহণ করা হত যা হেলিকপ্টার নামে পরিচিত। সেই হেলিকপ্টার এখন ইতিহাসের অংশ। নম্বই দশকের পর থেকে বিশ্ব অর্থনীতির দ্রুত পরিবর্তনের ফলে বৃদ্ধিপায় মানুষের ব্যস্ততা। প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে ইঞ্জিন চালিত যানের। একপর্যায়ে কদর বাড়ে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের। সল্প খরচে অল্প সময়ের ব্যবধানে যাতায়াতের জন্য বর্তমানে সাতক্ষীরায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালনা একটি পেশায় রুপান্তর হয়েছে। তবে ভাড়ায় চালিত এসব মোটরসাইকেল চিহ্নিত না থাকায় প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনায় পড়ছে সাধারণ যাত্রী ও চালকরা।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় বর্তমানে দেশের প্রায় ৩৬ টি জেলায় ভাড়ায় চালিত এসব মোটরসাইকেল চলছে। তাছাড়া ঢাকা শহরে এখন উবার, পাঠাও নামের মোবাইল এপস’র মাধ্যমে ভাড়া পাওয়া যাই মোটরসাইকেল।
শহরের সুলতান পুর এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম জানান, প্রচালিত আছে মোটরসাইকেলের জেলা সাতক্ষীরা। তাই ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের সংখ্যাও এখানে বেশি। কিন্তু এসব ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেকে চিহ্নিত করা হচ্ছে না। এতে সাধারন মানুষ যে কোন মোটরসাইকেলকে ভাড়ায় চালিত মনে করছে। মাঝে মাঝে রাস্তার চলার সময় অনেকে মোটরসাইকেল থামিয়ে ভাড়ায় যাবো কিনা জানতে চায়। এতে খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
আদর সাতক্ষীরা’র পরিচালক আক্তার হোসেন জানান, সাতক্ষীরার আশাশুনি, শ্যামনগর, কালিগঞ্জসহ আরও কিছু এলাকা আছে যেখানে ভাড়ার মোটরসাইকেল বেশি হওয়ায় যে কোন মোটরসাইকেলকে ভাড়ায় যাওয়ার জন্য দাঁড় করানো হয়। আমি নিজে এমন পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছি কয়েকবার। সিমান্ত এলাকা হওয়ায় এসব মোটরসাইকেলে অনেকে মাদক পরিবহণ ও বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজ করে। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চিহ্নিত প্রয়োজন যাতে করে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল গুলো সহজে চেনা যায়।
নিয়মিত মোটরসাইকেল যাত্রী নলতা হাদিপুরে আব্দুল হাসান জানান, আমি খুলনায় চাকরি করি প্রতি সপ্তাহে সাতক্ষীরা সঙ্গীতা মোড় থেকে ভাড়ার মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়িতে যায়। আমার কাছে ল্যাপটপসহ অন্যান্য জিনিস থাকে, ভয় হয় যে কেউ খারাপ উদ্দেশ্যে ভাড়ার মোটরসাইকেল চালক সাজতে পারে। যদি ভাড়ার মোটরসাইকেল চিহ্নিত হয় তাহলে যাত্রীদের নিরাপত্তা বাড়বে।
এবিষয়ে বিকল্প কর্মসংস্থান সাতক্ষীরা জেলা মোটরসাইকেল চালক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি তারিকুল ইসলাম জানান, জেলাব্যপি বিভিন্ন মোটরসাইকেল সংগঠনের তথ্য মতে সাতক্ষীরাতে ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেলের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এরমধ্যে জীবিকা নির্বাহে পুরোপুরি পেশা হিসাবে মোটরসাইকেল চালানো ব্যাক্তির সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। অন্য পেশার পাশাপাশি কিছু বাড়তি উপার্জনের জন্য মোটরসাইকেল চালান আরও প্রায় ৫ হাজার মানুষ। ২০০৫ সালের ততকালীন পুলিশ সুপারের নির্দেশে প্রায় ৭ হাজার মোটরসাইকেলকে সামনে পিছনে হলুদ চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। এতে উপকৃত হয় ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী উভয়ে। কিন্তু এর পর বিষয়টি নিয়ে আর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
সাতক্ষীরা জেলা মোটরসাইকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর ইসলাম জানান, পূর্বের মত ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চিহ্নিত হলে, সাধারণ মানুষ সহজে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চিনতে পারবে এবং পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের হয়রানি কমার পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমও সহজ হবে।
জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য আলী নুর খান বাবুল জানান, ভ্যান, রিক্সা, মাহেন্দ্র, ইজিবাইক যেমন স্থানীয় সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তেমনি ভাড়ার মোটরসাইকেলকে এ আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধ সংগঠনে এবং মাদক পরিবহণে মোটরসাইকেলকে ব্যবহার করা হয়। সরকার মোটরসাইকেলের কাগজপত্র এবং চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বিভিন্ন উদ্দোগ গ্রহণ করেছে যা অত্যন্ত গুরুপ্তপূর্ণ। এর পাশাপাশি অপরাধ ও মাদক নিয়ন্ত্রণে এবং পেশাজীবী মোটরসাইকেল চালকদের স্বার্থে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোমিন হোসেন বলেন, বর্তমানে কতগুলো মোটরসাইকেল ভাড়ায় চলছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। এসব মোটরসাইকেল চিহ্নিত করা গেলে আমাদেরও বুঝতে সুবিধা হয় কোনটি ভাড়ায় চলছে। এটি করা গেলে সাধারণ চালকদেরও ভোগাšিত্ম কমবে। তবে বি আর টি এ ও জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নিলেই এটি সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি জানান, শহরের বিভিন্ন মোড়ে যে সব মোটরসাইকেল স্ট্যান্ড রয়েছে সে গুলো পৌরসভার নিয়ন্ত্রনে নেই। এসব মোটরসাইকেল চালকরা বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসে যাত্রী নিয়ে আবার গ্রামে ফিরে যায়। জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version