জুলাই ১০, ২০১৯
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও বাজারে ন্যায্য মূল্য না থাকায়: সাতক্ষীরায় কমে যাচ্ছে আউশ ধানের আবাদ
মাজহারুল ইসলাম/রাকিবুল ইসলাম: কৃষকের অনীহা আর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাতক্ষীরা থেকে কমে যাচ্ছে আউশ ধানের আবাদ। চৈত্র থেকে আষাঢ় পর্যন্ত খরিপ-১ মৌসুমে বর্ষার শুরুতেই আউশ ধানের চাষাবাদ শুরু হয়। আউশ বৃষ্টি নির্ভর ধান। আউশ ধান চৈত্র-বৈশাখে বুনে আষাঢ়-শ্রাবণে কাটা হয়। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনের সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর বেশ দেরিতে চাষ করা হচ্ছে আউশ ধান। বোরো ও আমন ধানের মধ্যবর্তী সময়ে জমি ফাঁকা ফেলে না রেখে আউশ ধানের চাষ করে থাকেন কৃষকেরা। বীজ বপনের মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে ধান ঘরে ওঠে। তাছাড়া সেচ ও বালাইনাশক ছাড়াই বৃষ্টির পানিতে এবং সামান্য পরিচর্যা আর অল্প সারে এ ধান কৃষকের ঘরে ওঠে। ফলে অল্প খরচে স্বল্প সময়ে কৃষকেরা বোরো ধানের সমপরিমাণ আউশ উৎপাদন করে বাড়তি আয়ের সুযোগ পান। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ৪-৫ বছর আগে জেলায় ১৩ থেকে ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতো। যা কমিয়ে এবছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৮ হাজার ৩শ’৭০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু আবাদ হয়েছে মাত্র ৭হাজার ৭শ’ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬শ’৭০ হেক্টর কম। সরকারিভাবে আউশ ধান চাষ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রণোদনা দিলেও আউশ ধান চাষের পরিমাণ বাড়ছে না বরং প্রতি বছরই কমছে। এর কারণ হিসেবে বাঁকাল এলাকার আউশ ধান চাষি মোঃ মোসলেম উদ্দীন বলেন, ‘জলবায়ুর পরিবর্তন ও ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে আউশ ধানের চাষাবাদ কমিয়ে দিয়েছি। কৃষি অফিস থেকে অল্প কয়েকজন কৃষকের নামের তালিকা করে তাদের থেকে সরকারিভাবে ধান কেনা হয়। ফলে আমাদের মত সাধারণ কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। আমি গত বছর ৮ বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষ করেছিলাম। এবার ৬ বিঘা জমিতে চাষ করেছি’। কলারোয়া উপজেলার কয়লা গ্রামের কৃষক মোঃ রবিউল মোল্লা বলেন, ‘আউশ ধান চাষ করতে বিঘা প্রতি ১১ হাজার টাকার মত খরচ করে সর্বোচ্চ ১৮ মণ ধান পাওয়া যায়। গত বছর ৭শ’ ৬০ টাকা দরে প্রতি মণ ধান বিক্রি করেছিলাম। এ বছর ৪ বিঘা জমিতে আউশ ধানের চাষ করেছি তবে খরচের টাকা তুলতে পারব কি জানিনা’। তালা উপজেলার ইসলামকাটি এলাকার কৃষক মোঃ রাজ্জাক গাইন বলেন, ‘এ বছর বোরো ধানের মূল্য কম হওয়ায় আউশ ধান চাষ করার ইচ্ছাই ছিলনা। তবুও ঋণ নিয়ে অল্প জমিতে আউশ ধান চাষ করেছি। এবারও ন্যায্য মূল্য পাবো কি’না তাই চিন্তায় আছি। দাম না পেলে আগামীতে আর ধান চাষ’ই করবো না’। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে কৃষকেরা দেরিতে আউশের চাষাবাদ শুরু করেছে। তবে আমরা কৃষকদের কৃষি বান্ধব সহযোগীতা অব্যাহত রেখেছি। প্রযুক্তি পরামর্শ, রাজস্ব প্রকল্পের অধীনে প্রদর্শনী এবং প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় বীণা-১৯ ও ব্রী-৪৮ ধানের বীজ প্রদান করা হয়েছে। গত বছর আউশ ধানের লক্ষমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন ছিলো ১৯ হাজার ৮শ’ ৫৪ মেট্রিক টন। এবছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৫শ’ ২৬ মেট্রিক টন। এবছরের আউশ ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে আশা করছি’। 8,509,286 total views, 2,740 views today |
|
|
|