স্বপ্না রায়, রাজগঞ্জ (মণিরামপুর) প্রতিনিধি: যশোরের মণিরামপুরে প্রায় অর্ধশত বছর ধরে চলমান ‘রাজগঞ্জহাট’ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে টান টান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো। সহিংসতা এড়াতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়। রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাট উচ্ছেদে এলাকায় মাইকিং করে। অন্যদিকে হাটের ইজারার একই সাথে হাট যথারীতি বসবে বলে মাইকিং করে। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছিলো স্থানীয়রা। চলতি অর্থবছরে প্রায় ৩২ লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নেয়া মালিকপক্ষ হাটের কার্যক্রম চালিয়ে আসলেও রাজগঞ্জ স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেদের জায়গায় হাট বসতে দেবে না বলে বেঁকে বসে। যা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। শুক্রবার (২৪ মে) মণিরামপুরের পশ্চিমাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী রাজগঞ্জ হাট নিয়ে সৃষ্ট দু’টি পক্ষের বিরোধ চরমে পৌছানোর বিষয়টি আমলে নিয়ে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যএমপি সরেজমিন রাজগঞ্জ বাজারে যেয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে সক্ষম হন। আগামী কোরবানী পর্যন্ত গরুর হাটটি স্কুল মাঠে বসবে আর অন্যান্য বাজার স্কুল মাঠ থেকে সরিয়ে ভূমি অফিস চত্বরে বসবে বলে ওই বৈঠকে সমঝোতা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী, উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম, থানার ওসি রফিকুল ইসলাম সহ স্কুল কর্তৃপক্ষ ও হাটের ইজারাদারসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জানা যায়, চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তর হতে রাজগঞ্জহাটের ২২ লাখ ২৮ হাজার ৪৭৩ টাকা ভিত্তিমূল্যে ধরে একই সাথে উপজেলার ৫৭টি হাটবজারের ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সে মোতাবেক এমএম ইমরান খান পান্না নামের জনৈক ব্যক্তি ২৪ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকার বিপরীতে রাজগঞ্জহাট পরবর্তি এক বছরের জন্য ইজারা পান। ভ্যাটসহ অন্যান্য খরচ বাবদ তার প্রায় ৩২ লাখ খরচ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। স্কুলকর্তৃপক্ষের পক্ষে স্কুলের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ যশোর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে ১৪৪ ধারা ও নিষেধাজ্ঞা চেয়ে যথাক্রমে ৩ এপ্রিল ও ২০ মে আবেদন করেন। গত মঙ্গলবার ও বুধবার সকালে স্কুল কর্তৃপক্ষ হাটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন-মর্মে মাইকিং করে লোকজনকে হাটে আসতে নিষেধ করে। ইজারাদার পান্না খান বলেন, তাকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে একটি কুচক্রীমহল মাইকিং করছে। অথচ তার কোন ভিত্তি নেই। তিনিও নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে বিকেলে মাইকিং করান। বাজার কমিটির আহবায়ক চাকলাদার আবুল বাশার বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি নিয়মনীতি মেনেই হাট হয়ে আসছে। বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ বাড়াবাড়ি করছেন বলেও তিনি জানান। স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী আব্দুষ সাত্তার বলেন, সেখানে প্রায় ৪০ বছর ধরে হাট বসে আসছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী জানান, হাটবন্ধে কিংবা ১৪৪ ধারা জারি সংক্রান্ত কোন ধরনের নির্দেশ আদালত থেকে দেয়া হয়নি বলে তিনি জানান। মণিরামপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে তিনি আদালতের নির্দেশে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তবে, এ নিয়ে যে কোন ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশি তৎপরতাবৃদ্ধি করা হয়েছে।
মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে মণিরামপুরের রাজগঞ্জ হাট নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/