যশোর প্রতিনিধি: বর্ষা মৌসুমে কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এ বছর ফেব্রুয়ারিতেই যশোরে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নেমে যাওয়ায় এরই মধ্যে অগভীর নলকূপগুলোয় পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আগামীতে যশোরে পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যশোর কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) পানি পরীক্ষাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি জানান, মূলত জানুয়ারিতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামতে শুরু করে। এপ্রিলে সর্বোচ্চ নেমে যায়। তবে এবার একটু আগেভাগেই, ডিসেম্বরে পানির স্তর নামতে শুরু করেছে।
সদরের বেজপাড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, জানুয়ারি থেকেই তার বাসার চাপকলে পানি উঠছে না। শার্শার শালকোনা গ্রামের কৃষক শায়েব আলী জানান, তার শ্যালো মেশিনে পানি উঠছে না। বোরো ক্ষেত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
যশোর শহরের আরো অনেক বাসিন্দা ও গ্রামের কৃষকরা জানান, সাধারণত এপ্রিলের দিকে এমন সমস্যা হয়। কিন্তু এবার এত তাড়াতাড়ি পানির সংকট দেখা দেয়ায় রীতিমতো আতঙ্কে আছেন তারা।
বিএডিসির কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি এর কারণ হিসেবে বলেন, এবার বর্ষায় কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত হয়নি। দেশে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ধরা হয় ২০৩ সেন্টিমিটার। গত বছর তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে বর্তমানে পানির স্তর ২০-২৫ ফুট নেমে গেছে। এ কারণে টিউবওয়েলে (চাপকল) পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক নেমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন সেচকাজে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার। কারণ এ সময় বোরো ধানে পানি সেচ দিতে ভূগর্ভ থেকে গভীর নলকূপ দিয়ে পানি ওঠানো হয়।
বিএডিসি কার্যালয় (সেচ) সূত্রে জানা যায়, জেলায় গভীর নলকূপের সংখ্যা ১ হাজার ৬০২। এসব নলকূপ দিয়ে ২৫ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হয়। অন্যদিকে ৬৩ হাজার ৮৯৯টি শ্যালো টিউবওয়েল দিয়ে সেচ দেয়া হয় ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বোরো চাষে বাংলাদেশে পানির ব্যাপক অপচয় হয়। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের কৃষকরা আমাদের কৃষকদের তুলনায় অর্ধেক পানি ব্যবহার করে ধান চাষ করেন। পানির অপচয় রোধে বারিড পাইপ (সেচনালা পাইপ) ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। বিএডিসির উদ্যোগে এরই মধ্যে যশোরের বেশ কয়েকটি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
এদিকে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট নিরসনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর মোশারেফ জানান, যেসব এলাকায় পানির সংকট দেখা দেয়, সেখানে ৭ হাজার টাকায় গভীর নলকূপ বসিয়ে দেয়া হয়। গত বছরও এভাবে সংকট মোকাবেলা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানির স্তর স্বাভাবিক হতে বৃষ্টির পরও মাসখানেক সময় লাগে। তবে আগামী ১৫ মে থেকে পানির স্তর আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। আর আগে বৃষ্টি হলে পানির স্তর দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পানির স্বাভাবিক স্তর ধরা হয় ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৫-২০ ফুট গভীরে।
যশোরে এবার দুই মাস আগেই নেমে গেছে পানির স্তর: গভীর হতে পারে সংকট
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/