মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি: মণিরামপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ‘বাইপাস’ সড়ক নির্মাণ। যানজট নিরসনে মণিরামপুরবাসীর এ দাবি দ্রুতই পূরণ হতে যাচ্ছে। যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের এমপি স্বপন ভট্টাচার্য্য এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর বাইপাস সড়ক নির্মাণে জোরালো ভূমিকা গ্রহণ করেন। মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পরপরই মণিরামপুরে পদার্পণের আগেই তিনি বাইপাস সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্য জায়গা নির্বাচনে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন। ইতোমধ্যে বাইপাস সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান নির্ধারিত হয়েছে বলে প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। তবে স্থান নির্ধারণ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
প্রায় সাড়ে চার লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশের অন্যতম বৃহত্তম এ উপজেলার পৌরশহরের উপর দিয়ে যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়ক। মহাসড়কটি সংকীর্ণ হওয়ায় প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। এর ফলে স্কুল-কলেজ গামী শিক্ষার্থীসহ অফিসগামী ও সর্ব স্তরের মানুষ প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তিতে পড়ে। এ কারণে পৌর ও উপজেলাবাসী দীর্ঘদিন ধরে বাইপাস সড়কের দাবি করে আসছিলো। কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও পরে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ দাবির যথাযথ ও আবশ্যকতা বিবেচনা করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য (এমপি) দায়িত্ব পাওয়ার সাথে-সাথে মণিরামপুরে বাইপাস সড়ক নির্মাণের তড়িৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যা মণিরামপুরবাসীর জন্য এটি একটি খুশির খবর। এটি নির্মিত হলে পৌর শহরের যানজট নিরসনের পাশাপাশি এলাকাবাসী যানজটের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথে মণিরামপুর বাজারটি হবে ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম একটি ক্ষেত্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের সাতক্ষীরা অভিমুখে আসার পথে মণিরামপুর পৌর শহরের প্রবেশ করার পূর্বেই সদর ইউনিয়নের জালঝাড়া (খালকান্দা) থেকে পশ্চিম দিকে নেমে ফতেয়াবাদ, দেবিদাসপুর, পাতন গ্রাম হয়ে পৌরসভার বিজয়রামপুর গ্রামের ঠিক পশ্চিম সীমানা অতিক্রম করে পুনরায় যশোর-সাতক্ষীরার শেষ ও শ্যামকুড় ইউনিয়নের শুরু পেয়ারাতলা নামক স্থানে মিলিত হবে। অপরদিকে, একই দিকে থেকে মণিরামপুর সরকারি কলেজ মোড়ের একটু আগে গাংড়ার বিলের মধ্য বা যেকোন প্রান্ত ধরে পৌর সভার গাংড়া, জয়নগর, দূর্গাপুর, কামালপুর গ্রাম হয়ে মোহনপুর বটতলায় গিয়ে পুনরায় মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত হবে। দু’পাশ দিয়ে বাইপাস সড়কের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ পূর্ব দিক দিয়ে সড়কটি নির্মিত হলে সুবিধার কথা বিবেচনা করেছেন। তারা বলছেন পশ্চিম পাশ দিয়ে বাইপাস সড়কটি তৈরী করতে গেলে বেশি জমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি হরিহর নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। যেটি অত্যন্ত ব্যয় বহুল। কিন্তু পূর্ব পাশ দিয়ে গেলে কম জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, কিন্তু কোন ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে না। ফলে কম জমি অধিগ্রহণ, ব্রিজ নিমার্ণের ঝামেলা না থাকায় পূর্ব পাশ দিয়েই বাইপাস সড়কটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত এক প্রকার চূড়ান্ত হয়ে গেছে প্রচার রয়েছে।
কিন্তু পূর্বপাশ দিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মিত হবে-এটা প্রচার হওয়ার পর বেশিরভাগ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, পূর্ব পাশ দিয়ে গেলে কম জমি অধিগ্রহণ করতে হবে এটা ঠিক। কিন্তু পূর্ব পাশের জমিগুলোর মূল্য কম নয় বরং বেশি। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, পূর্ব পাশের গ্রামগুলো সবই পৌরসভার অর্ন্তভুক্ত এবং পৌর শহরের মূল বাজারটিও এই গ্রামগুলোর মধ্যেই অবস্থিত। তাছাড়া এখানকার জমির মূল্যও আকাশ চুম্বি। ফলে পূর্বপাশের জমি অধিগ্রহণ করতে যে টাকা ব্যয় হবে- পশ্চিম পাশের জমি অধিগ্রহণ করতে সেই পরিমান টাকা লাগবে না।
তাছাড়া পূর্ব পাশ দিয়ে বাইপাস সড়কটি যদি মোহনপুর বটতলায় গিয়ে মূল সড়কের সাথে মিলিত হয় তবে যানজটের নিরসনতো দূরের কথা বরং আরও বেশি হবে। তাদের বক্তব্য এটি বর্তমানেই একটি যানজট পূর্ণ এলাকা। মণিরামপুরের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠনগুলোই মোহনপুর বটতলা সংলগ্ন। মণিরামপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, আবহাওয়া অফিসসহ অতি সন্নিকটে উপজেলা প্রশাসনের বেশিরভাগ দপ্তরগুলো অবস্থিত। ফলে বাইপাস সড়কটি মোহনপুর বটতলার কাছে এসে প্রধান সড়কের সাথে সংযুক্তি মোটেই সুখময় হবে না। পূর্ব দিক দিয়ে যদি নির্মাণ করতেই হয় তবে দূর্গাপুর-কামালপুর হয়ে-মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পূর্ব পাশ দিয়েই হরিহর নদী অতিক্রম করতে হবে। তবেই না বাইপাস সড়কের সুবিধাটা পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে পূর্বপাশ দিয়ে গেলেও একটি ব্রিজ অবশ্যই নির্মাণের প্রয়োজন পড়বে। সে ক্ষেত্রে ব্যয়টা একটু বেশিই হবে। তাছাড়া জমি অধিগ্রহণ করতে টাকার পরিমানটাও সম্ভাব্য পরিমানের চেয়েও অনেক বেশিই হবে বলে বিজ্ঞজনের ধারণা। কারণ এ সমস্ত গ্রামগুলো সবই পৌর সভার প্রধান গ্রাম হিসেবে পরিচিত।
অন্যদিকে, পশ্চিম পাশের গ্রামগুলো সবই পৌর এলাকা বর্হিভুত এবং এখানকার জমির মূল্য তুলনামূলক কম। ফলে পূর্ব থেকে পশ্চিম পাশ দিয়ে বাইপাস সড়কের নির্মাণ খরচ কম হবে বলে তাদের ধারণা। তাছাড়া পূর্বপাশে বাইপাস সড়ক হলে তার সাথে পশ্চিম দিক থেকে লিংকরোড হলেও বাংলাদেশের বৃহত্তম স্থলবন্দরের সাথে শিল্প শহর নওয়াপাড়া, বিভাগীয় শহর খুলনা ও নদীবন্দর মোংলা ও পায়রার সাথে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সেই যানজটের সমস্যাটি থেকেই যাবে।
মণিরামপুরে বাইপাস সড়ক নির্মাণের স্থান নির্ধারণ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/