Site icon suprovatsatkhira.com

খলিষখালীর মৃৎশিল্প মৃতপ্রায়

খায়রুল আলম সবুজ, খলিষখালী (পাটকেলঘাটা): পাটকেলঘাটা খলিষখালীর রাঘবকাটী গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী মৃৎশিল্পী রেবা পাল। বাবার বাড়িতেও ছিলেন মৃৎশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট। স্বামী বিশ্বনাথ পালের সংসারে এসেও রেবা পাল একই কাজ করছেন প্রায় ৩০ বছর ধরে। পূর্ব পুরুষদের পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও এখনো মাটি দিয়ে নিত্য ব্যবহারের বাহারি পণ্য তৈরি করছেন তিনি। তবে প্লাস্টিকের পণ্যের সহজলভ্যতা আর জ্বালানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন এ পেশা ছাড়তে চান রেবা পাল। তার মতো এমন অস্তিত্ব সংকটে এলাকার আরো ১৮-২০ টি পরিবার।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিলুপ্তির পথে রাঘবকাটী গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। এক সময় এ গ্রামের ৩৫-৪০টি পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল। আধুনিকতার ছোয়া ও কালের পরিক্রমায় রাঘবকাটী গ্রামের পাল বংশের মাত্র ২০টি পরিবার বসবাস করছে। কিন্তু মাত্র ১২-১৫টি পরিবার অনেক কষ্টে তাদের পূর্বপুরুষদের এ পেশাকে ধরে রেখেছে। মৃৎশিল্প যেন এ গ্রামে মৃতপ্রায়। কিন্তু এক সময়ে সারাক্ষণ মাটির জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটত কুমারপাড়া মৃৎশিল্পীদের। কিন্তু এখন আধুনিক যুগে কাঁচ, সিলভার, এ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক অথবা মেলামাইনের তৈজসপত্র বাজারে ভরপুর থাকায় মাটির তৈরি জিনিসপত্র হারিয়ে যেতে বসেছে। হাঁড়ি-পাতিল, ডাবর-মটকি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসসহ মাটির ব্যাংক, শো-পিস, গহনা, কলস, ফুলের টব, ফুলদানি, ঢাকনা, পিঠা তৈরির ছাঁচসহ নানা রকম খেলনা তৈরি করতেন মৃৎশিল্পীরা।
পালপাড়ার বাসিন্দারা জানান, সব কিছুর দাম যে অনুপাতে বেড়েছে, সে অনুপাতে মাটির তৈরির সামগ্রীর দাম বাড়েনি। প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি সামগ্রীর দাম বেশি হলেও অধিক মজবুত হওয়াতে মানুষ মাটির তৈজসপত্র কিনছে না। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে হারিয়ে যাওয়া মৃৎশিল্পের অতীত-ঐতিহ্য পুনরায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। বাংলাদেশে সর্বত্র চৈত্র-বৈশাখে মেলা বসে। পাল পরিবারের সদস্যরা সেখানে এখন অন্য ধরনের পণ্য নিয়ে হাজির হন। শহরাঞ্চলে শোরুমে দেখা যায় মাটির পণ্য। বিত্তবানরা ঘর সাজাতে এসব কেনেন। কম ব্যয়ে ঘর সাজাতে মটির তৈরি পণ্যই সেরা। এ শিল্প যেনো হারিয়ে না যায়, কোনভাবেই মৃৎশিল্প যেন ‘মৃতশিল্পে’ পরিণত না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট দফতরের।
প্রতিবন্ধী মৃৎশিল্পী রেবা পাল বলেন, বাজারে প্লাস্টিক, সিরামিক, মেলামাইন, সিলভার, এমনকি লোহার তৈরি সমাগ্রীর সহজলভ্যতা, কম দামের করাণে মানুষ মৃৎশিল্প ব্যবহারে অনীহা দেখায়। ফলে শিল্পীরা তাদের উৎপাদনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। এখন শুধু বাপ-দাদার পেশাটাকে কোন মতে টিকিয়ে রেখেছি। তবে সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে আমরা এই শিল্পটাকে টিকিয়ে রাখতে পারবো।
মৃৎশিল্পের কারিগর কার্ত্তিক পাল ও উত্তম পাল বলেন, এ পেশায় আয় কম। এখন এ পেশায় কোন রকম পেট চলে। বাপ-ঠাকুরের পেশা ছাড়তে পারছি না। তাই এ শিল্প নিয়েই পড়ে আছি। তারা আরো বলেন, অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজ করতে শুরু করেছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ শিল্পকে হয়তো একদিন আর ধরে রাখা যাবে না।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version