মোজাহিদুল ইসলাম:
বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়র শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬২ সালে আইউব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতির হাতেখড়ি তার। ১৯৫২ সালে প্রাইমারি শিক্ষার মধ্যদিয়ে ছাত্র জীবন শুরু করে ১৯৫৫ সালে বৃত্তিসহ পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৬২ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন তৎকালীন ইপিইউইটিতে যা বর্তমানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি (বুয়েট) নামে পরিচিত। ১৯৬৫ সালে বুয়েট ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠাকালীন ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৬৯ সালে চার বছর দায়িত্ব পালন করেছেন বুয়েটের শেরে বাংলা হল ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে। ওয়াপদাতে সরকারি চাকুরি পেয়েও রাজনীতির প্রতি ভক্তি থাকার কারণে ছেড়ে দিয়েছেন। ১৯৭১ সাল। বঙ্গবন্ধুর ডাকে যোগ দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধ করেছেন তালার মাগুরা-রায়পুর-কপিলমুনিতে। এছাড়া নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিয়েছেন তিনি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দুই মাসের জন্য চাকুরীতে যোগ দেন তিনি। কিন্তু পরে আবারও রাজনীতিতে ফিরে আসেন।
ইঞ্জিনিয়র শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৯১ সালে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালন করেন জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হিসেবেও। ২০০৫ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ইঞ্জিনিয়র শেখ মুজিবুর রহমান সাতক্ষীরা-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।
সংসদীয় আসনের বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনা আর দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন সুপ্রভাত সাতক্ষীরার সাথে।
রাজনৈতিক জীবন নিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের সাথে কাজ করেছি। ২০০৮ সালে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। যুদ্ধের সময় অনেক বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। আল্লাহর রহমতে রক্ষা পেয়েছি। ২০১৩ সালে জামায়াত-বিএনপির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। ১৯৯১ সালে আন্দেলন করেছি। ৯৬ সালে জনতার মঞ্চ নামে আন্দোলনে নিজেকে সঁপে দিয়েছি। ২০০১ সালের নির্বাচনে মাত্র কয়েক হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। মানুষ আমাকে ভালোবাসে। মানুষ আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে। তাই বিশ্বাস করি তারা আমাকেই ভোট দেবে। এজন্য দলও আমার উপর আস্থা রাখবে।
প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, পুরো তালা-কলারোয়ার কপোতাক্ষ নদীতে মাত্র দুটি ব্রিজ ছিল। কিন্তু আমার সময়ে আরও চারটি ব্রিজ তৈরি হয়েছে। এছাড়া বড়দল ব্রিজ, ইসলামকাটি ব্রিজ, কলারোয়ার খোরদো ব্রিজ, কাশিপুর সুড়িঘাটা ব্রিজ তৈরি করেছি। আমার সময়ে ২ কোটি ৬২ লাখ ৫৪ হাজার টাকার বাজেটে কপোতাক্ষ ও শালিখা নদী খনন করেছি। এতে জালালপুর, মাগুরা, খলিশখালী, নগরঘাটা, সরুলিয়া, খেশরা ইউনিয়ন জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। মানুষ এই কাজের কথা মনে রেখেছে। এছাড়া, দলুয়া থেকে রাজাপুর রাস্তা তৈরি করেছি। রাজাপুর থেকে মাদরা পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করেছি। আমার সময়ে ২৫০ কিলোমিটার এলাকা বিদ্যুতায়নের আওতায় এনেছি। ১১৭ কিলোমিটার পাঁকা রাস্তা তৈরি করেছি। ১১৩ কিলোমিটার ইটের রাস্তা তৈরি করেছি। পাঁচটি কলেজের ভবন তৈরি করেছি। এছাড়াও বেশ কিছু ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। ৩৫টি স্কুল-মাদরাসার ভবন তৈরি করেছি। ১১২টি প্রাইমারি স্কুলের ভবন সংস্কার করেছি। ৩৬টি ছোট ব্রিজ তৈরি করেছি, সাতক্ষীরার বাইপাসের নকশা তৈরি করেছি, ভোমরা ব্রিজ তৈরি করেছি, নাভারণ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত রেল লাইন তৈরির জন্যে কথা বলেছি। টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের জন্যে অনুমোদন এনেছি, যুব উন্নয়নের জন্য সংসদে কথা বলেছি। কখনোই আমি দুর্নীতির সাথে যুক্ত ছিলাম না। আওয়ামী লীগ ও শরীকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসন করেছি। এতকিছু করার কারণ আমি আওয়ামী লীগকে ভালোবাসি, আমি সাতক্ষীরার মানুষকে ভালবাসি। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। চাই দেশের উন্নয়ন। আর আমি তাই বিশ্বাস করি দল আমাকে আবারও মনোনয়ন দেবে।
সাতক্ষীরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন- মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, নেতা-কর্মীরাও বিভক্ত- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার সাথে কারও দ্বন্দ্ব নেই। আর আমি উন্নয়ন করেছি। সুতরাং আমাকে মনোনয়ন দিলে মানুষ আমাকে ভালোবেসেই ভোট দেবে।
বর্তমান সময়ে সাতক্ষীরা-১ আসনের মানুষের কি কি কারণে দুর্ভোগে রয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের এখনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়নি। রাস্তাঘাট উন্নত হয়নি। কল-কারখানা তৈরি হয়নি। এছাড়া নদী খননের অভাবে নদীগুলো আজ সংকটে। এজন্য আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ রয়েছে।
মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে কোন কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনগণের জন্য করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত নাভারণ থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত রেল লাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবো। যেন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়। তাহলে বিশ্বের মানুষ সহজেই এই জেলায় আসতে পারবে। মালামাল পরিবহন সহজ হবে। দ্বিতীয়ত, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে নদী খনন করতে হবে। কপোতাক্ষকে বাঁচাতে গেলে খননের মাধ্যমে পদ্মার সাথে যুক্ত করতে হবে। তৃতীয়ত, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবো। আমাদের কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য নদী খনন জরুরি। চতুর্থত, শিল্পায়ন ও কমংসংস্থানের জন্য কারখানা তৈরি করবো। যেন এই এলাকার মানুষ কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারে। পঞ্চমত, আমাদের এখানে বিশ্ববিদ্যালয় নেই। একটা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেব।