এস.এম নাহিদ হাসান:
সরদার মুজিব। বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়েই রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি তার। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কলারোয়া থানা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক পদে ছিলেন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৯৯ সালে স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করে আবারো রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০০০ সালে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। ২০০২ সালে হন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক। ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ওই নির্বাচনে সন্তোষজনক ভোট পাওয়ায় তাকে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর সদস্য মনোনীত করা হয়।
এছাড়া দেশের সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, পুলিশ, গ্রামপুলিশ, আনসার বাহিনীর অবসর প্রাপ্ত সৈনিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু সেনা পরিষদ নামে নতুন একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগাঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসন থেকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী (হরিণ প্রতীক) হিসেবে ৩০,০০০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন সরদার মুজিব। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। সাতক্ষীরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশার বিষয়ে সরদার মুজিব কথা বলেছেন দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরার সাথে।
তিনি বলেন, ২০১৩-২০১৪ সালে সাতক্ষীরার প্রেক্ষাপট সবার জানা আছে। জামায়াত-শিবির-বিএনপি জেলায় যে তা-ব চালিয়েছে তা কল্পনার বাহিরে। তারা বেছে বেছে আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। সাতক্ষীরা থেকে সারাদেশের যোগাযোগ বিছিন্ন করে দিয়েছিল। কলারোয়াতে ঐ সময় ৫জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিলো। আমি তখন নিহত নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। দলকে সংগঠিত করতে কাজ করেছি। এসব ঘটনায় নেতাকর্মীদের পাশে থাকতে বাধ্য হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নেত্রী খুশি হয়ে আমাকে জেলা আওয়ামী লীগের একটি পদ দিয়েছিলেন। আমি আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে চিরঋণী। তারা আমাকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। নেত্রী যদি চাই তাহলে আমি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবো।
আওয়ামী লীগে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন- এটা নিয়ে দলে কোন্দল বাড়ছে- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এ দলের বিভিন্ন ইউনিটে একাধিক যোগ্য নেতা আছে। তাই মনোনয়ন প্রত্যাশীও অনেক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। নেত্রী তালা-কলারোয়ার উন্নয়নের জন্য যাকে যোগ্য বলে মনে করবেন তাকে মনোনয়ন দেবেন। আওয়ামী লীগ একটি দল, যেখানে নেত্রীর চাওয়াই সকলের চাওয়া। যে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আসবে দলের নেতাকর্মীরা তার হয়ে মাঠে কাজ করবে। আর আমি যদি মনোনয়ন পায় তাহলে আমার দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে সকল ভেদাভেদ ভুলে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করবো। আমার এলাকা ও দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো।
বর্তমানে এলাকার মানুষের দুর্ভোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারলে তৃণমূল থেকে শুরু করে সকল স্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে ভেদাভেদ তা দূর করবো।
দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে জয়ী হলে এলাকার মানুষের জন্য কোন কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবো। কারণ একটি এলাকা তখনই উন্নত হয় যখন সেখানে ব্যবসা বাণিজ্যের পরিবেশ ভাল থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিশে^র বিভিন্ন দেশে মানুষ কাজ করছে। তারা দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছে। কিন্তু আমাদের এ জেলার মানুষ খুব কমই দেশের বাহিরে কাজ করতে যায়। যার জন্য আমাদের এখানে বাহিরের টাকার প্রবাহ কম। সরকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। বরিশালে পায়রা সমুদ্র বন্দর হচ্ছে। আমি মনে করি আমাদের সাতক্ষীরায় বঙ্গোপসাগরের কূলে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর করা সম্ভব। এর মাধ্যমে তালা-কলারোয়াসহ গোটা জেলার মানুষের কর্মসংস্থানের বড় সুযোগ করা সম্ভব হবে। এছাড়া এর মাধ্যমে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন সম্ভব হবে। পাশাপাশি বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে ছোট ছোট শিল্প কলকারখানা। আমাদের দেশের মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিবার নিয়ে বেড়াতে যায়। কিন্তু আমাদের এখানে রয়েছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবন। মহান আল্লাহতাওয়ালার অশেষ রহমতে আমরা এটা পেয়েছি। কিন্তু আমাদের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দূরদর্শীতার অভাবে সুন্দরবনকে একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। বিশে^র বিভিন্ন দেশে পর্যটকদের ক্যাবল কারের মাধ্যমে ৭ থেকে ৮হাজার ফুট উপরে তুলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখানো হয়। আমরাও পারি এভাবে আমাদের সুন্দরবন পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে। আমি যদি সংসদ সদস্য হই তাহলে জেলার বাকি সংসদ সদস্যদের সাথে নিয়ে কাজগুলো করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবো। আমাদের নেত্রী উন্নয়নের নেত্রী আমি বিশ্বাস করি তিনি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাবেন।