সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান। ২১তম বিসিএস-এর এই কর্মকর্তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার কোলাগ্রামে। তিনি গ্রামের স্কুল থেকেই ক্লাস ফাইভ ও এইটে বৃত্তি এবং এসএসসিতে মানবিকে ৪র্থ স্টান্ড করেছেন। যশোর এমএম কলেজ থেকে এইচএসসিতেও স্টান্ড করেন। স্নাতক করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোস্যাল ওয়েলফেয়ার বিভাগ থেকে, একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তরে ১ম শ্রেণি পেয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে ইন্ট্রোভার্ট এই কর্মকর্তা নারায়নগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারের ঘটনার তদন্ত কাজে সার্বিক দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষতার সাথে। ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। সাতক্ষীরার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও স্বাভাবিক রাখতে ইতোমধ্যে তার নানা উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে। ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু, প্রেক্ষাপট সাতক্ষীরা’ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন সুপ্রভাত সাতক্ষীরা’র সাথে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এসএম নাহিদ হাসান, ফাহাদ হোসেন ও আরিফুল ইসলাম রোহিত
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। কেমন আছেন?
সাজ্জাদুর রহমান: আলহামদুলিল্লাহ, ভাল আছি।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার জন্মস্থান ও পরিবার-পরিজন সম্পর্কে জানতে চাই-
সাজ্জাদুর রহমান: ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার কোলাগ্রামে ১৯৭৫ সালের ৪ জানুয়ারি আমার জন্ম। আমার বাবা মরহুম ছবেদ আলী মণ্ডল ও মা মোছা. অতিরন্নেছা। বর্তমানে আমার দুই ছেলে আর এক মেয়ে। বড় ছেলে এইচএসসি পড়াশুনা করছে, ছোট ছেলে বিকেএসপিতে পড়ছে। আর মেয়েটা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। আমার মিসেস মোছা. আকিদা রহমান নীলা, যে কি না আমার সবচেয়ে বড় কাজ সামলাচ্ছে- আমার পরিবারকে দেখাশুনা করছে (সহাস্যে)।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনার শিক্ষাজীবন-
সাজ্জাদুর রহমান: প্রাথমিক শিক্ষা ঝিনাইদহের কোলা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কোলা বাজার ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি উত্তীর্ণ হয়। আমি এখনো পর্যন্ত ওই স্কুলের একমাত্র ছাত্র যে, এস.এস.সি’তে স্ট্যান্ড করেছিলাম, সেটা ১৯৯০ সালে। তারপর যশোরের মাইকেল মধুসূদন (এম.এম.) কলেজে ভর্তি হই। সেখানে আর্টস বিভাগে ৪৫০ জন স্টুডেন্টের মধ্যে আমরা তিনজন ছিলাম এস.এস.সি’তে স্ট্যান্ড করা। আমি ছিলাম ইন্ট্রোভার্ট টাইপের, আমি যে স্টান্ড করেছিলাম এটা কাউকে বলতাম না। পরে যশোরের এমএম কলেজ থেকে স্টান্ডসহ এইচএসসি এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করেছি। সেখানে সোস্যাল ওয়েল ফেয়ারে অনার্স মাস্টার্স করা। অনার্সের ক্ষেত্রে আমার একটা ট্রাজেডি পয়েন্ট রয়েছে, আমি ইউনিভার্সিটিতে এক নম্বরের জন্য ফার্স্টক্লাস পাইনি। এটা আমার জন্য ছিল বড় একটা ধাক্কা। আমি ফাইভে বৃত্তি পেয়েছি, এইটে বৃত্তি পেয়েছি, এসএসসিতে স্ট্যান্ড করেছি, ইন্টারমিডিয়েটে স্টান্ড করেছি, ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি টিচার হব বলে। কিন্তু যখন সেকেন্ড ক্লাস হয়ে গেল তখন আমার সেই ইচ্ছাটা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল। যদিও মাস্টার্সে ঠিকই ফার্স্ট ক্লাস পাই।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি কী করতেন?
সাজ্জাদুর রহমান: স্কাউটিং করতাম, ১৯৮৯ সালে ৪র্থ বিশ্ব জাম্বুরিতে অংশগ্রহণ করেছিলাম।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: ছোটবেলার কোন বিষয় সব সময় মনে পড়ে-
সাজ্জাদুর রহমান: ছোটবেলায় দুষ্টু ছিলাম, স্কুলে যেতাম না। বাড়ির পাশে বেগবতি নদী ছিল। স্কুলে যাওয়ার পথে সেখানে বই ছিড়ে ভাসিয়ে দিতাম।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনি এখন প্রতিষ্ঠিত, দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আপনার কাধে, ছোট বেলা থেকে উঠে আসার গল্প শুনতে চাই-
উত্তর: ছোটবেলায় খুবই দুষ্টু ছিলাম, তারপর বুঝতে শিখলে পড়াশুনায় মনযোগী হই। তখন ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পেলাম, এইটে বৃত্তি পেলাম। নাইনে আর্টস বিষয়ে পড়াশুনা করায় বন্ধু বান্ধবের সাথে সময় দেয়ার সুযোগ পেতাম না। তাছাড়া আমি ছিলাম ঘরকুনো টাইপের এবং পড়ুয়া ছাত্র। ফলে, এসএসসিতে কোলা বাজার ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৪র্থ স্ট্যান্ড করেছি, ইন্টারমিডিয়েটেও যশোর এমএম কলেজ থেকে স্টান্ড করেছি, ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি টিচার হওয়ার ইচ্ছায়। সেই মানসিকতা স্থির করে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, কিন্তু অনার্সে আমি ইউনিভার্সিটিতে এক নম্বরের জন্য ফার্স্ট ক্লাস পেলাম না। তখন আমি চিন্তা করলাম আমি পুলিশ হব। তখন থেকেই বিসিএস প্রস্তুতি নিলাম ১৪ থেকে ১৫ ঘন্টা পড়াশুনা শুরু করলাম। পরে ২১তম বিসিএস-এ আমার চাকরি হয়ে গেল। আমি নিষ্ঠার সাথে এই চাকরি করছি, ভবিষতেও নিষ্ঠার সাথে জনগণের সেবা দিয়ে যাব।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: পুলিশ ডিপার্টমেন্টে যোগদানের পর এমন কোন ঘটনা আছে, যা নিয়ে আপনি গর্ববোধ করেন-
সাজ্জাদুর রহমান: পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কোন আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই। এখানে আজকে আমার জন্য যেটা আর্শীবাদ অন্যজনের জন্য সেটা আর্শীবাদ নাও হতে পারে। অনেকগুলো কাজের ভেতরে যে কাজটি আমার সৌভাগ্যের বলা যায়, নারায়নগঞ্জের সেভেন মার্ডারের ঘটনা, সেখানে আমি ছিলাম। যাদের নামে চার্জশিট হয়েছে তাদের মধ্যে কিছু সরকারি অফিসার জড়িত ছিলেন। ঘটনাটা ঘটার দুইবছর আগে থেকেই আমি ওই জেলায় ছিলাম। তখন আমি এডিশনাল এসপি। আমার পরে আরো দু’জন এডিশনাল এসপি ছিলেন। তাদের বদলি করা হল। আমার আগের জন এবং পরের জনসহ অধিকাংশ অফিসার ফোর্সকে বদলি করা হল। আমাকে বদলি করা হয়নি। এ মামলার তদন্ত তদারকির দায়িত¦ আমার ওপর পড়ল এবং পরবর্তীতে এক বছর দু’মাস ওই জেলায় ছিলাম। অনেকেই জেনেছিল পুলিশের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে- কিন্তু সেক্ষেত্রে আমি একটু ব্যতিক্রম ছিলাম। যেহেতু ওই সময়টা চ্যালেঞ্জিং সেহেতু এটা আমার কাছে গর্বের বিষয়। সেসময় আসামিদের পুলিশ হেফাজতে নেয়ার কাজটিও আমাকে করতে হয়েছে (দেখেন আমার গায়ের পশম খাড়া হয়ে যাচ্ছে)।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: ভবিষ্যতে কোন পর্যায় থেকে জনগণের সেবা দিতে চান।
সাজ্জাদুর রহমান: যত দিন চাকরি আছে- ততদিন এই চাকরির মাধ্যমে জনগণের সেবা দিতে চাই। সরকারের কর্মকর্তা হয়ে জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার একমাত্র চাকরি আমার দৃষ্টিতে পুলিশের চাকরি। এজন্য আমি তিনটা বিসিএস দিয়েছি তিনটারই ফার্স্ট চয়েজ ছিল পুলিশ। প্রথমটা চুড়ান্ত রেজাল্টে আমার হয়নি। দ্বিতীয়টাতে চাকরি হয়েছে এবং তৃতীয়টাতে ভাইভা দিতে যাইনি। আমি ২১তম বিসিএস এর সদস্য। যেহেতু ২১তম বিসিএস-এ আমার ফার্স্ট চয়েজই পুলিশ ক্যাডার পেয়েছি- তাই ২২তম বিসিএস এ ভাইভা দিতে যাইনি।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনি সাতক্ষীরায় যোগদান করেছেন প্রায় আট মাস হলো, সাতক্ষীরা কেমন লাগছে?
সাজ্জাদুর রহমান: সাতক্ষীরাতে আমি কাজ শুরু করেছি ২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর। ওইদিন ছিল সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস। আমি নিজেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং তাই আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। আট মাস আমি সাতক্ষীরায় দায়িত্ব পালন করছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাসী তাদের সাথে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। এজন্য সাতক্ষীরা ভাল লাগছে। এছাড়া সাতক্ষীরার সংস্কৃতি আমার ভালো লাগে। যেহেতু আমি যশোরের ছেলে পার্থক্য শুধু সুন্দরবন ঘেসা অঞ্চল আর লবণ পানি। এটা এখানকার মানুষের জন্য কষ্টকর কিন্তু সাতক্ষীরার আপ্যায়ন আমাকে মুগ্ধ করেছে। তবে সাতক্ষীরার আবহাওয়া আমার জন্য একটু প্রতিকূল। কিছুদিন আগে আমার বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল তার বিশ্লেষণ থেকে যেটা বুঝলাম- “এ অঞ্চলে আসলে মানুষের ভুড়ি বাড়বে, আর টাক পড়বে (হাসতে হাসতে)”।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: নানা কারণে যুব সমাজ বিপদগ্রস্ত হচ্ছে- এর মধ্যে মাদক অন্যতম। মাদক প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে বলুন-
সাজ্জাদুর রহমান: এটা বাস্তবসম্মত যে, যুব সমাজ নানা কারণে মাদকের যে ভয়াল গ্রাস তাতে আক্রান্ত হয়েছে এবং সাতক্ষীরা যেহতেু বর্ডার জেলা সেহেতু মাদকের সহজপ্রাপ্তি রয়েছে। অপরদিকে, সাতক্ষীরা বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম ধনী জেলা। এখানে মানুষের মাঝে অর্থের প্রবাহ বেশি। মানুষের হাতে বেশি টাকা থাকার কারণে সহজেই মাদকদ্রব্য কিনতে পারে। এখানের মানুষ- বিশেষ করে যুব সমাজ এই মাদকে আক্রান্ত হওয়ার কারণ রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে ঘোষণা, আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শ্লোগান ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ সেই মাদকের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরাতেও খুবই কঠোরভাবে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে কতিপয় ব্যক্তি নিজেদের মধ্যে অর্ন্তদ্বন্দ্ব অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে গোলাগুলিতে মারা গিয়েছে। তবে আমি ইতোমধ্যে অনেক মাদকবিরোধী সমাবেশ করেছি, পোস্টারিং করেছি। একই সাথে জেলা শহরে অভিযোগ বক্স স্থাপন করেছি। সেখানে মাদক বিক্রেতা, সরবরাহকারী সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। আমরা প্রতিদিন এই অভিযোগ বক্স চেক করছি।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: ‘পুলিশ’ নিয়ে মানুষ নানারকম নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে- আবার বিপদে পড়লে তারাই আগে পুলিশের কাছে যায়- অনেক ক্ষেত্রে হয়রানি হয়- অনেক ক্ষেত্রে সেবা পায়- এ বিষয়ে কিছু বলুন-
সাজ্জাদুর রহমান: কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন দুদকের মাননীয় কমিশনার মহোদয় খোলা জায়গায় গণশুনানি করেছেন। আপনারা দেখেছেন সেখানে অনেকগুলো সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দের বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। ওইখান থেকে যদি আপনারা কম্পেয়ার করেন তাহলে বুঝতে পারবেন পুলিশ কতটা অপরাধের সাথে যুক্ত। পুলিশের বিপক্ষে জনগণের নেগেটিভ ধারণা পোষণের একটা কারণ আছে। পুলিশ হলো সরকারের একটা ভিজিবল পার্ট। মানুষ পুলিশকে ইগনোর করা মানে সরকারকে ইগনোর করা। ছাত্ররা যখন আন্দোলন করে তখন তারা পুলিশকে মারলে মনে করে সরকারকে মারছি। তাছাড়া পুলিশকে একটা ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যে, পুলিশ চাইলে যে কোন ব্যক্তিকে যে কোন সময়ে তার ব্যক্তিগত অধিকার হনন করে পরাধীন করতে পারে। তাকে কা.বি. ৫৪ ধারায় এরেস্ট করা যেতে পারে। জিজ্ঞাসা করার জন্য ধরে আনা হতে পারে। এটা পুলিশই করতে পারে, আর কেউ পারে না। এজন্য জনগণ অনেক সময় নেগেটিভ ধারণা পোষণ করতে পারে। জনগণের যে ভীতির জায়গা রয়েছে- সেখান থেকে ঘৃণার জায়গা তৈরি হয়। কিন্তু মানুষের ক্রাইম জনিত যে বিপদগুলো সেই বিপদে পড়লে তাকে পুলিশের কাছেই আসতে হয়। পুলিশ এমন একটা অরগানাইজেশন যারা কখনোই আন্দোলন করে না। তারা যদি আন্দোলন করে নিরাপত্তা দেওয়া থামিয়ে দেয়, তাহলে কেউ তার সম্পত্তি সংরক্ষণ করতে পারবে না।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: অনেক ক্ষেত্রেই শোনা যায় পুলিশ সাধারণ মানুষকে ধরে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়- এটা পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে- পুলিশ সম্পর্কে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা জন্ম দেয়- এটাকে কিভাবে দেখেন-
সাজ্জাদুর রহমান: আপনার একথা নিয়ে আমি একেবারে দ্বিমত পোষণ করছি না। দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে, আবার আমাদের পুলিশের দু-একজন বিপদগামী সদস্য এটা করতে পারে। তবে আমি আসার পর কেউ যাতে এভাবে হয়রানি না হয় সেজন্য আমি সবসময় পুলিশকে সেই মোটিভেশনটা করি। একটা ডাকাত কাউকে ছুরি ধরে কিছু টাকা নিয়ে আসল আর একটা পুলিশ রাস্তা থেকে সাধারণ জনগণকে ধরে টাকা নিয়ে ছেড়ে দিল এই দুয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং এরকম ঘটনা ঘটার সাথে সাথে পানিসমেন্টের আওতায় আনা হয়।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনি সাতক্ষীরায় যোগদানের পর গণমাধ্যমকে বলেছিলেন- ডিবি পুলিশ বা পুলিশের কোন উইং দ্বারা জনগণ হয়রানির শিকার হবে না- তারপরও প্রায়ই শোনা যায়- উমুককে ধরে উমুক মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে- এর মাধ্যমে পুলিশের প্রতি আস্থা কমে কি না?
সাজ্জাদুর রহমান: যেটা ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, সেটা শুধু ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আপনারা ইতোমধ্যে প্রমাণ পেয়েছেন। আমাকে মানুষ বিভিন্ন সময় জানায়, তারা আগের চেয়ে ভাল রয়েছে। যদি কোন ঘটনার নির্দিষ্ট প্রমাণ থাকে তবে সেই অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে মানুষ বিভিন্ন কথা বলে, ঢালাও কথার কোন ভিত্তি নেই। এছাড়া, আরো স্বচ্ছতার জন্য আমরা ডিবিকে পোশাক পরিধান ছাড়া অভিযানে যাওয়া বন্ধ করেছি। যদি কোন ডিবি পোশাক ছাড়া ডিবি পরিচয় দেয় তাহলে সাথে সাথে আমাদেরকে জানাতে হবে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: কোন নির্দোষ ব্যক্তি আটক হলে তার করণীয় কি?
সাজ্জাদুর রহমান: তখন তো সে আটক থাকবে। তার পরিবার যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। তাহলে নির্দোষ প্রমাণ সাপেক্ষে আমরা তাকে আইনগত সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করব।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা শহরে দিন দিন যানজট বাড়ছে- ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিকরণে কোন বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?
সাজ্জাদুর রহমান: আপনারা জানেন, সাতক্ষীরা খুব ছোট একটি জেলা। এই জেলার একটি রাস্তা দিয়ে সব ধরণের যানবাহন চলাচল করে। মোটরযান আইন অনুযায়ী যে সকল যানবাহন চলাচল করার কথা তার বাইরে নানা রকম যানবাহন চলাচল করে। জেলায় সবকিছু বাড়ছে- সেক্ষেত্রে যানবাহনের চাপও বাড়ছে। তবে ঢাকা শহরে যে যানজট সে তুলনায় কোন যানজট নেই। যানজট নিরসনে আমাদের সদস্যরা নিরলস কাজ করছে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা শহরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে- সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় এটা কতটুকু কার্যকর ভ‚মিকা রাখছে-
সাজ্জাদুর রহমান: সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করা হচ্ছে। যখনি কোথাও যানজট বাধছে, তখনই কন্ট্রোল রুম থেকে ট্রাফিক কন্টোল রুমে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং তাৎক্ষণিক সমাধানের ব্যবস্থা করছি। সবচেয়ে বড় সাফল্য রোজার সময় সকল মানুষ বাড়ি ফিরে ইফতার করেছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল আমি নিজে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইফতার করব। কিন্তু সাধারণ মানুষকে বাড়ি পৌঁছে দেব। সাতক্ষীরার মানুষের দাবি- এবারই শহরের মানুষ সবচেয়ে নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করেছে। ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে গভীর রাত অবধি বেচাকেনা করেছে। সি সি ক্যামেরা স্থাপনের পর থেকে এখন পর্যন্ত শহরে বড় কোন চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। যে যে রাস্তায় সি সি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে- সেখানে কোন ইভটিজার দাঁড়ায় না। সর্বোপরি শহরে অপরাধ প্রবণতা কমেছে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: ট্রাফিক পুলিশ ও ডিবি পুলিশকে নানা নেতিবাচক প্রশ্নে সব সময় আলোচনা থাকতে দেখা যায়- মানুষের মনে এই ধারণা পরিবর্তনে কী কী পদক্ষেপ পুলিশ বিভাগ গ্রহণ করতে পারে বলে মনে করেন-
সাজ্জাদুর রহমান: সি সি ক্যামেরা স্থাপন করেছি শুধুমাত্র ক্রিমিনাল সনাক্তকরার জন্য নয়। আমাদের অফিসারদের কার্যক্রমও নজর রাখা হচ্ছে। কেউ চাঁদাবাজি করছে কি না, ঠিকমত কাজ করছে কি না এবং কাউকে সন্দেহ হলেই তাকে ফোন করে নির্দেশনা দিচ্ছি ফলে, সে এলার্ট হয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে যাতে জনগণ হয়রানি না হয় সে জন্য নতুন কৌশল প্রণয়ন করে গ্রুপিং অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় ‘পুলিশ’ জনগণের বন্ধু হিসেবে কতটা সেবামুখী দপ্তর হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পেরেছে বলে মনে করেন?
সাজ্জাদুর রহমান: জটিল প্রশ্ন। আমার কাছে কয়েকদিন আগে সাতক্ষীরা সদর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আমাকে না জানিয়ে এসেছিলেন। তখন আমি সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিচ্ছিলাম। তিনি যাওয়ার সময় বলে গেলেন, আমার ভালো লাগল আপনি এসপি হয়ে সরাসরি সাধারণ মানুষের সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন। আমরা পুলিশকে জনমুখি করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। মানুষের প্রতি আমাদের ঘোষণা, যে সব সমস্যা আমাদের অধীনে সেসব সমস্যা আমরা তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করছি। আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক যেকোন সমস্যার সমাধানে আমার অফিসে যে কেউ আসতে পারে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: বর্তমান আইজিপি মহোদয় যোগদানের পর পুলিশ বিভাগে শুদ্ধচার চর্চার একটি বিষয় গণমাধ্যমে এসেছিল- এর কোন প্রভাব সাতক্ষীরায় পড়েছে?
সাজ্জাদুর রহমান: পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আগে থেকে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সমাজের অনেক ভালো কাজ করছে। সাতক্ষীরার বিষয় যদি বলি সম্প্রতি রাজ্জাক পার্কে দুদুক কমিশনারের গণশুনানি হয়। সেখানে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ ওঠে কিন্তু সাতক্ষীরা পুলিশের বিরুদ্ধে খুবই নগণ্য অভিযোগ পাওয়া যায়। তার ভিতর একটা অভিযোগ আমি এখানে যোগদানের আগে। আরেকটি অভিযোগ আমাদের ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে। আমরা দুটো অভিযোগ খতিয়ে দেখেছি এবং আর কোন এধরণের অভিযোগ যাতে না আসে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও জননিরাপত্তায় জনগণের করণীয় নিয়ে কিছু বলুন-
সাজ্জাদুর রহমান: পুলিশের একার পক্ষে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। আমরা যতই শ্লোগান দিয়ে বলি পুলিশ জনগণের বন্ধু কিন্তু জনগণ যদি আমাদের বন্ধু না হয় তাহলে সমাধান করা কঠিন। জনগণের বন্ধু হওয়ার জন্য জনগণের সাথে থেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। জনগণের প্রতি আমাদের বক্তব্য, পুলিশকে তথ্য দিন, নিজে উপকৃত হোন, অন্যকে উপকৃত করুন।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাজনৈতিকভাবে সাতক্ষীরাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ- জেলা পুলিশের প্রস্তুতি নিয়ে কিছু বলুন-
সাজ্জাদুর রহমান: এই জেলার যে অবস্থান, এই জেলার যে প্রয়োজন- সেই অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
সুপ্রভাত সাতক্ষীরা: আপনাকে ধন্যবাদ-
সাজ্জাদুর রহমান: আপনাদেরও ধন্যবাদ।