অক্টোবর ১৫, ২০২১
ইছামতির বুকে বাংলাদেশ-ভারতের নিজ সীমারেখা প্রতিমা বিসর্জন, হাজার হাজার মানুষের উপচে পড়া ভিড়
মীর খায়রুল আলম, এমএ মামুন: উৎসাহ, উদ্দীপনা আর আনন্দ উল্লাসে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যেবর্তী ইছামতি নদীতে স্ব স্ব কিনারায় বিসর্জন মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিজয়া দশমীতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে উভয় দেশের সীমানার গÐির ভিতরেই ছিল মেলার আনুষ্ঠনিকতা। কয়েক বছর ধরে বন্ধ হওয়া মেলাটিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মেলাটি পরিণত হত দুই বাংলার মানুষের মিলন মেলায়। সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলাধীন ইছামতি নদীর টাউনশ্রীপুরে এবং ভারতের টাকি পৌরসভা এলাকায় প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে এই মেলা বসত এই মেলা। এতে অংশ নেয় দুই বাংলার লাখো মানুষ। শুক্রবার বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের মধ্যে মিলন মেলা দেখতে না পাওয়া গেলেও নিজ নিজ সীমা রেখার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় বিজয়া দশমির প্রতিমা বিসর্জন মিলন মেলা। দুই বাংলার মিলন মেলার ভেলা ভাসলোও নদীর জিরো পয়েন্টে ডিঙ্গি নৌকায় লাল ফ্লাগ উড়িয়ে দু’দেশের সীমানা নির্ধারন করতে দেখা যায়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিমা বিসর্জনাস্থল দেবহাটার ইছামতি নদী। দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। এই বিসর্জন কে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয় মিলন মেলা।
এদিকে বেলা গড়ার সাথে সাথে নদীর দেবহাটার টাউন শ্রীপুর ও ভারতের টাকির দু’পারে জড়ো হতে থাকে লাখো মানুষ। দুপুর থেকে দেবহাটাসহ অন্যান্য সীমান্ত এলাকার বিপুল সংখ্যক দূর্গা প্রতিমাকে বিসর্জনের জন্য নিয়ে আসা হয় সীমান্ত নদীতে। একই সাথে দেবহাটার বিপরীতে ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাসনাবাদ, টাকী ও হিঙ্গলগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার প্রতিমাও নিয়ে আসা হয়। তারই পরিপেক্ষিতে দু’দেশের জাতীয় ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কঠিন সিদ্ধান্তে ঐতিহ্যবাহী এই মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হলেও কেউই কোন দেশের স্থলে উঠতে পারেনি। দিনটিতে নিরাপত্তার লক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারতের আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণী ইছামতি নদীর বিস্তৃত জিরো পয়েন্ট এলাকা জুড়ে নৌযানে টহল জোরদার করে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যরা। তাছাড়া দায়িত্বরত অবস্থায় পর্যাপ্ত সংখ্যক সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা পুলিশ, প্রবেশ পথ সহ সকল সড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ দায়িত্ব পালন করে। এদিকে, অশ্রæসিক্ত চোখে ভারতীয় সময় দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টা এবং বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টা থেকে সাড়ে চারটার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে দেবী দূর্গাকে বিদায় জানানোর কথা থাকলেও জোয়ারের কারনে সন্ধ্যার পর বিসার্জন দিয়ে ঘরে ফেরে সকলে। তবে সুষ্ঠভাবে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়। প্রতিবছর উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের আয়োজনে বাংলাদেশ সীমান্তে ব্যাপক আয়োজন করা হয়। এবিষয়ে স্থানীয়রা বলেন দেশ বিভাগের অনেক আগে থেকেই সীমান্তের ইছামতি নদীর উভয় তীরে দূর্গা পূজার শেষ দিন বিজয়া দশমীতে মেলা বসে আসছে। দেশ বিভাগের পরও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি সীমান্তের সীমারেখা। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে এ মেলা কখনও বন্ধ হয়নি। সারা বছর ধরে শুধু ইছামতি নদীর পাড়ের মানুষ নয়, বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এ দিনটির জন্যে থাকে অপেক্ষায়। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিজর্সন উপলক্ষে ইছামতির উভয় পাড়ে বসে নানারকমের দোকান। আত্বীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত ছাড়াও এখানে আসা মানুষ উভয়ের মধ্যে ভাব বিনিময় শেষে সন্ধ্যার পরে ফিরে যায় যে যার দেশে, যে যার ঘরে। বাঙ্গালীর জাতীর সর্বজনীন উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা বিজয়া দশমী প্রতিমা বিসর্জন ঐতিহ্য যাতে হারিয়ে না যায় এবং আগামী প্রজন্ম আরও ভালো ভাবে উপভোগ করতে পারে সে জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। 8,401,941 total views, 360 views today |
|
|
|