জুন ১৩, ২০২০
পাটেকেলঘাটায় করোনার মধ্যেও হালখাতা এনজিওর চাপে দিশেহারা গরীব মানুষ
পাটকেলঘাটা প্রতিনিধি : পাটেকেলঘাটায় করোনার মধ্যেও হালখাতার চাপে দিশেহারা হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের মারাত্মক ছোবলে যখন আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে সকলে ঠিক সেই মুহ‚র্তে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে হালখাতা। অন্যদিকে এনজিওগুলো কিস্তির টাকা আদায়ে ব্যস্ত। আবার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিল পরিশোধের জন্যেও জোর তাগিদ দিচ্ছে। এত কিছুর চাপে মরণঘাতী ভাইরাসে ভয়াবহ রূপ উপলব্ধি যেন মিলান হয়ে গেছে খেটে খাওয়া অসহায় পরিবার লোকজনের। পরিবারের মুখে দু’মুঠো আহার জোটানো যখন দুর্যোগের মধ্যে দুঃসাধ্য ব্যাপারে পরিণত হয়েছে তখনি পাটকেলঘাটা বাজারের বিভিন্ন দোকানিরা হালখাতা দিয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে হালখাতাটা যেন করোনার ভয়াবহতা থেকেও ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। অসহায় জনগণ ত্রাণের জন্য হাত পাতছে মানুষের দুয়ারে। এমন অবস্থার মধ্যেও পাটকেলঘাটার সকল দোকানিগণ মানুষের পকেট কেটে ঋণ পরিশোধ করতে অব্যাহত রয়েছেন। ফলশ্রææতিতে রক্ত বিক্রি করে হলেও দেনা পরিশোধের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে জীবনযাপন করছে এ এলাকার জনগণ। সরেজমিনে পাটকেলঘাটার বাজারে (হাটবার বুধ ও শনিবার) সকল দোকানিদের হালখাতার কার্ড সরবরাহ ও হালখাতা অনুষ্ঠিত হতে দেখা গেছে। কয়েকজন খরিদ্দার জানান, ‘হালখাতা করব কোথা থেকে! যেখানে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করতে হাতে একটি টাকা নেই আর সেই মুহ‚র্তে হালখাতার চাপ। এ যেন মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আয়ের জন্য বাইরে বের হলে করোনার ভয়, ঘরে থাকলে হালখাতার চাপ বিধায় মরণ ছাড়া কোনো গতি খুঁজে পাচ্ছি না’। তারা আরও জানান, খেয়ে বসেছি দেনা করে, অবশ্যই পরিশোধ করব কিন্তু এই বিপর্যয়ের মধ্যে নুন আনতে তো পান্তা ফুরিয়ে যাচ্ছে। কোনদিন দু’বেলা আবার কোনোদিন না খেয়েও বাচ্চাদের নিয়ে জীবন যাপন করছি। রক্ত বিক্রি করেও এ দেনা পরিশোধ হবে না’। পাটকেলঘাটার রাঘবকাটী গ্রামের আসলাম সরদার জানান, ‘বাড়িতে হঠাৎ দেখি পাটকেলঘাটা এক দোকানের হালখাতার কার্ড। দেখে আমার বুকের ভিতর যেন কম্পন অনুভূত হল। এখন কাছে টাকা নেই, দেখছি হালখাতার জন্য গলাই দড়ি দিতে হবে’। এদিকে পাটকেলঘাটার নসের আলী বলেন, ‘একেতো করোনা ভাইরাস তার উপর ঘূর্ণিঝড় আম্পান আর অতি বৃষ্টি এ যেন এক দুর্যোগের বছর। অন্যান্য বছর ধান পাট বিক্রি এবং সমিতি হতে ঋণ নিয়ে হালখাতার দেনা পরিশোধ করি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় নিজের খাওয়ার মতো কোনো চাউল নাই’। ইসলামকাটী গ্রামের শহিদুর ইসলাম জানান, ‘পানের বরজ ঝড়ে পড়ে গিয়ে মাটির সাথে মিশে যাওয়ায় একেবারে সর্বশান্ত হয়ে গেছি। এখন দোকানদাররা করছে হালখাতা। আবার সমিতির কিস্তিতো আছেই। এছাড়া পল্লী বিদ্যুতের বিল দিয়ে গেছে, কি করব বুঝতে পারছি না’। সবকিছু মিলে পাটকেলঘাটাবাসী মহামারি করোনা ভাইরাসের চেয়েও ভয় পাচ্ছে হালখাতা, এনজিওর কিস্তি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিল পরিশোধ নিয়ে। পাটকেলঘাটাবাসীর দাবি মহামারি এ দুর্যোগ কেটে গেলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার পর হালখাতা, এনজিওর কিস্তি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিল পরিশোধের সুযোগ দেয়া হোক। 8,575,820 total views, 3,590 views today |
|
|
|