এপ্রিল ২০, ২০২০
করোনার প্রভাবে খলিষখালীতে বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় কৃষকেরা
খায়রুল আলম সবুজ, খলিষখালী (পাটকেলঘাটা) প্রতিনিধি : পাটকেলঘাটার খলিষখালীতে করোনা ভাইরাসের কারণে বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন কৃষকেরা। এপ্রিল-মে দুই মাস দেশের কৃষির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। কিন্তু সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে পাকা ধান ঘরে তুলতে না পেরে দিশেহারা কৃষক। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা মেনে সবাই ঘরবন্দি জীবন যাপন করছে। ফলে ঘরে থেকে মাঠের পাকা ধান ঘরে তোলা অসম্ভব আবার বাইরে গেলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা। এছাড়া কালবৈশাখী ঝড়ের মৌসুম হওয়ায় বড় বিপদের আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশের খাদ্য সরবরাহের বড় অংশটি নিশ্চিত হয় বোরো ধানের মাধ্যমে। সরকারি গুদামে মজুতের মূল অংশটিও নির্ভর করে এ ফসল থেকে। কিন্তু এ বছর করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের আশঙ্কায় খাদ্য ও আর্থিক সংকটের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। ফলে পাকা ধান মাঠেই পড়ে আছে অধিকাংশ কৃষকের। খলিষখালীর দলুয়া এলাকার কৃষক মুনছুর সরদার বলেন, ‘আমি এ বছর সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছি, ফলনও ভাল হয়েছে। আর কয়েকদিন পর ধান কাটা যাবে। কিন্তু কি করে কাটব। করোনা ভাইরাসের জন্যে অনেকদিন যাবৎ ঘরে বসে। বাড়িতে বসে থাকার করনে কাছে কোন টাকা নেই। আবার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না করোনা ভাইরাসের ভয়ে। খুব চিন্তায় আছি’। কৃষ্ণনগর এলাকার আরেক কৃষক বিমল সরকার বলেন, ‘আমি প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। কিন্তু করোনা ভাইরাসের জন্যে মাঠে গিয়ে ধান কাটতে ভয় পাচ্ছি। তাছাড়া শ্রমিকও পাচ্ছি না। সরকারিভাবে যদি কোন সহায়তা পেতাম তাহলে বেচে যেতাম’। রাঘবকাটী গ্রামের মতিয়ার সরদার বলেন, ‘অনেক কষ্টে ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। ধান কাটা শুরু হলে অনেক শ্রমিক লাগবে। কিন্তু কি করব বুঝতে পারছি না। ছোট খাট ব্যবসা করে খেতাম। ভাবছিলাম ব্যবসা করে কিছু টাকা জমিয়ে রাখব। ধান কাটার সময় শ্রমিক নিতে লাগবে। জমিয়েছিলাম বটে কিন্তু করোনা ভাইরাস এসে সব শেষ। যে টাকা জমিয়েছিলাম তা এই ক’দিনে বসে খেয়ে শেষ হয়ে গেছে’। খলিষখালী ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষকেরা বলছেন, ‘ধান কেটে ঘরে তুলে ধান বিক্রি করে টাকা বের করা যাবে। কিন্তু সেই পর্যন্ত তো যেতে হবে ধান কেটে শুকিয়ে ঝাড়া অবদি প্রায় এক সপ্তাহের ব্যাপার। তাছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে সব দোকান পাট, ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ। ধান যে কে কিনবে, বা আদেও বেচতে পারব কি’না জানি না। এসব ভাবলেই গলা শুকিয়ে আসছে’। খলিষখালী উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এ বছর খলিষখালীতে মোট বোরো ধান আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮শ’ ২০ হেক্টর জমিতে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়েছে। এবছর ফলনও ভাল হয়েছে। আর ৫-৭ দিনে ভিতরে খলিষখালী ইউনিয়নে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে’। তিনি আরও জানান, ‘দক্ষিণ এলাকা থেকে যে শ্রমিক আগে ধান কাটতে আসত এবছর নাও আসতে পারে করোনা ভাইরাসের ভয়ে। অন্যদিকে কৃষকেরা অনেকদিন যাবৎ ঘরে বসে। অল্প সংখ্যক শ্রমিক পাওয়া গেলেও কৃষকের কাছে নাই টাকা। করোনা ভাইরাসের ফলে এ এলাকার কৃষকেরা অনেক সমস্যার মধ্যে আছে। সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা আসলে এ এলাকার কৃষকেরা অবশ্যই পাবে’। 8,579,595 total views, 7,365 views today |
|
|
|