আগস্ট ২, ২০১৯
খড়গের নিচে সাংবাদিকতা : গাজী আজিজুর রহমান
বাংলাদেশের অবহেলিত জনপদগুলোর অন্যতম জনপদ সাতক্ষীরা। কিন্তু ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিক্ষা সাহিত্য-সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যে সাতক্ষীরা বিশিষ্ট। পিছিয়ে নেই আন্দোলন-সংগ্রামে,রাজনীতিতে-প্রগতিতে এমন কী সাংবাদিকতায়-সংবাদপত্রে। কবির ভাষায় ‘দেশের সীমানা নদীর ঠিকানা যেথা গিয়েছে হারিয়ে, সেথা সাতক্ষীরায় রূপময় ঘেরা বনানীর কোলে দাঁড়িয়ে’। সেই- সাতক্ষীরা, সেই ব্যাঘ্রতট, সেই বুড়ন- এর ঐতিহ্য হাজার বছরের। অবহেলায় তার উজ্জ্বলতা ম্লান হবার নয়। সাতক্ষীরার সংবাদপত্রের ইতিহাস বেশ প্রাচীন ও সমৃদ্ধ। সেই ১৯১৭ সালের মাসিক ‘মসজেদ’, ১৯২৫ সালের ‘আনন্দময়ী’, ১৩৩০ সনের ‘হেদায়েত’ ও পাকিস্তান আমলের সাপ্তাহিক ‘কাফেলা’ (১৯৬৮), দৈনিক হিসেবে ১৯৯২ সাল, ১৯৯৪ সালের ‘দৈনিক পত্রদূত’১৯৯৫ সালে ‘দৈনিক সাতক্ষীরা চিত্র’ সাতক্ষীরা সংবাদপত্রের পথিকৃত হয়ে আছে। এরপর একে একে ‘আজকের সাতক্ষীরা’ (১৯৯৯), ‘সাপ্তাহিক দখিনায়ন’ (১৯৮০),‘দৈনিক যুগের বার্তা’ সহ বিভিন্ন পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে। সর্বশেষ ‘দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরা’(২০১৮) এই দুর্গম যাত্রাকে রেখেছে সচল-সরব ও সন্দীপক। ঝুলন্ত খড়গের তলায় বসে এদেশে সাংবাদিকতা করতে হয়। বিশেষত দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাংবাদিক নিগ্রহ নজির বিহীন। ১৯৭১ সালে সাতক্ষীরার সাংবাদিক খন্দকার আবু তালিব হত্যা থেকে শুরু করে স.ম আলাউদ্দীন হত্যা (১৯৯৬), যশোরের শামছুর রহমান কেবল, সাইফুল ইসলাম মুকুট হত্যা, খুলনার মানিক সাহা, হুমায়ূন কবির বালু, হারুনার রশীদ হত্যা এবং ফরিদপুরের প্রবীর শিকদার নির্যাতন ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। অথচ এই সাতক্ষীরায় সাংবাদিকতায় গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে মাওলানা আকরাম খাঁ, তোহা খান, তোয়াব খান, আবেদ খান, আব্দুল ওহাব সিদ্দিকী, সিকানদার আবু জাফর, হাসান আওরঙ্গী, আবদুল মোতালেব, সুনীল ব্যানার্জী, অধ্যাপক আলী আহমদ। এরই ধারাবাহিকতায় এ কে এম আনিছুর রহমানের সম্পাদনায় ও তার সাংবাদিক সৈনিকদের সহযোগিতায় ‘সুপ্রভাত সাতক্ষীরা’ দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পন করলো অনেক কালো রাত্রি পার হয়ে। বাধা আসবে, নির্যাতন-নিগ্রহ আসবে, মান-সম্মান ডাকাতি হবে-তবু পেশাগত দায়িত্ব পালনে অটল থেকে লিখে যেতে হবে সত্য কথা, গণতন্ত্র, উন্নয়ন, শান্তি ও দুর্বৃত্তায়নের কথা। কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না সে যেই হোক, অপকর্ম করলেই অবগুন্ঠন উম্মোচন। মৃত্যু, ভয়, পীড়ন, জুলুম উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে। এ পেশায় পেছানোর পথ নেই। সাংবাদিক হলো জাতির দর্পন। সংবাদপত্র হলো থার্ড স্টেট। সুতারাং সমাজ, রাষ্ট্র, ও মানুষের জন্য তার দায়-দায়িত্ব অপরিসীম। সেই দায়িত্বের প্রতি সৎ থেকে দেশের কল্যাণে, দশের কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে নৈতিকতা, মানবতার প্রতি অটল থেকে। নিজের ক্ষতি হলেও স্বাধীনতা, সাম্য, সমৃদ্ধির স্বার্থে, মানব কল্যাণের স্বার্থে, প্রচলিত রীতি নীতি পরিবর্তনের স্বার্থে, সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে শত সঙ্কট সত্তে¡ও। সাংবাদিকতা হচ্ছে সাহসের সমাচার। বুদ্ধি-বিদ্যা সাহসের সমন্বয়ে অথৈ পানিতে নেমে নীলপদ্ম আহরণ করা। ‘জলে কুমির ডাঙায় বাঘ’ এই বৈরীতার মধ্যে তাকে কাজ করতে হয় সতর্ক থেকে। শত্রæর মধ্যে থেকে শত্রæকে মোকাবিলা করে জয় করতে হয় শত্রæর শত্রæতাকে। পরাজয়ে মৃত্যু। অতএব সাবধান, পথ বন্ধুর। শুভেচ্ছা ‘সুপ্রভাত সাতক্ষীরা’। সুপ্রভাত বাংলাদেশ বিনির্মাণে। 8,551,473 total views, 2,079 views today |
|
|
|