জানুয়ারি ২৬, ২০২৫
সনাক সাতক্ষীরা’র উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক ক্লিন এনার্জি দিবস ২০২৫’ উদযাপন
প্রেস বিজ্ঞপ্তি : জীবাশ্ম জ¦ালানিকে না বলুন, ক্লিন এনার্জি: টেকসই ভবিষ্যৎ’- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সহযোগিতায় সনাক সাতক্ষীরা প্রথম বারের মতো আন্তর্জাতিক ক্লিন এনার্জি দিবস ২০২৫ উদযাপন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে সনাক সাতক্ষীরা ২৬ জানুয়ারি সকাল ১০ টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধন এর আয়োজন করে। সনাক সভাপতি হেনরী সরদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সনাক সদস্য প্রফেসর আব্দুল হামিদ। ধারণা পত্র পাঠ করেন সনাক সদস্য ড. দিলারা বেগম ও ইয়েস সদস্য শিখা রানী দাশ। মানববন্ধনে সাথে একত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য প্রদান করেন সাংবাদিক ও সমাজ সেবক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, পরিবেশবিদ ও উন্নয়নকর্মী মধাব চন্দ্র দত্ত, সিডো’র নির্বাহী পরিচালক শ্যামল চন্দ্র বিশ^াস, সনাক সদস্য ডা. সুশান্ত কুমার ঘোষ। মানববন্ধনে সাথে একত্মতা প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, ‘অধিক মাত্রায় জীবাশ্ম জ¦ালানি ব্যবহারের ফলে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর মতো ক্ষতিকর গ্যাস বৃদ্ধি পেয়ে মানুষসহ অন্যান্য জীব বৈচিত্রের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। জ¦ীবাশ্ম জ¦ালানির বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে সুন্দরবন সংলগ্ন উপক‚লীয় অঞ্চলের মানুষ বাস্তু-ভিটা ছেড়ে শহরে স্থানান্তরিত হচ্ছে। সারা বিশে^ যেভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে জ¦ীবাশ্ম জ¦ালানির ব্যবহার দ্রুত কমিয়ে এনে নবায়নযোগ্য জ¦ালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। আর এজন্য আইন ও নীতিমালা সংস্কার করতে হবে, সে অনুযায়ী ক্লিন এনার্জির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে এবং এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।’ মানববন্ধনে সনাক সাতক্ষীরা পক্ষ থেকে টিআইবি প্রদত্ত ১২ দফা সুপারিশমালা তুলে ধরেন। সেগুলো হলো: ১. জীবাশ্ম জ¦ালানি নির্ভর বিদ্যমান জ¦ালানি মহাপরিকল্পনা ‘ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি-২০২৩)’ অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং জীবাশ্ম জ¦ালানির ব্যবহার হ্রাস এবং জ¦ালানি মিশ্রণে নবানয়নযোগ্য জ¦ালানির পরিমাণ বৃদ্ধি- এমন মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি ও কার্যকর করতে হবে। এক্ষেত্রেÑ স্বার্থের দ্ব›দ্বমুক্ত বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে এবং নাগরিক সমাজের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় নীতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রæতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে; জীবাশ্ম জ¦ালানি নির্ভর প্রকল্পে অর্থায়ন ও এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে কমানোর জন্য সময়াবদ্ধ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে; মহাপরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং জীবন-জীবিকা, প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে; নবায়নযোগ্য জ¦ালানির প্রসারে একটি স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সময়াবদ্ধ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে; সম্ভাবনা যাচাই সাপেক্ষে উৎস ভেদে (সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুৎ, ওয়েস্ট টু এনার্জি) নবায়নযোগ্য জ¦ালানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে; ২০৪০ সালের মধ্যে মোট জ¦ালানির ৪০ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ জ¦ালানি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। ২. জ¦ালানি খাতে নীতি করায়ত্ত বন্ধ এবং স্বার্থের দ্ব›দ্ব প্রতিরোধসহ এ খাত সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়ায় জাবাবদিহি নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে। ৩. পরিবেশ আইনের আওতায় বিধিবদ্ধ করে সকল প্রকার জ¦ালানি এবং বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ত্রæটিমুক্ত পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও যাচাই নিশ্চিত করতে হবে এবং পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান এবং দূষণ ও পরিবেশ-বিষয়ক তদারকিতে স্বচ্ছ ও যথাযথপ্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। ৪. নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে রূপান্তর-সংক্রান্ত কার্যক্রমে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ¦ালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (¯্রডো)Ñকে একটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা প্রদানসহ এর কারিগরি, জনবল এবং অবকাঠামোগত সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। ৫. জ¦ালানি খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টিসহ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)Ñএর আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। জ¦ালানির দাম নির্ধারণসহ প্রতিষ্ঠানটির ম্যান্ডেট অনুসারে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। ৬. আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পাদিত জ¦ালানি খাতের সকল প্রকল্প প্রস্তাব এবং চুক্তির নথি প্রকাশ করতে হবে। ৭. জ¦ালানি ও বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ক্রয় সম্পাদনে উন্মুক্ত-পদ্ধতি ব্যবহারসহ জাতীয় ক্রয় আইন ও নীতি পরিপূর্ণভাবে প্রতিপালন করতে হবে। এ খাতের সকল জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রয় সম্পাদনে ই-জিপি পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ৮. পরিবেশ সংবেদনশীল এলাকায় নির্মীয়মাণ কয়লা ও এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থগিত করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ কৌশলগত, সামাজিক ও পরিবেশগত সমীক্ষা সম্পাদন সাপেক্ষে অগ্রসর হতে হবে। ৯. এনডিসি’র অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বাতিল হওয়া কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিতে সোলারসহ নাবায়নযোগ্য জ¦ালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। ১০. স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করে প্রকল্পের পরিকল্পনা, চুক্তির শর্ত নির্ধারণ, অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। ১১. নবায়নযোগ্য জ¦ালানি প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য তহবিল বরাদ্দ এবং গবেষণা ও শিল্পখাতের মধ্যে সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। ১২. নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে রূপান্তর প্রক্রিয়ায় তরুণ সমাজের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে হবে। 9,068,278 total views, 700 views today |
|
|
|