Site icon suprovatsatkhira.com

হারিয়ে যাচ্ছে ইছামতিতে বাংলাদেশ-ভারতের প্রতিমা বিসর্জন মিলন মেলা

মীর খায়রুল আলম: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। প্রতিবছর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় বিজয়া দশমীতে। এই দিনটিতে আর্ন্তজাতিক সীমানার বয়ে চলা ইছামতি নদীতে একসাথে প্রতিমা বিসর্জন করেন বাংলাদেশ-ভারতের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বিগত বছরগুলোতে প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে ইছামতির দুপাড়ে বাংলাদেশ ও ভারতের লাখো মানুষের উপস্থিতিতে বসতো শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মিলন মেলা। বছরে এই একটি দিনে সীমানার গন্ডি এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধনে একসাথে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠত দু’দেশের লাখো মানুষ। ইছামতি নদীর বুক চিরে ভাসতো বাংলাদেশ ও ভারতের হাজারও নৌকা, ট্রলার, লঞ্চ। পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই এই দিনটিতে কয়েক ঘন্টার জন্য ভারতের মানুষ বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের মানুষ ভারতে প্রবেশ করার সুযোগ ছিল। বেড়ানো, কেনাকাটা এবং ভিন্ন দেশে থাকা আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করে সন্ধ্যার আগেই সবাই আবার ফিরে যেতো যার যার দেশে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ইছামতি নদীর বুকে ভেসেছিল সবশেষ সৌহাদ্যপূর্ন মিলন মেলার তরী। পরবর্তী আইনি জটিলতার কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে যায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মিলনমেলা। তবুও প্রতিবছর দূর্গা পূজা আসলেই কাক্সিক্ষত সেই মিলনমেলার অপেক্ষা করতে থাকে দু’দেশের মানুষ।
এদিকে গত ২৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিষদের সভায় জানানো হয় এবছর সারাদেশের ন্যায় দেবহাটায় ২১টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গা পূজা উৎসব। প্রতিটি মন্ডপে রাখা হবে সিসি ক্যামেরা ও স্বেচ্ছাসবক টিম। নারী পুরুষের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা। মন্ডপে যাওয়া আসার আলাদা রাস্তা। সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রাখতে মন্ডপে রাখা হবে আলাদা জেনারেটরের ব্যবস্থা। প্রধান সড়কগুলোতে যানজট সৃষ্টি না হয় সে জন্য গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে।
দেবহাটা উপজেলার বাসিন্দা গোপাল কুমার দাশ জানান, বিজয় দশমীর দিনে ছোটবেলা বিকাল হলেই ছুটে যেতাম নদীর পাড়ে মিলন মেলা দেখতে। কিন্তু সেটি বন্ধ হওয়ায় আমরা মিলন মেলার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। যদি প্রশাসনিক ভাবে মেলাটি চালু করা যায় তাহলে বাঙ্গালীর এই ঐতিহ্য টিকে থাকবে না হলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এই উৎসবটি ভুলে যাবে।
উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি চন্দ্র কান্ত মল্লিক জানান, দেবহাটা উপজেলার প্রতিটি মন্ডপে নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে দুর্গা পূজা সম্পন্ন হবে আশা করি। বিগত দিনগুলোতে দেবহাটা উপজেলায় কোন বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করি এবারও আমরা ভাল ভাবে এই উৎসব শেষ করতে পারব। প্রশাসন আমাদের সাথে সব সময় যোগাযোগ করছেন। আমরা সকলের সহযোগিতায় চাই। তিনি আরো জানান, বিজয় দশমীর দিন ঘিরে ইছামতি নদীতে যে মিলন মেলা হত তা দেশ বিভাগের আগে থেকে চলে আসছে। কয়েক বছর সেটি বন্ধ হওয়ায় মিলন মেলার কথা আমরা ভুলতে বসেছি।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান জানান, ইছামতি নদীতে যে মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল তা কয়েক বছর বন্ধ রয়েছে। এবছরও মিলন মেলা হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। উভয় দেশের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version