Site icon suprovatsatkhira.com

সাতক্ষীরা নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

মো. মাজহারুল ইসলাম : তথ্য জালিয়াতি করে চাকরি, শিক্ষকদের পুরস্কারের টাকা ও খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের নামে অতিরিক্ত শাখা খুলে কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক গাজীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি যশোর শিক্ষা বোর্ডে তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা উঠে এসেছে। অভিযোগের সত্যতার প্রেক্ষিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের আদেশে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এর বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিঅ-৬/৪৭৫২/৮৭ নং স্মারকে সাতক্ষীরা নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতিকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন।


যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এর (বিঅ-৬/৪৭৫২/৮৭) নম্বর স্মারক সূত্রে জানা গেছে, গত ০৫-১২-২০২৩ তারিখে সাতক্ষীরা নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক কবীর আহমেদ প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালেক গাজীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এর বিদ্যালয় পরিদর্শক বরাবর একটি আবেদন করেন। উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে ২৪-১২-২০২৩ তারিখে বিঅ-৬/৩৭.১১.৪০৪১.৫০১.০১.৬.২০.১৫৫১১ নং স্মারকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্তপূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুরোধ করা হয়। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী অফিসার শামীম ভূইয়ার তদন্তে উঠে আসে আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা। তদন্ত শেষে গত ২০ ফেব্রæয়ারি ২০২৪ তারিখে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী অফিসার শামীম ভূইয়া ০৫.৪৪.৮৭৮২.০০০.১০.০০৫.২১-২৪৭ নং স্মারকে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এর চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন (সংযুক্ত ১৫ ফর্দে) প্রেরণ করেন। সেই তদন্ত প্রতিবেদনসহ যশোর শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনার কাগজ দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরার হাতে এসেছে।

ওই তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিগত ০৬-০২-১৯৯৯ তারিখে স্থানীয় দৈনিক ‘সাতক্ষীরা চিত্র’ প্রত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং ২৯-০৫-১৯৯৯ তারিখে কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবং ৩০-০৫-১৯৯৯ তারিখে ইস্যুকৃত নিয়োগাদেশ মোতাবেক মোঃ আব্দুল মালেক গাজী ২০-০৬-১৯৯৯ তারিখে কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক পদে ১ম যোগদান করেন এবং দাপ্তরিক সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ০১-০৭-২০০১ তারিখে এমপিও ভুক্ত হন এবং তাঁর ইনডেক্স নং ৫১৫১০০ নির্ধারিত হয়। তবে কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক হিসাবে নিয়োগকালীন অসংগতি দেখা যায়। যারমধ্যে-
ক) ২৪-১০-১৯৯৫ এর জনবল কাঠামোতে উলেখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হয়নি।
খ) নিয়োগকালীন সময়ে ১৯৯৯ সনে মোঃ আব্দুল মালেক গাজী স্নাতক ৩য় শ্রেণী প্রাপ্ত ছিলেন।


গ) কম্পিউটার শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্তির পূর্বে Computer point নামের যে প্রতিষ্ঠান হতে (২৬ ১৯৯৮ – ৩০ ডিসেম্বর ১৯৯৮) কম্পিউটার প্রশিক্ষন গ্রহণ করেছিলেন মর্মে সনদপত্র দাখিল করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানটি তখন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত ছিল কি না সনদপত্রে সেটির উল্লেখ নেই।


ঘ) মোঃ আব্দুল মালেক গাজী, কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয় এ ১ম নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০-০৬-১৯ তারিখে। আর জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী (নট্রামস), বগুড়া হতে ২ মাস মেয়াদী কম্পিউ কোর্স সম্পন্ন করেছেন ২৩-১০-১৯৯৯ হতে ২২-১২-১৯৯৯ তারিখ পর্যন্ত।
ঙ) কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু তাহের কর্তৃক ২৬-০১-২০০৩ তারিখে স্বাক্ষরিত চিঠিতে মোঃ আব্দুল মালেক গাজী এর শিক্ষাগত যোগাতার স্থানে বি এ ৩য় বিভাগ-৯৩ এবং কম্পিউটার সম্পন্ন ১৯৯৯ উল্লেখ করা রয়েছে। সে বিবেচনায় (২৬ মে ১৯৯৮ – ৩০ ডিসেম্বর ১৯৯৮) কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সনদপত্রের সঠিকতা প্রশ্নবিদ্ধ মনে হয়েছে।

চ) বিদ্যালয় পরিদর্শক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর মহোদয় কর্তৃক স্বাক্ষরিত স্মারক নং- বিঅ/১৭৮/২১৪৯(৭) তাং ৩১-০৭-২০০২ খ্রিঃ পত্রের মাধামে কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১-১-২০০১ তারিখ হতে কম্পিউটার বিষয় খোলার অনুমতি প্রদান করা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট শিক্ষক মোঃ আব্দুল মালেক গাজী নিয়োগ লাভ করেন ২০-০৯-১৯৯৯ খ্রিঃ তে। অর্থাৎ বিষয় খোলার অনুমতির নির্ধারিত তারিখ হতে ১ বছর ৬ মাস আগেই তিনি নিয়োগ লাভ করেন এবং ০১-০৭-২০০১ খ্রিঃ তারিখ হতে এমপিও ভুক্ত হন। বিঅ/১৭৮/২১৪৯(৭) তাং ৩১-০৭-২০০২ খ্রিঃ পত্রে মোঃ আব্দুল মালেক গাজীকে ২৪-০৮-২০০০ তারিখের পূর্বে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে মর্মে বিশেষ দ্রষ্টব্য আকারে উল্লেখ করা হয়েছে। ২৪-০৮-২০০০ তারিখে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/কর্মচারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার ৯নং শর্তে এস এস সি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত কোন ৩য় বিভাগ/শ্রেণীধারীকে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া যাবে না এবং তিনি এমপিও প্রাপ্তির জন্য বিবেচ্য হবেন না।

যেহেতু মোঃ আব্দুল মালেক গাজী ২৪-০৮-২০০০ তারিখের পূর্বে নিয়োগ প্রাপ্ত সেহেতু তার জন্য ২৪-১০-১৯৯৫ এর জনবল কাঠামো প্রযোজ্য হবে। সেখানে সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ২য় শ্রেণীর ডিগ্রী। জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী (নট্রামস) বা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান হতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। সকল পরীক্ষায় ন্যূনতম ২য় বিভাগ থাকতে হবে। নিয়োগকালীন সময়ে ১৯৯৯ সনে মোঃ আব্দুল মালেক গাজী স্নাতক- ৩য় শ্রেণী (১৯৯৩ সন) প্রাপ্ত ছিলেন। তিনি ২০০৫ সনে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইম্প্রুভমেন্ট পরীক্ষা দিয়ে স্নাতক পর্যায়ে সিজিপিএ ৩.১০ প্রাপ্ত হন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় রেগুলেশনসমূহ এর ২১নং ধারায় ডিগ্রী পাস পরীক্ষায় ৩য় বিভাগ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীগণ পরীক্ষা পাসের পরবর্তী বৎসর মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং এ সুযোগ শুধু একবার পাবে উল্লেখ করা আছে। রেগুরেশনটি ৩ অক্টোবর ১৯৯৩ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক এর প্রথম সভায় সুপারিশকৃত (রেজুল্যুশন নং-৫১) এবং ২১ অক্টোবর, ১৯৯৩ইং তারিখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক এর দ্বিতীয় সভায় অনুমোদিত (রেজল্যুশন নং-১১)। এ বিধি অনুযায়ী ১৯৯৩ সনে বিএ ৩য় বিভাগ প্রাপ্ত মোঃ আব্দুল মালেক গাজী এর ২০০৫ সনে মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ ছিল না। মোঃ আব্দুল মালেক গাজী, প্রধান শিক্ষক, নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় নিজের ০৬-১০-২০২০ তারিখে স্বাক্ষরিত চিঠিতে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্যে বিএড-২য়-০৮ লিপিবদ্ধ আছে তবে তিনি বিএড এর যে সনদপত্র উপস্থাপন করেছেন সেখানে বিএড পাশের সন ২০০৭ উল্লেখ আছে যা নিজের প্রদত্ত তথ্যের সাথে মিলে না।


ছ) সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের নাম মোঃ আব্দুল মালেক গাজী তবে এমপিও আদেশে তাঁর নাম শুধুমাত্র MD ABDUL MALIK. Index No 515100 উল্লেখ আছে গাজী নেই। মাঃ ১১/বিবিধ-৫/৯৪ (অংশ-৬) ১৭১(২) শিক্ষা তারিখঃ ০৭-০২-২০০১ অনুযায়ী ৯নং শর্তটি প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ তারা প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এম.পি.ও প্রাপ্য হইবেন। তবে যে সব ৩য় শ্রেনী প্রাপ্ত শিক্ষক নিয়মনীতি পরিপন্থী উপায়ে অথবা অবৈধ উপায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন পরীক্ষান্তে তাদেরকে পরবর্তী এমপিও তালিকা হতে বাদ দেওয়া হবে। শাঃ ১১/৬/২১/২০০২/৩৪৭(১৩) তারিখঃ ০২ এপ্রিল ২০০৩ ইং অনুযায়ী ২-৪-২০০৩ এর পূর্বে শিক্ষা জীবনে একটি পরীক্ষায় ৩য় বিভাগ প্রাপ্তদের কম্পিউটার শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ নেই।

২) স্মারক নং সেকায়েপ/কোয়ালিটি/শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উদ্দিপনা/১০/২০১৪/৪৮২ তারিখঃ ১৯/০৬/২০১৪ মোতাবেক নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অনুকূলে উদ্দীপনা পুরস্কারের এক লক্ষ টাকা সেকায়েপ/কোয়ালিটি ইন্সটিটিউট ইনসেন/৬০/২০১০/৫৯৪(৪) তারিখঃ ২৫ জুন ২০১৪ মোতাবেক শিক্ষকদের মাঝে বণ্টন করা হয়নি। মোঃ আব্দুল মালেক গাজী ৯/৬/২০১৪ তারিখে নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের কাজে ব্যবহারের সর্ব্বসম্মত সিদ্ধান্তের যে রেজুলেশন উপস্থাপন করেছেন তা ১৮/০১/২০০১ তারিখে অনুষ্ঠিত সভার। রেজুলেশনে সুনির্দিষ্ট কোন উন্নয়নের কথা আনা যায়নি। ঘটনা ২০১৪ সনের, তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত কোন প্রমাণক উপস্থাপন করা হয়নি। প্রাপ্য শিক্ষকদের মতামত আমলে না নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্যয় দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অধিকাংশ শিক্ষক তদন্তকালে অভিযোগ করেছেন।

৩) স্মারক নং: ১৫৬/২ তাং ২৮/০১/২০০৩ ইং মাধ্যমে তৎকালীন জেলা শিক্ষা অফিসার ছারিয়া খানম মোঃ আব্দুল মালেক গাজী, সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার), কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুচক নং ৫১৫১০০ কে সকল পরীক্ষায় ২য় বিভাগে পাশ উল্লেখ করে তৎকালীন ২৫৫০ টাকার স্কেলের পরিবর্তে ৩৪০০ টাকার স্কেলে সরকারী বেতন ভাতার অংশ পাওয়ার সুপারিশের চিঠিতে শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য সঠিক ছিল না। তখন মোঃ আব্দুল মালেক গাজী এর বিএ ৩য় শ্রেণী ১৯৯৩ ছিল। ২৬/১/২০০৩ তারিখে কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু তাহের এর স্বাক্ষর এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রতিস্বাক্ষর করা চিঠিতে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা বি এ ৩য় শ্রেণী-৯৩ উল্লেখ রয়েছে এবং মোঃ আব্দুল মালেক গাজী কর্তৃক সরবরাহকৃত সনদপত্রে দেখা যায় তিনি ২০০৫ সনে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইম্পুভমেন্ট পরীক্ষা দিয়ে স্নাতক পর্যায়ে সিজিপিএ ৩.১০ প্রাপ্ত হন। উক্ত বিবেচনায় ২০০৩ সনে মোঃ আব্দুল মালেক গাজী ৩৪০০ টাকার স্কেল পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না।

৪) বিদ্যালয়ে ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখা খোলার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল মালেক গাজী জানান ম্যানেজিং কমিটির ১৭/২/২০২২ তারিখের সভায় (বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণীর প্রতিটি শ্রেণীতে ‘খ’ শাখা আছে এবং বর্তমানে ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখা খোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কারণ নিয়ম ৪০ জনে ১জন শিক্ষক আমাদের বিদ্যালয়ে প্রত্যেক ক্লাসে প্রায় ২০০ (দুইশত) জন করে শিক্ষার্থী। গড় ১৬০ জন শিক্ষার্থী প্রতি ক্লাশে থাকলে চারটি শাখা চালু রাখা সম্ভব) সিদ্ধান্ত নিয়ে বিদ্যালয়ে ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখা চালু করেছেন। তবে বোর্ডের কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। ২৯/১/২০২৪ তারিখে সরেজমিনে তদন্তকালে ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ১০ম শ্রেণীতে ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখা এবং ৮ম (৭৭ জন) ও ৯ম শ্রেণীতে ‘গ’ শাখা চালু রয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখা খোলা হলেও সেখানে সর্বাধিক মেধাবীদের নিতে হবে এবং শুধুমাত্র খন্ডকালীন শিক্ষকদের দিয়ে পাঠদান করাতে হবে এবং এমপিও ভুক্ত শিক্ষকরা ক্লাস নিতে পারবেন না এমন কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখার ক্লাস রুটিন, এমপিও ভুক্ত শিক্ষক, খন্ডকালীন শিক্ষক এবং ছাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্লাস রোল (১-৬০) সহ সর্বোচ্চ মেধাবী ছাত্রীদের নিয়ে ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখা গঠিত এবং সেখানের কোচিং সহ সকল ক্লাশ বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষকগণ নেন। ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখাতে বিদ্যালয়ের এমপিও ভুক্ত নিয়মিত শিক্ষকবৃন্দের পাঠদানের কোন অনুমতি নেই। এমপিও ভুক্ত নিয়মিত শিক্ষকবৃন্দ শুধুমাত্র ‘ক’ ও ‘খ’ শাখার অপেক্ষাকৃত দূর্বল ছাত্রীদের পাঠদান করান। এমপিও ভুক্ত নিয়মিত শিক্ষকবৃন্দ ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখার মেধাবী ছাত্রীদের ভালো করে পাঠদান করাতে পারেন না বলে প্রধান শিক্ষক তাদের অপমান করেন মর্মে কোন কোন শিক্ষক দুঃখ প্রকাশ করেন। যেখানে ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখার ক্লাশ পরিচালিত হয় সেখানে সাধারণ শিক্ষকদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকায় ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখার ছাত্রীরা এমপিও ভুক্ত নিয়মিত শিক্ষকদের সম্পর্কে জানতে ও পারে না। তদন্তকালে ১০ম শ্রেণীর ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখার ১জান ছাত্রীও সহকারী প্রধান শিক্ষক সেলিমুল ইসলামের নাম বলতে পারেনি, অথচ তারা ১৮ জন খন্ডকালীন শিক্ষকের নাম বলে দিতে পারছে। এটা এমপিও ভুক্ত নিয়মিত শিক্ষকবৃন্দের জন্য অসম্মানজনক বটে। ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখার ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর (১-২) জন এবং ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণীর (৫-৭)জন ব্যতীত সবাই কোচিং করে। কোচিং সময় সকাল ৮.০০ হতে ৯.৪৫ মি. কোচিং ফি ৬ষ্ঠ শ্রেণী ৬০০ টাকা এবং (৭ম-১০ম) ৭০০ টাকা করে। ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখার কোচিং বাবদ আদায়কৃত টাকা হতে খন্ডকালীন শিক্ষকদের বেতন জন প্রতি (৩০০০-৬০০০) পরিশোধ করা হয় অবশিষ্ট সমুদয় অর্থ প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল মালেক গাজী এককভাবে ভোগ করেন।

৫) ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তি ফি ১২০০ টাকা সেশন চার্জ ১২০০ টাকা বেতন (১৫০-২৫০) এবং পরীক্ষার ফি বাবদ আদায়কৃত অর্থ ও ব্যয়ের হিসাব প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারী মেইনটেইন করেন, পৃথক কোন অর্থ কমিটি নেই।
৬) প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল মালেক গাজী জানান ম্যানেজিং কমিটির ১০/১/২০২৩ তারিখের সভায় ২৫ জন খন্ধকালীন শিক্ষকের মেয়াদ ২০২৮ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। এ বিষয়ে বোর্ডের অনুমতি নেয়া হয়নি। ২৫ জন খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের জন্য কোন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি যা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধামে নেওয়া হয়নি। খন্ডকালীন শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তাদের কেউ পড়ালেখা শেষ করেছেন কেউ ছাত্র কেউ কোচিং সেন্টারের শিক্ষক আছেন। তাদের মাসিক বেতন (৩০০০-৬০০০)। পাঠদানের সময় সকাল ৮.০০ হতে ৯.৪৫ কোচিং এবং ১০.০০ হতে ৪.১৫ মি. পর্যন্ত নিয়মিত ক্লাশ। খÐকালীন শিক্ষকরা শুধুমাত্র ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখায় এবং ৩য়-৫ম শ্রেণীর ছাত্রীদের ক্লাশ নেন।
৭) কিশোরী টয়লেট বিদ্যালয়ের মহিলা শিক্ষকরা ব্যবহার করেন তবে বিশেষ সময়ে শিক্ষার্থীরাও ব্যবহার করে। কমফোর্ট জোন টি বন্ধ আছে।
৮। নতুন তৈরীকৃত ভবন যেখানে ৬ষ্ঠ হতে ১০ শ্রেণীর ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখার ক্লাশ হয় সেখানে ‘ক’ ও ‘খ’ শাখার ছাত্রীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং উভয় ভবনের মাঝের প্রবেশ পথ তালাবদ্ধ থাকে। প্রধান শিক্ষক জানান খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের ফলে জেলার বেসরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের মধ্যে (২০১৪-২০২৩) সময়ে ০৮ আট বার ১ম হয়েছে। অভিযোগকারী কবীর আহমেদকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে শোকজ, একাধিকবার স্কুল প্রদত্ত বেতন বন্ধ এবং সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযোগকারী কবীর আহমেদ জানান তিনি সাময়িক বরখাস্ত আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষকরা জানান প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল মালেক গাজী বিগত ৪ বছর যাবৎ তাদের স্কুল প্রদত্ত বেতন বন্ধ রেখেছেন এবং এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদেরকে খন্ডকালীন শিক্ষকদের তুলনায় ছোট করে দেখেন এবং অপমান সূচক মন্তব্য করেন। মহিলা শিক্ষকদের কমনরুমের সিসি ক্যামেরা সর্বদা চালু রাখায় তারা মাঝে মধ্যে বিব্রত অবস্থার সম্মুখীন হন।
এ তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে গত ২৪-০৪-২০২৪ তারিখে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এর চেয়াম্যানের নির্দেশক্রমে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এর বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিঅ-৬/৪৭৫২/৫৫ নং স্মারকে সাতক্ষীরা নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালেক গাজীকে কারণ দর্শানো জবাব দাখিল করতে বলা হয়।
এছাড়া ওই পত্রে বলা হয়, তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে মো. কবীর আহমেদ এর দাখিলকৃত অভিযোগ সমূহের মধ্যে অভিযোগের সত্যতা প্রতীয়মান হওয়ায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক গাজীর বেতন বন্ধের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকা এর মহাপরিচালক বরাবর কেন পত্র প্রেরণ করা হবে না তার জবাব পত্র জারীর ১৫ দিনের মধ্যে প্রদান করার জন্য বলা হয়।
পরবর্তীতে সাতক্ষীরা নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালেক গাজী বিঅ-৬/৪৭৫২/৫৫ নং স্মারকের জবাব দাখিল ও কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হলে গত ১০ সেপ্টেম্বর যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের আদেশে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এর বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিঅ-৬/৪৭৫২/৮৭ নং স্মারকে সাতক্ষীরা নবারুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতিকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version