সমীর রায়, আশাশুনি : অতিবৃষ্টি ও প্লাবিত অন্যান্য ৬ ইউনিয়নের পানিতে ডুবে আছে আশাশুনির কাদাকাটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম। প্রায় ৪৫ দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে থাকা ৩ হাজার পরিবারের প্রায় ১৩ হাজার মানুষ চরম মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে। ৯০ ভাগ মাটির বসতঘর ও গোয়াল ঘর পড়ে যাওয়ায় বৃদ্ধ, নারী-শিশু এবং গবাদি পশু নিয়ে চরম দুর্বিপাকে পড়ে থাকা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহŸান জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা। সুপেয় পানির অভাব ও দীর্ঘদিন ধরে অনাহারে অর্ধাহারে থাকা মানুষগুলো যেমন সরকারি বেসরকারি কোন সাহায্য না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তেমনি পানি নিস্কাশনের একমাত্র পথ মিত্রতেঁতুলিয়া ¯øুইচ গেট ব্যবস্থাপনা নিয়ে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে প্লাবিত এলাকার সাধারন মানুষের মধ্যে।
সোমবার সরজমিনে গেলে বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম জানান, ইউনিয়নের কাদাকাটি, পারকাদাকাটি, যদুয়ারডাঙ্গা, কবিরখনি, ট্যাংরাখালি, কর্চাখালি, ঝিকরা, তালবাড়িয়া, পূর্বকাদাকাটি, পারখেজুরডাঙ্গা গ্রাম গুলো পানিতে তলানো প্রায় ৪৫ দিন।, মসজিদ, মন্দির, স্কুল, মাদ্রাসা বসতঘর, গোয়ালঘর সহ সর্বত্র পানি থৈ থৈ করছে। মানুষের রান্না করে খাওয়ার উপায় নেই, ল্যাট্রিনে যাওয়ার উপায় নেই। গবাদি পশুর খাবার নেই। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাতয়াতে ভেলা ও নৌকা ছাড়া উপায় নেই। তাই বাড়ির বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, শিশুদের বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। গবাদি পশু নিয়ে সাধারণ গৃহস্থরা আরও বিপদে। গরু গুলো হয় রাস্তার উপর না হয় অন্যত্র পাঠানো হয়েছে। রাস্তাঘাট, মৎস্য ঘেরের বাঁধ সব পানির নীচে থাকায় ঘাস লতাপাতা না পেয়ে অনেক গবাদি পশু মারা যাচ্ছে। এসব শতশত ছাগল-ভেড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্লাবিতরা। পানি নিস্কাষনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সহ বন্যার্তদের জন্য শুকনা খাবার ও গবাদি পশুর গোখাদ্যের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
পানিবন্দী মানুষের জন্য সরকারি কোন সাহায্য করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহাগ খান জানান, কাদাকাটি ইউনিয়নের প্লাবিত মানুষের জন্য ১২ মে.টন চাউলের আবেদন করা হয়েছে। সরকারিভাবে কোন আশ্রয়কেন্দ্র আপাতত খোলা না হলেও ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রবিবার বিকালে হলদেপোতা ব্রীজ এলাকায় ৫০ প্যাকেট খাবার বিতরণ করা হয়েছে। অবিলম্বে মাটির ঘরবাড়ি বিনষ্টের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে পাঠানো হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক দিন ৩ হাজার লিটার করে পানি প্রদান করা হচ্ছে। চাহিদা বাড়লে আরও বেশি করে দেওয়া হবে।
এদিকে দুপুরে আশাশুনির কাদাকাটি, কুল্যা, সাতক্ষীরার ধুলিহর, তালার খেশরা ও খলিশখালী ইউনিয়নের বন্যার পানি মরিচ্চাপ নদীতে নিস্কাশিত হওয়ার একমাত্র পথ মিত্র তেঁতুলিয়া ¯øুইচগেট ঘুরে দেখা গেছে জোয়ারের পানি গেট দিয়ে প্রবল বেগে ভেতরে ঢুকছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গেটের একটি নাট-বল্টু পড়ে যাওয়ায় আবার পানি ঢুকছে। গত ৪ দিন ধরে জোড়া-তালি দিয়ে চললেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কর্মকর্তা এখানে আসেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ইচ্ছাকৃতভাবে নদীর জোয়ার তুলে মাছ ধরছে কিছু মানুষ।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পোল্ডারে দায়িত্ব প্রাপ্ত এসও জহিরুল ইসলাম বলেন- গেটটি এখনও সংস্কারাধিন পর্যায়ে। এলাকাবাসীর চাপের মুখে আপাতত পানি সরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। নাটবল্টু খুলে যাওয়ার ঘটনা শোনার পর ঠিকাদারের লোককে দ্রæত সারিয়ে নিতে বলা হয়েছে। আশাকরি পরবর্তী ভাটায় ঠিক হয়ে যাবে।
ইউপি চেয়ারম্যান দিপংকর সরকার দিপ বলেন, কাদাকাটি ইউনিয়নের সৈয়দপুর ট্রাষ্টের খাল, হলদেপোতা খাল, মোকামখালি খাল, কাদাকাটি বিল ফিসারি, কামারখালি খাল, জালাই খাল, কোদালশাহ খালে নেটপাটা দিয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত করা হ্েচ্ছ। ৬টি ইউনিয়নের জল এসে মিত্র তেঁতুলিয়া ¯øুইচ গেট দিয়ে মরিচ্চাটে নেমে যায়। খাল গুলো উন্মুক্ত করতে একাধিকবার প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হলেও প্রতিশ্রæতি ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি। এ খালগুলি যদি উন্মুক্ত করে খনন করা যায় তবে জলাবদ্ধতা নিরসনের স্থায়ী সমাধান হবে বলে আমি মনে করি। প্লাবিত মানুষের পক্ষ থেকে তিনি অবিলম্বে পানি নিস্কাষনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, পানি বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া সহ বন্যার্তদের জন্য শুকনা খাবার ও গবাদি পশুর গোখাদ্যের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।