সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকার জন্য পৃথক উপকূলীয় বোর্ড গঠন ও বাজেটে থোক বরাদ্দের দাবীতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি। সোমবার (৮মে ২০২৩) বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের মাধ্যমে উক্ত স্মারকলিপি প্রদান করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, সারাদেশে উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নের রোলমডেলে পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পদ্মার এপারের জেলাগুলোতেও উন্নয়নের জোয়ার বইতে শুরু করেছে। কিন্তু সেই উন্নয়ন যশোর-নড়াইল-খুলনা-বাগেরহাট পর্যন্ত এসে পৌছালেও সাতক্ষীরা জেলা এখনো অনেকটা দূরে রয়েছে। সাতক্ষীরা জেলায় দৃশ্যমান উন্নয়নের গতি খুবই ধীর।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হযেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত এই এলাকায় শিক্ষার হার কম। দরিদ্রতার হার দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে বিভিন্ন সামাজিক অর্থনৈতিক মৌলবাদসহ নানা সংকটে জর্জরিত এই এলাকা। ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে এই এলাকাকে এগিয়ে নিতে ইতোমধ্যে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হযেছে, সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ, বাইপাস সড়ক, ম্যাটস, টিটিসিসহ দৃশ্যমান বহু প্রকল্প ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসন ও নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙন রোধে কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এবং চলমান রয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ উন্নয়ন টেকসই হচ্ছে না। ফলে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বহু মানুষ কর্মহীন বেকার হয়ে অন্যত্রে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
স্মারকলিপিতে দেশের চলমান উন্নয়নের ¯্রােতধারায় এই এলাকাকে যুক্ত করতে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সময়োচিত হস্তক্ষেপে সাতক্ষীরা জেলাকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে ‘নাভারণ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেল লাইন নির্মাণ’ এবং ‘সাতক্ষীরা থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত ব্রডগেজ রেল লাইন নির্মাণ’ প্রকল্পের পিডিপিপি দুটি ইআরডিতে পাঠানো হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে গত ২৫ অক্টোবর ২০২২ তারিখে সাতক্ষীরার বসন্তপুর নৌবন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর ২০২২ তারিখে সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে। সাতক্ষীরা অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব অনুমোদনের পর ৩১ আগস্ট ২০২২ তারিখে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি’র চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে সম্ভাব্য এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সাতক্ষীরায় আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ১২ অক্টোবর ২০২১ তারিখে সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রকল্প প্রকৌশলীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় সরকার গৃহীত এসব প্রকল্পের এখনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
স্মারলিপিতে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আগামী বাজেটে এসব প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দসহ পৃথক উপকূলীয় বোর্ড গঠন ও বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হেেয়ছে।
স্মারকলিপিতে স্মাক্ষর করেছেন, সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক অ্যাড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল এবং সদস্য সচিব অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা সরকারী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর আব্দুল ওয়াহেদ, জেলা জাসদের সভাপতি ওবায়দুস সুলতান বাবলু, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুণ অর রশিদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. ওসমান গনি, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ইদ্রিশ আলী, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নুর খান বাবলু, উদীচীর সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান, জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি অ্যাড. আল মাহামুদ পলাশ, উন্নয়নকর্মী অ্যাড, মুনির উদ্দীন, জিএম মনিরুজ্জামান, নদী বাাঁও আন্দোলনের আদিত্ব মল্লিক, কলারোয়া উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাড. আব্দুল্লা হাবিব, ভূমিহীন নেতা আব্দুস সামাদ, ভূমিহীন বাস্তহারা নেতা আব্দুস সাত্তার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক মুনসুর রহমান, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম হোসেন, দলিত পরিষদের গৌরপদ দাস প্রমুখ। স্মারকলিপি প্রদানের সময় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। (প্রেস বিজ্ঞপ্তি)।