Site icon suprovatsatkhira.com

শ্যামনগরে মামলা তুলে না নেওয়ায় বাদিকে হত্যার হুমকি

নিজস্ব প্রতিনিধি: মামলা তুলে না নেওয়ায় বাদি ও তার পরিবারের সাত সদস্যকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। প্রেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের গোয়ালঘরসহ বসতঘরের একাংশ। গুরুতর জখম পাঁচজনকে শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। রবিবার বিকেলে ও সোমবার ভোরে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি ইউনিয়নের গোনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে গোনা গ্রামের যুধিষ্টির মÐলের বাড়িতে একের পর এক হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদ ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে স্থানীয় পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ ও গ্রামবাসি সোমবার বিকেলে গোনা গ্রামের প্রধান সড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করেছে। তবে সোমবার রাতে এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। তবে সোমবার জেল থেকে মুক্তি পাওয়া নুরুল চৌকিদারের দায়েরকৃত মিথ্যা হামলা মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ।মম
শ্যামনগরের কৈখালি ইউনিয়নের গোনা গ্রামের যুধিষ্টির মÐলের পুত্রবধূ স্মৃতি রানী মÐল জানান, এ গ্রামে শুধু তারাই হিন্দু পরিবার বসবাস করেন। গত ১৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে তার ছেলে অনিমেষ মÐল (০৯) পার্শ্ববর্তী পুকুরে ¯œান করতে যায়। একই সময়ে প্রতিবেশি জাহের চৌকিদারের আট বছরের ছেলে হারুনের সাথে কথাকাটাকাটি হয়। খবর পেয়ে জাহের চৌকিদারের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন, মেহেন্দীনগর গ্রামের দ্বীন আলী চৌকিদার, শহীদুল ইসলাম চৌকিদার, গোনা গ্রামের নূর ইসলাম চৌকিদার, রবিউল চৌকিদার, হারেজ গাজী ও মনিরুল ইসলাম চৌকিদারসহ চার/পাঁচজন পুকুর পাড়ে এসে অনিমেষকে গালিগালজ করতে থাকে। তাকে পুকুরের জলে ডুবিয়ে মারার চেষ্টা করা হয়। খবর পেয়ে তিনি যেয়ে প্রতিবাদ করায় তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করা হয়। কান ছিঁড়ে ছিনিয়ে নেওয়া হয় সোনার দুল। ছিঁড়ে নেওয়া হয় গলা থেকে সোনার হার। লোহার রড দিয়ে বাম পা গুরুতর জখম করা হয়। এ ঘটনায় তার স্বামী শ্রীপদ মÐল বাদি হয়ে উপরোক্ত সাতজনের নাম উল্লেখ করে পরদিন থানায় একটি মামলা(২২ নং) দায়ের করেন। পুলিশ নুর ইসলাম চৌকিদার ও মনিরুল চৌকিদারকে মামলার পরপরই গ্রেপ্তার করে।

স্মৃতি রানী মÐল আরো জানান,নুর ইসলাম ও মনিরুলকে গ্রেপ্তারের পর থেকে অন্যান্য আসামী ও গ্রেপ্তারকৃতদের পরিবারের সদস্যরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তার স্বামীকে বার বার হুমকি দিয়ে আসছিলো। মামলা তুলে না নিলে পরিবারসহ ভারতে পাঠানোর হুমকির পাশাপাশি হত্যা করে লাশ কালিন্দি নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে ১৮ এপ্রিল শ্রীপদ মÐল থানায় ৯১৬ নং সাধারণ ডায়েরী করেন। ডায়েরীর খবর পেয়ে আসামীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠায় তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ির মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বিষয়টি জানানোর পরও স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম আসেননি। উপরন্তু দেলোয়ার মেম্বর আসামীদের জামিন করানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন। একপর্যায়ে খাওয়ার জলের সঙ্কট দেখা দিলে তার স্বামী ২৩ এপ্রিল বিকেল চারটার দিকে বাইসাইকেলে চড়ে ড্রাম নিয়ে দুরমুজখালি বিজিবি ক্যাম্পে খাওয়ার জল আনতে যান। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে আসামীদের বাড়ির সামনে দিয়ে আসা মাত্র তাকে ধর ধর বলে ধাওয়া করলে তিনি সাইকেল ও জলের ড্রাম ফেলে বাড়ির দিকে দৌড় দেন। এ সময় একই গ্রামের মতিয়ার চৌকিদার, আব্দুল বারি চৌকিদার, নজরুল চৌকিদার , হামিদ চৌকিদার, রাশিদুল চৌকিদার, আব্দুর রহমান চৌকিদারসহ কয়েজন তাদের বাড়িতে ঢুকে তার স্বামী শ্রীপদ মÐলকে লোহার রড দিয়ে মারপিট শুরু করে। বাড়ির অন্য সদস্য সুপদ মÐল, তার স্ত্রী দীপিকা মÐল, ননদ কবিতা মÐল, বিষ্ণুপদ মÐল, বিধান মÐলকে পিটিয়ে জখম করা হয়। এ সময় তাদের বাড়ি থেকে নগদ টাকা, সোনার গহনা ও জিনিসপত্র লুটপাট করা হয়। এ সময় গ্রামে এক ঘর হিন্দুর কোন থাকার দরকার নেই, তোরা ভারতে চলে যা বলে হুমকি দেওয়া হয়। ননদের স্বামী ভূষণ মÐল নবেকী হাট থেকে বাড়ি ফেরার সময় তাকেও আসামীরা পথিমধ্যে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। আশাঙ্কাজনক অবস্থায় শ্রীপদ মÐল, সুপদ মÐল, দীপিকা মÐল, কবিতা মÐল, ভ‚ষণ মÐলকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গভীর রাতে আসামীরা তাদের গোয়ালঘর ও বসত ঘরের একাংশ পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এতে গোয়ালে থাকা সাতটি গরু ঝলসে যায়।

সুপদ মÐল বলেন, ২৩ এপ্রিল তাদেরকে মারপিট, লুটপাট ও ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে সোমবার রাতে থানায় মতিয়ার চৌকিদারসহ ছয় জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি এজাহার জমা দেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি। উপরন্তু হামলা মামলায় সোমবার সন্ধ্যায় জামিনে মুক্তি পাওয়া আসামী নুরুল চৌকিদারের দায়েরকৃত মিথ্যা হামলা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মামলায় তাকেসহ ভাই শ্রীপদ মÐল, কৃষ্ণপদ মÐল, বিষ্ণুপদ মÐল ও ভগ্নিপতি ভ‚ষণ মÐলকে আসামী করা হয়েছে। ফলে তারা নতুন করে হুমকিতে রয়েছেন।

এ দিকে গোনা ও মেহেন্দীনগর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য পবিত্র কুমার মÐল জানান, হামলার ঘটনায় মামলা করে যুধিষ্টির মÐলের পরিবারের সদস্যরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়া, জল আনার পথে তাড়িয়ে বাড়িতে এনে শ্রীপদ মÐলসহ সাতজনকে পিটিয়ে জখম ও ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় পুজা উদযাপন পরিষদ. হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ ও গ্রামবাসি যৌথভাবে গোনা গ্রামের প্রধান রাস্তার উপর সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করে। এ সময় বক্তব্য রাখতে যেয়ে স্মৃতি রানী মÐল তার উপর বর্বরোচিত হামলার বর্ণনা দিতে যেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পাগলের মত কাঁদতে শুরু করেন স্মৃতি রানীর শ্বশুর বৃদ্ধ যুধিষ্টির মÐল। কর্মসুচি থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়। একইসাথে জেল হাজতে থাকা নুরুল ও মনিরুল জামিনে মুক্তি পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করা হয়। একই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়।

এ ব্যাপারে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বাদল জানান, ঘর জ্বালানোর কোন প্রত্যক্ষদর্শী নেই। তবে সুপদ মÐলের দায়েরকৃত অভিযোগটি মামলার প্রক্রিয়া হিসেবে চলমান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন হামলাকারি সাদ্দাম হোসেন ও রহিম চৌকিদারকে সোমবার গ্রেপ্তার করে শ্রীপদ মÐলের দায়েরকৃত ২২ নং মামলায় আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া এজাহারভুক্ত দ্বীন আলী আদালত থেকে জামিন নিতে গেলে মঙ্গলবার তার জামিন না’মঞ্জুর হয়েছে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version