Site icon suprovatsatkhira.com

পাটকেলঘাটায় র‌্যাবের উপর হামলার ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৯ জন জেলহাজতে

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটায় সরকারিকাজে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে আটককৃত ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৯ জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে শনিবার বিকেল ৫টার দিকে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার পাঁচপাড়া গ্রাম থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন, তালা উপজেলার ধানদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সরদার, তার ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আমিনুল ইসলাম ওরফে সুমন সরদার, একই গ্রামের জামাল সরদারের ছেলে কবির সরদার, মৃত আফতাব সরদারের ছেলে সাবেক পুলিশ সদস্য রফিকুল ইসলাম ওরফে শওকত সরদার,এরশাদ সরদারের ছেলে সোহাগ সরদার ও সোহান সরদার, কাশেম খাঁ’র ছেলে আফজাল খাঁ ও সেনেরগাতি গ্রামের আব্দুল মান্নান খানের ছেলে আজগার আলী।

র‌্যাব,সাতক্ষীরা ক্যাম্পের কমান্ডিং অফিসার মেজর গালিব জানান, ধান্দিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পাঁচপাড়া গ্রামের আলম সরদারের নামে বিভিন্ন মামলা ও অভিযোগ রয়েছে,এমন তথ্য যাঁচাই-বাছাই করতে কয়েকজন সদস্য শনিবার দুপুরে আলম সরদারের বাড়িতে যান। আলম সরদার র‌্যাবকে সহযোগীতা না করে তাদের ওপর চড়াও হন এবং চিৎকার দিয়ে লোক জড়ো করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে স্থানীয়রা সংঘবদ্ধ হয়ে র‌্যাব সদস্যদের ওপর হামলা করে। এতে সাইফুল ও মহসিন নামের দু’র‌্যাব সদস্য আহত হন। ঘটনা জানতে পেরে বিকেল পাঁচটার দিকে র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমসহ ৯ জনকে আটক করেন। আর আহত র‌্যাব সদস্য সাইফুল ও মহসিনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে, পাঁচপাড়া গ্রামের বৃদ্ধা শাহানারা খাতুন জানান, পাঁচপাড়া গ্রামের খাঁ পাড়ার লুৎফরের ছেলে মামুন খাঁ, আব্দুস সাত্তার ধাবকের ছেলে রেজাউল ধাবক, নগরঘাটার সাঈদুল খাঁ’র ছেলে নাঈম খাঁসহ সাত আটজন হেলমেট মাথায় দিয়ে কয়েকজন লোককে সাথে নিয়ে শনিবার দুপুর দুটোর দিকে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলম সরদারের বাড়িতে আসে। এ সময় র‌্যাবের পোশাক পরিহিত দুইজনসহ সাদা পোশাকে থাকা চারজন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে বলে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলম সরদার ও তার ছেলে জিভান সরদারকে খুঁজতে থাকে। সাদা পোশাকে থাকা চারজন আলমকে মারতে থাকে। এসময় আলম সরদার চিৎকার দিলে পাড়ার ৩০/৩৫ জন নারী ও পুরুষ তাদেরকে ঘিরে ফেলে। অবস্থা বেগতিক দেখে র‌্যাবের পোশাক পরিহিত দুই সদস্য ও তাদের প্রতিপক্ষ হেলমেটধারীরা কৌশলে চলে যায়। সেখান থেকে চলে যায় আলম সরদারও। ঘটনাস্থলে থেকে যাওয়া সাদা পোশাকে চারজন লোক নিজেদের র‌্যাব সদস্য বলে পরিচয় দেন। তারা আসামী আলম সরদার ও জিভান সরদারকে ধরতে এসেছে বলে স্থানীয়দের চ্যালেঞ্জ করে।

উত্তরে তাদের জানানো হয়,আলম ও জিভানসহ আসামীরা সবাই জামিনে রয়েছেন।
কথিত র‌্যাব সদস্যরা তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে না পারায় উভয়পক্ষে বাগবিতÐা ও পরে ধস্তাধস্তি শুরু হয়।
খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সরদারসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। চেয়ারম্যান ফোন দেন পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে। পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন রায় সাদা পোশাকধারি চারজনকে জনরোষের হাত থেকে বাঁচাতে নিরাপদে রাখতে বলেন চেয়ারম্যানকে। চেয়ারম্যান ওই চার জনকে সালাউদ্দিন সরদার ওরফে তোতার বাড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে গ্রীলে তালা লাগিয়ে দেন। বিকেল ৫টার দিকে র‌্যাব এর অতিরিক্ত ফোর্স ও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। র‌্যাব সদস্যরা পাঁচপাড়া জামে মসজিদে নামাজ শেষে দাঁড়িয়ে থাকা ৫জনকে আটক করেন। পরে আটক করা হয় শওকত ও সুমনকে। র‌্যাব সদস্যদের গাড়ির পাশে যাওয়ার পরপরই ইউপি চেয়ারম্যার জাহাঙ্গীর আলমকে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়।

পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার রায় জানান, এ ঘটনায় র‌্যাব-৬ এর সাতক্ষীরা ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোহাম্মদ বাবুল মিয়া বাদি হয়ে রোববার থানায় একটি মামলা (মামলা নং-৬) দায়ের করেছেন। মামলায় গ্রেপ্তারকৃত নয়জনসহ ৩৪ জনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তারা সরকারি কাজে বাঁধা দিয়েছেন, র‌্যাব সদস্যদের পিটিয়ে জখম করেছেন এবং র‌্যাব সদস্যদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৫শ’১০ টাকা চুরি করেছেন।
সাতক্ষীরা আদালতের পরিদর্শক মাহমুদুর রহমান জানান, আটককৃত নয়জনকে রবিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ সকাল ৯টার দিকে ফুলবাড়ি বাজারের পাশে মটর সাইকেল নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পাঁচপোতা গ্রামের শাওনকে একটি চড় মারেন ধানদিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি আলম সরদারের ছেলে জিভান সরদার। এর জের ধরে জাহিদ হাসান সাগর, নাঈম হোসেনসহ পাঁচপাড়ার খাঁপাড়া ও নগরঘাটার কয়েকজন পাটকেলঘাটা এলাকায় জিভান,আলম দফাদারসহ আলম গ্রæপের বেশ কয়েকজনকে বেধড়ক মারপিট করে। এ ঘটনায় হারুন সরদার বাদি হয়ে ২৭ মার্চ রাতে জাহিদ হাসান সাগর, ইসকেন্দর, রেজাউল করিমসহ ছয় জনের নামে মামলা দায়ের করেন পাটকেলঘাটা থানায়। একই দিনে রেজাউল সরদারের ছেলে জাহিদ হাসান সাগর বাদি হয়ে পাল্টা একটি মামলা দায়ের করেন। উভয় মামলায় প্রত্যেকে জামিনে ছিলেন। তবে মামলা-হামলা নিয়ে এলাকায় তুমুল উত্তেজনা চলছিল।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version