নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, সাতক্ষীরা আমার জন্মভূমি না হলেও আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। ১৯৭৫-১৯৭৬ সালে আমি এখানকার কলেজের ইন্টার মিটিয়েড ছাত্র ছিলাম। শিক্ষকরা যেভাবে আমাকে পড়িয়েছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। এখানে যারা সরকারি কলেজের শিক্ষক আছেন তারা সকলেই আমার শিক্ষক। আমাকে বিচারপতি না ভেবে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ভাবলে খুশী হবো। সাতক্ষীরায় তখন অপরাধ হতো না বললেই চলে। এখন চিংড়ি চাষের ফলে মানুষের হাতে পয়সা এসেছে। বেড়েছে সহিংসতাও। শিক্ষকতার চেয়ে মহান পেশা খুব কমই আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সততা ও দেশপ্রেম মনে প্রাণে ধারণ করতে হবে। শত বছরেরও বেশি সময়ের পরাধীনতার গøানি মুছে ফেলে তিন লাখ শহীদের আত্মদানের বিনিময়ে আমরা ম্বাধীনতা বাংলাদেশ পেয়েছি। তাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদেরকে আরো গতিশীল হতে হবে।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষকরুমে সরকারি কলেজ আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল¬াহ হেল হাদীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ওই কলেজের সাবেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ আব্দুল ওয়াদুদ। অনুষ্ঠানে তাকে মানপত্র প্রদান করেন, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ হেল হাদী। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক কাজী আসাদুল ইসলাম।
সংবর্ধনা শেষে স্মৃতিবিজড়িত সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এরপর তিনি ১৯৭২ সালের ৩ জুলাই খুলনা কলেজ প্রাঙ্গনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লাগানো নারিকেলের চারার পাকা নারিকেল থেকে উৎপাদিত চারা লাগান কলেজ মাঠে। কলেজ পরিদর্শণকালে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মো: আব্দুল আলিম আল রাজী, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মো: হুমায়ুন কবীর, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের রেজিষ্টার মুন্সি মোঃ মশিউর রহমান, সহপাঠী কুমিরা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খগেন্দ্র নাথ দাস, অ্যাডভোকেট গোবিন্দ বল¬ভ, অ্যাডভোকেট, আলী আহম্মেদ প্রমুখ। সরকারি কলেজে আসার আগে প্রধান বিচারপতি তার শিক্ষক সরকারি কলেজের সাবেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ও সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওয়াদুদ এর বাসায় যান ও তাকে নিয়েই কলেজে যান।
এরপর প্রধান বিচারপতি বেলা সাড়ে ৩টায় সাতক্ষীরা জর্জ কোর্টে ‘ন্যায় কুঞ্জ’ নামে একটি বিশ্রামাগার উদ্বোধন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মোহাম্মদ আব্দুল আলিম আল রাজী, সাতক্ষীরা ল কলেজের অধ্যক্ষ অ্যাড. এসএম হায়দার, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. গোলাম মোস্তফাসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ।
ন্যয় কুঞ্জ উদ্বোধন শেষে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরে মামলা জট কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা ফাইলিং ও নিস্পত্তির হার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকাতে প্রায় আড়াইগুনসহ ২৯টি জেলায় কেস ফাইলিংয়ের চেয়ে মামলা নিস্পত্তির হার বেড়েছে। রাস্ট্রের মালিক জনগনই। তারা যেন আদালতে এসে বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়। আইনজীবিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আপনারা বিচার বিভাগকে গতিশীল রাখার চেষ্টা করবেন।
বিকেল চারটায় তিনি সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন সরকারি কৌশলী অ্যাডভোকেট শম্ভুনাথ সিংহ।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান বিচারপতি সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে এসে পৌছান। এসময় তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবির, জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মোঃ আব্দুল আলীম আল রাজী, পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ হুমায়ুন কবীর, আইনজীবী সমিতি ও আইনজীবী সহকারি সমিতির নেতৃবৃন্দ। সন্ধ্যায় তিনি সাতক্ষীরা ল’ কলেজে যান।