ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগে ইকো টুরিজম নিশ্চিত করতে হবে সাতক্ষীরায় সুন্দরবন দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা
নিজস্ব প্রতিবেদক : সুন্দরবন দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, সুন্দরবন বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকায় বসবাসরত মানুষকে প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে মায়ের মতো আগলে রেখে রক্ষা করে। সুন্দরবন বাংলাদেশ তথা ধরিত্রী রক্ষায় অন্যতম রক্ষাকবর হিসেবে কাজ করে। সুন্দরবন আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটি এখন বিশ্বঐতিহ্য। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে আগলে রেখেছে সুন্দরবন। অনেকটা মায়ের কোলে একটি শিশু যেমন পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকে তেমনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক বিরাট এলাকা সুন্দরবনকে অবলম্বন করে নিরাপদ রয়েছে। বিগত ২০০১ সালে খুলনায় অনুষ্ঠিত হয় ১ম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন। সম্মেলনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন সেই সময়ের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ। সেই থেকে ১৪ ফেব্রæয়ারিকে সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বক্তারা আরও বলেন, সুন্দরবন শুধুমাত্র পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনই নয়, বিশ্বে সুন্দরবনের মত এত সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য আর কোন বনে নেই। এই জন্যই সুন্দরবনকে বলা হয় ‘জীববৈচিত্র্যের জীবন্ত পাঠশালা’। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় শিল্প স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল মানুষকে সচেতন করতে হবে। বন রক্ষায় স্থানীয় বন সংরক্ষণে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং তাদের জ্ঞান কাজে লাগাতে হবে। সুন্দরবন বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুন্দরবন ভ্রমণে আগ্রহী ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য ইকো টুরিজম নিশ্চিত করতে হবে। যথেচ্ছভাবে সুন্দরবনে গমনাগম বন্ধ করতে হবে। বর্তমানে এই দিবস পালনের কর্মকাÐে সংযুক্ত থাকে সুন্দরবন একাডেমী, বন বিভাগ এবং বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুন্দরবন সংলগ্ন সাংবাদিক সমাজ এবং প্রকৃতিপ্রেমী আপামর মানুষ। অতিমারি করোনার কারণে ২০২০ সালের পর অন-লাইন ভিত্তিক এবং খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে সুন্দরবন দিবস পালন করা হয়েছিল। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রতিবারেরমত এবারও নানান আনুষ্ঠানিকতায় সুন্দরবন দিবস পালন করা হচ্ছে। ‘সুন্দরবনকে ভালোবাসুন, ১৪ ফেব্রæয়ারি সুন্দরবন দিবস ঘোষণা করুন’ শ্লোগানকে সামনে রেখে সাতক্ষীরায সুন্দর দিবস উদযাপিত হয়েছে। ১৪ ফেব্রæযারি ২০২৩ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় শহরের ম্যানগোভ সভাঘরে শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সামাজিক ব্যক্তিত্ব শেখ আজহার হোসেন, জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বন বিভাগের জেলা সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমের সহকারী বন সংরক্ষক নুরুন্নাহার। সুন্দরবন দিবস উদযাপন কমিটি, সাতক্ষীরা আয়োজিত আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন স্বদেশ-সাতক্ষীরার নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকারকর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়নকর্মী সরদার গিয়াসউদ্দিন আহম্মেদ। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হারুন উর রশীদ, উন্নয়নকর্মী অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, বরসার সহকারী পরিচালক নাজমুল আলম মুন্না, কবি কবির রায়হান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্রিসেন্ট’র নির্বাহী পরিচালক আবু জাফর সিদ্দিক, কোস্টাল পিপলস ফোরাম-সিপিএফ’র পরিচালক ফারুক রহমান, হেড সংস্থার পরিচালক লুইস রানা গাইন, অর্জন ফাউন্ডেশনের পরিচালক মহুয়া মঞ্জুরী, সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের পরিচালক শেখ আফজাল হোসেন প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠান আয়োজনে অংশগ্রণ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা স্বদেশ, টিআইবি, আশা লোককেন্দ্র, সৃজনী মহিলা লোককন্দ্রে, অর্জন ফাউন্ডেশন, সুন্দরবন ফাউন্ডেশন, বিজিএফ, সুশীলন, উত্তরণ, সামস, হেড, অগ্রগতি সংস্থা, লিডার্স, ক্রিসেন্ট, প্রথম আলো বন্ধুসভা, রূপান্তর, সিপিএফ, সিডো, আশ্রয়, বেলা। দাবিসমূহ- ১৪ ফেব্রæয়ারি রাষ্ট্রীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের বিষয়ে রাষ্ট্র অবিলম্বে গেজেট প্রকাশ করবে; সুন্দরবন সংরক্ষণে পশ্চিম বাংলার মতো সুন্দরবন বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, সুন্দররন উন্নয়ন পরিষদ বা ‘সুন্দরবন ডেভেলপমেন্ট বোর্ড’ নামে একটি কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি করে, সেই কর্তপক্ষের কাছে বর্তমান সুন্দরবন বিভাগের উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ, এ অঞ্চলের নদী ও বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ এবং অন্যান্য দায়িত্ব প্রাদন। এছাড়াও একটি বিশেষ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ‘সুন্দরবন ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করে দরিদ্রদের মহাজন বা অসহনীয় সুদ প্রদানের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা এবং সরকারী নীতি পরিবর্তনের জন্য প্রভাব সৃষ্টি করা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি কমানোর জন্য সুন্দরবনের সম্পদ আহরণ ও ব্যবহারকারী, নাগরিক সমাজ, জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদের সমন্বয়ে জনমুখী নীতি’র জন্য চাহিদা সৃষ্টি করা। সুন্দরবন অঞ্চলের দরিদ্র মানুষদের জীবন-জীবিকার স্বাভাবিকতা বজায় রাখার জন্য বিদ্যমান সংকট যেমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পণ্যমূল্যের নি”মুখিতা, দুর্গম এলাকা, সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, পানীয় জলের সংকট, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংকট ইত্যাদি উত্তরণে তাদের সাহায্য-পরামর্শ দেয়া এবং কর্মরত গ্রæপ, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে সহায়তা, পরামর্শ ও উৎসাহ প্রণোদনা প্রদান। বিশ্ব জলবায়ু শোধনে সুন্দরবনের অবদানকে বিশ্বব্যাপী সমুন্নত করা। 8,631,579 total views, 11,129 views today |
|
|
|