নিজস্ব প্রতিনিধি : যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে স্বামী রবিউল ইসলামকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদÐাদেশ কার্যকর একইসাথে ১০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এমজি আযম গতকাল রবিবার এক জনাকীর্ণ আদালতে এ আদেশ দেন। রায় শোনার পর কাঠগড়ায় থাকা আসামী কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ফাঁসির দÐাদেশপ্রাপ্ত আসামী রবিউল ইসলাম সাতক্ষীাা শহরের পূর্ব মেহেদীবাগের বিল¬াল গাজীর ছেলে।
মামলার বিবরনে জানান যায়, ২০১০ সালে যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার আগরহাটি গ্রামের শহীদুল ইসলামের মেয়ে রাবেয়া খ্তাুনের সঙ্গে সাতক্ষীরা শহরের পূর্ব মেহেদীবাগের বিল¬াল গাজীর ছেলে রবিউল ইসলাম গাজীর সঙ্গে ইসলামী শরিয়ৎ মোতাবেক বিয়ে হয়। বিয়ের সময় জামাতাকে নগদ টাকা, সোনার গহনা ও আসাবাবপত্রসহ তিন লাখ টাকার জিনিসপত্র দেওয়া হয়। এরপরও বিয়ের এক বছর না যেতেই রবিউল ও তার পরিবারের সদস্যরা রাবেয়াকে বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে আসতে বলে।
বাপের বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা আনতে অপারগতা প্রকাশ করায় রাবেয়ার উপর শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে শহীদুল ইসলাম ৭০ হাজার টাকা দিয়ে মেয়েকে ফের শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এরপরও বাকি ৩০ হাজার টাকার দাবিতে রাবেয়াকে ২০১৪ সালের ৬ জুন সন্ধ্যা ৬টায় রবিউল ও তার পরিবারের সদস্যরা শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পূর্ব মেহেদীবাগের জনৈক আজিজ মিস্ত্রীর মাধ্যমে খবর পেয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যেয়ে মেয়েকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
একপর্যায়ে পরদিন নিহতের বাবা শহীদুল ইসলাম বাদি হয়ে জামাতা রবিউল ইসলাম, তার বাবা বিল¬াল গাজী, মা রোকেয়া বেগম, ভাই হাসান ও বোন আসমা খাতুনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধিত ২০০৩ সালের ১১(ক)/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। আসামী রবিউল ইসলাম ২০১৪ সালের ৮ জুন জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম শিমুল কুমার বিশ্বাসের কাছে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক তানভির হোসেন ওই বছরের ১৭ নভেম্বর আদালতে এজাহারভুক্ত ৫ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলার নথি ও ১৩জন সাক্ষীর জবারনবন্দি পর্যালোচনা শেষে আসামী রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে স্ত্রী রাবেয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়্য়া বিচারক এমজি আযম তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদÐ কার্যকর করা একইসাথে ১০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন। একই আদেশে চার আসামীকে বেকসুর খালাস প্রদার করা হয়। মামলার রায় শুনে আসামী রবিউল ইসলাম কাঠগোড়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নায় ভেঙে পড়েন তার স্বজনরাও।
রবিউলের ভাই হাসানুজ্জামান বলেন, ভাইকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। তারা এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
আসামীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট এসএম হায়দার আলী।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট জহুরুল হায়দার বাবু।