Site icon suprovatsatkhira.com

কলারোয়ার কলেজ ছাত্রী যশোরে খুন

ফারুক হোসাইন রাজ, কলারোয়া: ‘ওরা আমার মেয়েকে বাঁচতে দিলোনা, আমি ওদের ফাঁসি চাই’ সহপাঠী কর্তৃক নৃশংস হত্যার শিকার হওয়া যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তার পিংকীর মায়ের এমন আকুতি ভরা কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরা কলারোয়ার কেরেলকাতা এলাকা জুড়ে। তার মায়ের দাবি মেয়ের সহপাঠী আহসান কবির অংকুর ও তার পরিবারের সংঘবদ্ধ চক্র দ্বারা পরিকল্পিত মেয়েকে তুলে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে নিহতের ভাই আনিছুর রহমান বাদী হয়ে যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শার্শা উপজেলার আহসান কবির অংকুর ( ২২) তার বড় আহসান হাবিব তমাল, উভয়ের বাবা আকবর আলী চৌধুরী ও মা হোসনেয়ারা খাতুনের নাম উল্লেখসহ ৪ জনকে আসামি করে শার্শা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ময়নাতদন্ত শেষে  শনিবার ১১ ফেব্রুয়ারী বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে নিহতের মৃতদেহ যশোর মর্গ থেকে সাতক্ষীরা কলারোয়ার কাউরিয়া গ্রামে পরিবারের কাছে পৌছায়। সন্ধ্যায় নিজ বাড়ির পার্শ্বে কাউরিয়া জামে মসজিদে জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাযা নামাজ পরিচালনা করেন কেরেলকাতা ইউনিয়নের কাউরিয়া পূর্বপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোস্তাকিম বিল্লাহ।
নিহত জেসমিন আক্তার পিংকী কলারোয়া উপজেলার কেরেলকাতা ইউনিয়নের কাউরিয়া গ্রামের জাকির হোসেনের মেয়ে। পিংকিসহ তার পরিবারে আছেন বাবা জাকির হোসেন, মা মিনারা খাতুন, বড় ভাই আনিছুর ও মাধ্যমিক স্কুল পড়ুয়া ছোট ভাই ইউনুস আলী। পিংকির বাবা পেশায় একজন কৃষক। পিংকি যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৪র্থ বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন। লেখাপড়ার জন্য পিংকি যশোর বারান্দীপাড়া এলাকায় তিন বছর যাবৎ ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।

নিহত পিংকীর মা মিনারা খাতুন বলেন, গত সপ্তাহের ২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার মেয়ে ফোন করে জানায়, আমি (যশোরে) বাজারে কাঁচা ঝাল কিনতে এসেছি। হঠাৎ ফোন কেটে গিয়েছিল সেটাই ছিলো শেষ কথা। আজ সে বাড়িতে লাশ হয়ে ফিরেছে। এর আগেও ওই অংকুর মেয়েকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল বলে নিহতের মায়ের দাবি। এই হত্যার পিছনে শুধু মাত্র অংকুর একা না বরং তার পরিবারের সদস্যসহ আরও অনেকে জড়িত আছে বলে জানান। হত্যাকান্ডে জড়িতদের ফাঁসি দাবি করেন তিনি।

মামলার বাদি নিহত জেসমিনের ভাই আনিছুর রহমান বলেন, গত চার বছর যাবৎ জেসমিন লেখাপড়ার জন্য যশোরে থাকতেন। বোন ও অংকুর একই সাথে লেখাপড়ার কারনে তাদের মধ্যে এক ধরনের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। সন্ত্রাসী অংকুর পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে তাকে বাসায় তুলে নিয়ে সিমেন্টের জামানো পাথর দিয়ে থেতলিয়ে হত্যা করে বাড়ির সেফটি টেংকের মধ্যে বস্তা বন্দী করে রাখে। র‌্যাবের সহযোগিতায় এসব তথ্য ও মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই হত্যা সে কখনো একা করতে পারে না এর পিছনে তার পরিবার ও বড় চক্র জড়িত আছে অংকুরসহ যারা জড়িত সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দেশের আইন বিভাগ যেন সর্ব উচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেন যাতে আর কোন মা বাবা ভাই বোনের কোল খালি না হয়।

যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টেলিকমিউনিকেশন বিভাগীয় প্রধান সিরাজুল ইসলাম বলেন, কোমলমতি মেধাবী শিক্ষার্থীকে যে সন্ত্রাসী চক্র হত্যা করেছে আমরা তাদের ফাঁসি চাই। এবং এই হত্যাকারী অংকুরের বিরুদ্ধে কলেজ প্রশাসন থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা তা জরুরি মিটিং এর মাধ্যমে জানানো হবে।
কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু বলেন, গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের জাকির হোসেনের একমাত্র মেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী জেসমিনকে যে বা যারা হত্যা করেছে প্রশাসনের সহযোগিতায় তারা যেন অতি দ্রæত আইনের আওতায় আসে। এবং তাদের যেন সর্ব উচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেওয়া হয় যাতে এই চক্র বা বা অন্য কেহ অপরাধ করতে সাহস না পায়।

র‌্যাব-৬ এর যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কমান্ডার এম নাজিউর রহমান বলেন, হত্যা করে লাশ গুমের ঘটনায় আহসান কবির অংকুরের নামে তার এক সহপাঠীকে আটক করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তার স্বিকারোক্তিতে অংকুরের নিজ বাড়ীর সেফটি ট্যাংকির ভিতর থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
জানাজা নামাজের সময় কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, কেরেলকাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সম মোরশেদ আলী ভিপি, সাতক্ষীরা জর্জ কোর্টের এপিপি অ্যাডভোকেট আশরাফুল আলম বাবুসহ নিহতের পরিবার এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version