Site icon suprovatsatkhira.com

শ্যামনগর উপকূলে জলোচ্ছ¡াসে নষ্ট হওয়া নির্মাণাধীণ রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনি ইউনিযনের খোলপেটুয়া নদীর পশ্চিম দুর্গাবাটি সাইক্লোন শেল্টারের পাশে বেড়িবাঁধে ভাঙন পরবর্তী ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও র্প্বূ দুর্গাবাটি গ্রামের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের বাড়ি থেকে গোপালের মোড় পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত তিন কিলোমিটার নির্মানাধীন রাস্তা সংস্কার করা হয়নি। জলোচ্ছ¡াসে মাটি ও বালি ধুয়ে বেরিয়ে পড়া ইটের খোয়ার কারণে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করতে না পারায় চারটি গ্রামের আট হাজারের বেশি মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে মঙ্গলবার সুন্দরবন উপকুলবর্তী দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়ন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব দুর্গাবাটি, পশ্চিম দুর্গাবাটি, পূর্ব পোড়া কাটলা, পশ্চিম পোড়া কাটলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে জানা গেছে, গত ১৪ জুলাই ২০২২ প্রবল জলোচ্ছ¡াসে খোলপেটুয়া নদীর পশ্চিম দুর্গাবাটির সাইক্লোন শেল্টারের পাশে ৩২০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। প¬াবিত হয় বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব দুর্গাবাটি গ্রাম । ভেসে যায় শতাধিক ছোট বড় চিংড়ি ঘের।ক্ষতিগ্রস্ত হয় চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের বাড়ির পাশ (পোড়া কাটলা কালভার্টের পশ্চিম পার্শ্ব) থেকে পূর্ব দুর্গাবাটির গোপালের মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার নির্মাণাধীন সড়ক। এ তিন কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে সাতটি স্থানে পানি ওভারফ্লো হওয়ায় ওইসব জায়গার মাটি সরে যেয়ে খাদে পরিণত হয়। এ ছাড়া ওই তিন কিলোমিটার রাস্তার উপরের মাটি ও বালি সরে ইটের খোয়া বেরিয়ে পড়ে। ফলে ওই রাস্তা দিয়ে শুধুমাত্র সাইকেল বা ভ্যানযোগে তো দূরের কথা. পায়ে হেঁটে চলা দুষ্কর হয়ে উঠেছে। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাত হাজার মানুষের চলাচল, সুপেয় পানি সংগ্রহ এবং হাট বাজারে যাতায়াত দুষ্কর হয়ে উঠেছে। অসুস্থ বয়স্ক মানুষ ও গর্ভবর্তী মায়েদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হয়।

শ্যামনগর হাজী মহসিন ডিগ্রী কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র পশ্চিম দুর্গাবাটি গ্রামের কমলেষ মÐল জানান, নদীভাঙন, ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াস এখানকার মানুষের নিত্যসঙ্গী। চিংড়ি ঘের, সুন্দরবনের মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণই এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা। প্রতি বছর কোন না কোন সময়ে ঘুর্ণিঝড়ের আঘাতে লÐভÐ হয়ে যায় এখানকার জনপদ। খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জলোচ্ছ¡াসে গত বছরের ১৪ জুলাই খোলপেটুয়া নদীর পশ্চিম দুর্গাবাটি সাইক্লোন শেল্টারের পাশে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। পুকুর ও মাছের ঘের ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি এলাকার অনেক রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে ড্রামে করে খাওয়ার জল আনতে যেতে হয় যার তিন কিলোমিটার রাস্তাই চলাচলের অনুপোযোগী।

পূর্ব দুর্গাবাটি গ্রামের ভ্যানচালক রজনীকান্ত রপ্তান জানান, প্রয়োজন হলেও কেউ এ রাস্তা ব্যবহার করতে চায় না। যারা বাধ্য হয়ে যেতে চান তাদের থেকে মাসে যা আয় করেন তাতে সংসার চলা দায়। তাতের মাতে দুই বার টায়ার টিউব নষ্ট হলে দিনে এক বেলা না খেয়ে থাকা ছাড়া উপায় কি?
পূর্ব দুর্গাবাটি গ্রামে মামার বাড়ি থেকে পড়াশুনা করা সঞ্চিতা মÐলের বাড়ি খুলনা জেলার কয়রা সদরে। রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণে বাবা মা কেউ গত ছয় মাসে তাকে দেখতে আসেনি। সহপাঠীদের নিয়ে সরস্বতী পুজার চাঁদা তুলতে এসে চটিটাই গেছে ছিড়ে।

মাছ ব্যবসায়ি গোপালের মোড়ের রাজীব সরকার বলেন, তার বাড়ি থেকে চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের বাড়ির সামনে পর্যন্ত কয়েক জায়গায় মাটি জলের স্রোতে ধুয়ে যাওয়ায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনা। এ রাস্তা দিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে না বললেই চলে। অবিলম্বে এ রাস্তা সংস্কারের জন্য তিনি উর্দ্ধতন প্রশাসনিক কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তবে নিদ্দিষ্ট সময়ে ঠিকাদার কাজ শেষ করলে তাদের কপালে এ দুর্ভোগ হতো না বলে অভিযোগ করেন তিনি। এজন্য তিনি উপজেলা প্রশাসনকে দায়ী করেন।
গৃহবধু সুশীলা মÐল ও মাধবী সরকার জানান, প্রচÐ শীতের কারণে বয়স্ক মানুষ ও বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট ও ডায়েরিয়া জনিত রোগ বেড়েছে। ওইসব রোগী ও সন্তান সম্ভবা মায়েদের ৩০ কিলোমিটার দূরে শ্যামনগরে নিয়ে যেতে হলে সকল সময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। ভ্যান যেতে চায় না। দোলনাই একমাত্র ভরসা। ডিজিটাল যুগে কি এটা বাবা যায়?

৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বিকাশ মÐল জানান, দুর্গাবাটিতে ভাঙনের ফলে পিচ ঢালাইয়ের আগেই গোপালের মোড় থেকে মন্দিরবাড়ি ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা পানিতে ডুবে যায়। দীর্ঘদিন রাস্তা পানিতে ডুবে থাকার ফলে রাস্তায় ব্যবহৃত ইটের খোয়া উঠে পায়ে হেটে বা বাই সাইকেলে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। রাস্তা সংস্কারের কোন উদ্যোগ তার চোখে পড়েনি।
শ্যামনগর উপজেলা উপসহকারি প্রকৌশলী কেএম শহীদুল ইসলাম জানান, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের পূর্ব দুর্গাবাটির দুই কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এক কোটি ৮৯ লাখ ২০ হাজার ১৯৩ টাকা বরাদ্দ করে। যা ভ্যাটসহ দুই কোটি দুই লাখ ২০ হাজার ৬৯৫ টাকা। ঠিকাদার শ্যামনগরের বাধঘাটার নুরুল হক মোল¬াকে ২০২০ সালের ৩ মে এক চিঠিতে এলজিইডি সাতক্ষীরা অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ন চন্দ্র সরকার ওই বছরের ১০ মে থেকে পরবর্তী বছরের ৯ মে এর মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেন। দেরীতে হলেও রাস্তায় রোলার টানার পরপরই পিচ দেওয়ার আগে ২০২২ সালের ১৪ জুলাই জলোচ্ছ¡াসে রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়।
ঠিকাদার নুরুল হক মোল্য¬া বলেন, ২০২০ সালের ৩ মে ভ্যাটসহ দুই কোটি দুই লাখ টাকার দুই কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কার্যাদেশ পাওয়ার পর ১০ মে থেকে তিনি রাস্তার কাজে হাত দেন। ২০২১ সালের ৯ মে তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ওই বছর ও ২০২২ সালে দুইবার দুর্গাবাটি নামকস্থানে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কাজ বিলম্বিত হয়। রাস্তার কয়েকটি স্থানের উপর দিয়ে পানির স্রোত বয়ে যাওয়ায় ওইসব জায়গা গর্ত হয়ে যায়। প্রথমবার ভেঙে যাওয়ায় তিনি তিন লাখ টাকা খরচ করেছিলেন। দ্বিতীয়বার ভাঙনে ক্ষতির বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাতক্ষীরার কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানালেও তারা এগিয়ে আসেননি । বাধ্য হয়ে তিনি কাজ শেষ না করেই যন্ত্রপাতি নিয়ে চলে এসেছেন।

শ্যামনগরের ৯নং বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ছয় মাস আগে দুর্গাবাটি নামকস্থানে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙনে পোড়া কাটলা থেকে দ্বীপায়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হয়ে তার ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ঠাকুরপাড়ার মোড় পর্যন্ত রাস্তাটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর মধ্যে কিছু রাস্তা নির্মাণাধীন ছিল। ঠিকাদার কাজ করা করায় রেজুলেশন আকারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আক্তার হোসেন বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পূর্ব দুর্গাবাটির বেশ কিছু রাস্তা যানবাহন ও মানুষ চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে তা স্বীকার করেই বলেন, ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করেনি। এরপরও ওই রাস্তা যাতে দ্রæত সংস্কার করা যায় সেজন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version