জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
শ্যামনগরে ইট ভাটায় পুড়ছে কাঠ-টায়ারের গুঁড়া আর বিষাক্ত কেমিক্যাল
গাজী আল ইমরান : ভরা মৌসুমে শ্যামনগর উপজেলার বেশিরভাগ ভাটায় ইট পোড়াতে কয়লার পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ কাঠ, টায়ারের গুঁড়া ও পোড়া মবিল সাদৃশ্য কেমিক্যাল। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধ না করে বরং একই কাজে নিজেও শামিল হয়েছেন উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকও। তার নিজের তিনটি ইটভাটায়ও কয়লার পরিবর্তে পুড়ছে কাঠ, টায়ারের গুঁড়া ও বিষাক্ত কেমিক্যাল। এতে উপজেলার সচেতন মহলের মধ্যে পরিবেশ বিপর্যয়সহ স্বাস্থ্য-ঝুঁকি বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, ইটভাটার মৌসুম শুরুর পূর্বেই সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে জেলার সকল উপজেলার ভাটা মালিকদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে ইটভাটা নীতিমালা অনুযায়ী সকল ভাটা মালিকদের কাঠ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু সেই বিধি নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে বিভিন্ন অপ-কৌশলে উপজেলার ইটভাটাগুলোয় কয়লার ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। শ্যামনগর সদরের ইটভাটা সংলগ্ন কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জানান, ‘ক্লাসের সময় ইটভাটার কালো ধোঁয়া সরাসরি তাদের নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। চোখে বালু ও ধোঁয়া ঢুকে যায়। এতে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। চোখেও সমস্যা হয়। ইটভাটার ট্রাক ও ভেকুসহ বিভিন্ন মেশিনের শব্দে ক্লাসের সময় তারা শিক্ষকদের কথা শুনতে পায় না। বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলা করার সময় ভাটার ট্রাকগুলো দ্রæতগতিতে আসে। এতে তারা ভয় পায়’। উপজেলা সদরের মাহমুদপুর এলাকার কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘প্রতিদিন শত শত ট্রাক মাটি ইটভাটায় যাচ্ছে। ফসলি জমির ওপরের অংশ কেটে ফেলে মাটি ইট ভাটায় নেওয়া হচ্ছে। একারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কাঠ, টায়ারের গুঁড়া আর কেমিক্যালের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও বালু কণার কারণে গাছপালাসহ পারিপার্শ্বিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অথচ এসবের প্রতিরোধ করার কেউ নেই’। সরেজমিনে শ্যামনগর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুল ইসলাম বকুলের পরিচালিত তিনটি ভাটাতেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এছাড়া উপজেলা সদরের ইসমাইলপুরে গোলাম মোস্তফা ও তার ভাই বেলাল হোসেনের ইটভাটা, বংশিপুর চেয়ারম্যান রহিমের ইটভাটা, সোনার মোড় এবং বংশিপুর আশরাফের ২টি ইট ভাটায় ঘুরে একই দৃশ্য চোখে পড়ে। অপরদিকে উপজেলার সোনারমোড় ও রামজীবনপুরে আরব আলির ২টি ইট ভাটায় কাঠ না ব্যবহার হলেও ব্যবহার হচ্ছে কেমিক্যাল। তবে উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ ভাটা মালিকদের দাবি কয়লা না পাওয়ায় এবং কয়লার দাম বৃদ্ধির কারণেই নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজ করে তারা ইট ভাটায় কাঠ, টায়ারের গুঁড়া ও কেমিক্যাল পুড়িয়ে যাচ্ছেন। সোমবার বিকেলে উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের গাজী ব্রিকস্ েগিয়ে কাঠ, টায়ারের গুঁড়া ও পোড়া মবিল সাদৃশ্য কেমিক্যাল ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করার কারণে ভাটার ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম লিটন এ প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার বৃথা চেষ্টা করেন। পরে ইট ভাটার স্বত্বাধিকারী ও উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে সিদ্দিকুল ইসলাম বকুল মোবাইলে বলেন, ‘আমরাতো চুরি করছি না। একটু কাঠ না পোড়ালে চলা যাচ্ছে না। কয়লার অনেক দাম। দেখা করেন নাস্তাপানির খরচ দেবো’। তিনি আরো বলেন, ‘জেলা এবং বিভাগের অনেক জায়গা ম্যানেজ করতে হয়। শ্যামনগরে অনেক প্রতিষ্ঠান আমার অবদানে দাঁড়িয়ে আছে। গোপালপুর স্মৃতি সৌধে ২লক্ষ টাকা দিয়েছি আমাদের ইটভাটা মালিক সমিতি থেকে। এছাড়া শ্যামনগরে অনেক সাংবাদিকদেরও ম্যানেজ করা হয়’। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইটভাটার মালিক জানান, ‘উপজেলার কয়েকটি ইটভাটার মালিকরা বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজ করে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করছেন। কয়লার মূল্য বৃদ্ধির ফলে কাঠ পোড়াচ্ছেন। কয়লার বদলে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ালে ৪০ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় হয়। এসব বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আক্তার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানার বাহিরে ছিল। আমি এখন থেকে এই বিষয়ে তৎপরতা বাড়াব’। 8,581,282 total views, 9,052 views today |
|
|
|