Site icon suprovatsatkhira.com

ঢালির চক খালে বাঁধ দিয়ে প্রভাবশালীদের মাছ চাষ

বি. এম. জুলফিকার রায়হান : তালার খেশরা ইউনিয়নের মুড়াগাছা ঢালির চক খালের জমি বন্দোবাস্ত নিয়ে অবৈধ ভাবে খালের একাধিক স্থানে বাঁধ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য ৭জন ব্যক্তি খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় খাল সংলগ্ন ৫টি বিলের ৩ হাজার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই বিলগুলোর পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সরকারি ঢালির চক খাল। খালের পূর্ব অংশের বিলের জমি মালিকরা ইতোমধ্যে বোরো আবাদ শুরু করলেও গুরুত্বপূর্ণ ঢালির চক খালে বাঁধ দেয়ায় পশ্চিম অংশের ৩ হাজার বিঘা জমি এখনও পানির নীচে। এবিষয়ে কৃষকরা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে আবেদন করেও মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তার রহস্যজনক আচরণের কারণে প্রতিকার পায়নি। যেকারণে কৃষকরা সেচ পাম্প দিয়ে বিলের পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করেও পানি অপসারণের বিকল্প সরকারি পথ না থাকায় তাতেও ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে।

স্থানীয় শাহিনুর ইসলাম, ফারুক হোসেন গোলদার, গিয়াস উদ্দীন গোলদার, জিয়াউদ্দীন গোলদার, মো. আবুল কাশেম, মিঠুবার গোলদার ও আক্তার গোলদার সহ মুড়াগাছা গ্রামে নীতিমালা ভঙ্গ করে সরকারি খালের জমি মুড়াগাছা ও হরিহরনগর গ্রামের একাধিক ভুক্তভোগী কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ঢালির চক বিলের প্রায় ২৫০ বিঘা, সিংয়ের চক বিলের প্রায় ২০০ বিঘা, জালের চক বিলের প্রায় ৩০০ বিঘা, ধোপা চক বিলের প্রায় ৪০০ বিঘা এবং গোয়ালডাঙ্গা চক বিলের প্রায় ৭০০ মিলে ৫টি সংযুক্ত বিলের প্রায় ২ হাজার বিঘা জমি সহ মুড়াগাছা বিলের আরও প্রায় ১ হাজার বিঘা জমির পানি সরকারি ঢালির চক খাল হয়ে বারুইখালী খাল দিয়ে শালিখা নদীতে নিষ্কাশন হয়। কিন্তু ঢালির চক খাল আংশিক ভরাট হয়ে গেলে এলাকার কতিপয় ব্যক্তি ১২বিঘা জমি বন্দোবাস্ত নিয়ে সরকারের সাথে শর্ত ভঙ্গ অবৈধ ভাবে প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করে দেয়। বর্তমানে ওই ১২বিঘা খাস খাল সাদের আলী শেখ, হেলো গোলদার, আক্কাজ আলী, রবিউল ইসলাম, ফয়সাল গোলদার ও টুটুল গোলদার সহ একাধিক ব্যক্তি দখল করছে।

তারা খালের একাধিক স্থানে অবৈধ ভাবে মাটির বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে। এরফলে উপরের ৫/৬টি বিলের প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমিতে এখনও প্লাবিত রয়েছে। এবিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষকরা খালের বাঁধ অপসারণ করার জন্য বারবার বললেও অবৈধ দখলদাররা তাতে কর্ণপাত না করে উল্টো কৃষকদের নানাবিধ হুমকি প্রদান করে। এমনকি নিরীহ কৃষকদের মারপিট করা সহ মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করে আসছে। এঘটনার প্রতিকার পেতে জমি মালিক সহ দরিদ্র কৃষকরা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এবং তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে এলাকার সাবেক ও বর্তমান সকল জনপ্রতিনিধি সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেন। পৃথক দরখাস্ত দুটির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের দপ্তর এবং তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তর থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস ও খেশরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে বলেন।

কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কৃষকরা দীর্ঘ ৫ মাসেও প্রতিকার পায়নি। এরফলে চলতি বোরো মৌসুমে ৩ হাজার বিঘা জমিতের বোরো চাষ যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হবে তেমনি ৪/৫ হাজার মানুষ খাদ্য সংকটের মুখে পড়বে। এবিষয়ে জানতে চাইলে খেশরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল জলিল বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেয়ে সরজমিন তদন্ত করেছি। খালের মধ্য থেকে বাঁধ সরানোর জন্য বলা হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট দ্রæত জমা দিবো। তবে, ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, নায়েব সাহেব বাঁধ সরানোর জন্য বললেও খাস খাল দখলকারী বাঁধ এখনও সরায়নি। যে কারণে বোরো চাষের সময় দ্রæত শেষ হতে যাওয়ায় সকলের চোখে মুখে উদ্বেগ বিরাজ করছে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version