Site icon suprovatsatkhira.com

কালিগঞ্জে বিজয় মেলায় অনুমতিবিহীন লটারির নামে লাখ লাখ টাকা লুট: নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

শেখ শাওন আহমেদ সোহাগ: ‘‘পুরাই মাথা নষ্ট মামা, ওঠাও বাচ্চা ওঠাও, খুশি তো’’ এসব চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিদিন হাজার মানুষদের কাছে বিক্রি করছে লটারি। দিন শেষে ভাগ্যে কিছু না জুটলেও দমছেন না সাধারণ মানুষ। আবার কিনছেন। এভাবে পকেট ভরছে লটারির টিকিট বিক্রির নামে জুয়ার আয়োজকদের। মেলায় লটারি নামক জুয়া, নামমাত্র সার্কাস’র সাথে চলছে অশ্লীল নাচ। সার্কাস দেখতে এসে এই অশ্লীল নাচও দেখছে শিশু-কিশোরেরা। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের শহীদ সামাদ স্মৃতি ময়দানে চলছে জমজমাট লটারি নামক জুয়া আর সার্কাসের নামে অশ্লীল নাচ। প্রতিদিন দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে মাইকের শব্দে এলাকার শিক্ষার্থী সহ ওই মাঠের পাশে অবস্থিত ডা. হযরত আলী ক্লিনিকে থাকা সাধারণ রোগিরা পড়ছে বিপাকে।

জানা যায়, জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর এক মাস সাত দিনের এ মেলার চালানোর অনুমতি দেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট (এনডিসি) বাপ্পি দত্ত রণি। ৩০ ডিসেম্বর থেকে অনুমোদন পাওয়া মেলায় যাত্রাপালায় নগ্ন নৃত্য, লটারী, জুয়া ও হাউজি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ কালিগঞ্জসহ সাতক্ষীরার ক্ষমতাসীন দল ও তার অঙ্গ সংগঠণের নেতা, কয়েকজন বড় মাপের জনপ্রতিনিধি কালিগঞ্জের কিছু চাঁদাবাজ সাংবাদিক ও প্রতিষ্ঠান, অনিবন্ধিত কিছু অন লাইন পোর্টালের সাংবাদিক ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই প্রতিদিন এ রক্তচোষা জুয়া চলে আসছে। প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি করে সার্কাস ব্যতীত অনুমোদনের বাইরে চলছে এ লটারি নামক জুয়া।

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী আর মেলার মাঠের পাশে অবস্থিত ক্লিনিকে ভর্তি রোগিদের কথা না ভেবেই জেলা প্রশাসক শহীদ সামাদ স্মৃতি মাঠে বিজয় মেলার অনুমোদন দিয়েছেন, যেটি নিয়ে সচেতন মহলে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। যদিও জেলা প্রশাসক শুধুমাত্র সার্কাসের অনুমোদন দিয়েছেন তবে সেটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সন্মানহানি করে চলেছে আয়োজকরা। মেলার মেইন গেটে জাতির পিতা, মামনীয় প্রধানমন্ত্রী, সাতক্ষীরা-৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ডা: আ ফ ম রুহুল হক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারালী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট’র বিশাল ছবি টাঙিয়ে চলছে চরম পর্যায়ের অপকর্ম। উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের মোমরেজপুর এলাকার শাহিনুর ইসলাম জানান, গত দুই দিন আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় গিয়েছিলাম। জনপ্রতি ১৫০ টাকা দিয়ে মা, স্ত্রী আর সন্তানকে নিয়ে সার্কাস দেখতে গিয়ে প্রচন্ড বিপাকে পড়েছি।

সার্কাসের নামে চলছে অশ্লীল নাচ-গান আর লটারির নামে চলছে প্রকাশ্য জুয়া। জাতির পিতা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় সংসদ সদস্য’র ছবি টাঙিয়ে এ ধরণের অপকর্মের তীব্র নিন্দা জানান তিনি। কালিগঞ্জের কুশুলিয়া ইউনিয়নের বাজারগ্রাম এলাকার চা বিক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, প্রতিদিন চা বিক্রি করে আয় হয় ৩/৪শ’ টাকা। তবে কয়েক দিন যাবত লটারির ফাঁদে পড়ে অনেকে তার দোকানে আসছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিনিধিকে জানান, প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে লটারির নামে জুয়া আর সার্কাসের নামে অশ্লীল নাচ। প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের উপজেলা থেকে জেলা পর্যায়ের সকল দপ্তরকে ম্যানেজ করে চলছে এ মেলা। প্রতিদিন এসব দপ্তরকে মোটা অংকের অর্থ দিতে হয়।

লটারির ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত মাসুম বিল্লাহ নামের এক ব্যক্তি জানান, মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে চলছে লটারি। লটারির ফাঁদে পড়ে সমিতি থেকে টাকা তুলে একটানা ১৫ দিন লটারির টিকিট কেটে সর্বশান্ত হয়ে গেছি। সমিতির টাকা কিভাবে শোধ করবো সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। স্থানীয় ফিরোজ হোসেন, সুমন হোসেন, আল-আমিন, মাহিম, মোমিন হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, বিজয় মেলার চলছে অশ্লীল নাচ-গান আর লটারির নামে চলছে প্রকাশ্য জুয়া। প্রতিদিন রাত ১০ টা থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারিত হয় লটারি খেলা। এ মেলার কারণে বিপথে চলে যাচ্ছে উঠতি বয়সের কিশোররা। গ্রামে চুরির পরিমাণ বেড়ে গেছে।

লটারি নামক জুয়া আর অশ্লীল নাচ গানের কারণে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে জানান তারা। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান এ প্রতিনিধিকে জানান, বিনোদনের জন্য সার্কাস বা মেলার অবশ্যই প্রয়োজন। তবে সার্কাসের নামে অশ্লীল নাচ-গান আর লটারির নামে প্রকাশ্য জুয়াকে আমি সমর্থন করি না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, মাননীয় সংসদ সদস্য ডা: আ ফ ম রুহুল হকের ছবি টাঙিয়ে এ ধরণের অপকর্ম খুবি দুঃখজনক।

এ বিষয়ে লটারির পরিচালক মানিক শিকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি দম্ভের সাথে বলেন, ‘‘ওঠাও বাচ্চা নামক লটারি জন্য সারাদেশে তার ৬৬ হাজার জুয়ারি রয়েছে। তার লটারির জুয়ার টাকা মন্ত্রী, এমপি, প্রশাসনের উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের দিয়ে থাকেন। প্রশাসন, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে কালিগঞ্জে লটারি চলছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীর জানান, বিজয় মেলার জন্য তিনি অনুমতি দিয়েছেন। তবে বিজয় মেলার নামে অবৈধ লটারির বিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসারকে ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version