নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার উপক‚লের একসময়ের প্রবাহমান নদী আদি যমুনা জন-দাবি পরিপ্রেক্ষিতে আবার খনন শুরু হচ্ছে। এবার মৌতলা (কালিগঞ্জ) এলাকা হতে শুরু করে শ্যামনগরের সদরের শশ্মানঘাট পর্যন্ত খনন করা হবে বলে জানা গেছে। দু উপজেলার পানি নিষ্কাশনের প্রধান পথ এটি। আবার ইছামতির সাধু পানির প্রবাহ সুন্দরবন এলাকায় যাওয়ার পথও এটাই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অদূরদর্শিতার কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে জনগণ ‘আদি যমুনা বাঁচাও আন্দোলন কমিটি’র নেতৃত্বে নদী পুন:উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ২০০৪ সালের উদ্ধার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ২০১০ সালে স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে খনন কার্য করা হয়।
আর আন্দোলন করতে যেয়ে ভূমি দস্যু ও প্রশাসনের হাতে নাজেহাল হতে হয় অনেককে। হামলা মামলা এমনকি হত্যার শিকার হয়েছেন অনেকেই। জন-দাবি মাফিক কার্যক্রম না হলেও জনগণ যে টুকু হয়েছিল, তাতেই কতৃপক্ষকে সাধুবাদ জানায় আগামীতে আরো কাজ হবে এ প্রত্যাশায়। আদি যমুনা নদী একমাত্র ইছামতির পানি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রধান মাধ্যম। এ নদীর দু কুলে সরাসরি যুক্ত ৮ টি ইউনিয়ন আর পরোক্ষ ভাবে প্রায় ১৫ টি ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশন ও প্রবাহের মাধ্যম। ফলে স্থানীয় ভুক্তভোগী মানুষ, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের পক্ষ হতে আদি যমুনা নদীকে সরকারী ভাবে চিহ্নিত করা ১২০ ফুট প্রসস্ত করে খননের দাবি জানানো হয় এবং বাধাহীন ভাবে ইছামতির পানি মাদার নদী, মালঞ্চ নদী হয়ে সুন্দরবন সংলগ্ন প্রবেশ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা। দীর্ঘ দেন দরবারের পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীটি খননের উদ্যোগ দিয়েছে কিন্তু সেই গ্রামীণ প্রবাদ ‘নদী কেটে খাল করা হচ্ছে’। যার বিরুদ্ধে আপত্তি শ্যামনগর কালিগঞ্জের দু উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সাধারণ মানুষদের। নদীর সীমানা ছিল ১২০ ফুট, গতবারে খনন করা হয় ৮০ ফুট, এবার সেটি হচ্ছে ৬০ফুট যার মধ্যে মাটিও ফেলা হচ্ছে। কালিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী বলেন ‘আমাদের দাবি নদী খননের কিন্তু যে ভাবে খনন হচ্ছে তাতে নদী আর থাকবে না। এটি নালায় পরিণত হবে’। শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন বলেন, আমরা বারবার বলছি আগে নদীর সীমানা চিহ্নিত করুন। এরপর খনন করুন। নদী যে ভাবে কাটা শুরু হয়েছে তাতে মানুষের ক্ষতিই উপকারের সম্ভাবনা নেই।’
আদি যমুনা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী বলেন, ‘আদি যমুনা নদী প্রবাহমান করতে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছি। জনপ্রত্যাশা এভাবে খনন করলে জন-প্রত্যাশা পূরণ হবে না। সাতক্ষীরার অন্যসকল নদী খননের অভিজ্ঞতা বলে এভাবে খনন করা হলে,এটি জন দুর্ভোগের কারণ হবে।’ তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড আদি যমুনা নদীকে খাল হিসেবে উল্লেখ করে সাইনবোর্ড দিয়েছে। যেটা নিয়ে সবল মহল থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে কিন্তু উন্নয়ন বোর্ড তার সিদ্ধান্ত থেকে সরেনি।’ আদি যমুনা নদীর বর্তমান খননের বিষয়ে কোন তথ্য বোর্ড দেওয়া হয়নি। যেটি সকল কার্যক্রমের পূর্বে প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। তথ্য অধিকার আইনের আওতায় এটি জনগণকে জানাতে কতৃপক্ষ আইনগত ভাবে বাধ্য। স্থানীয় মানুষদের পক্ষ হতে আদি যমুনা নদীর সীমানা চিহ্নিত করে কমপক্ষে ১০০ ফুট প্রসস্ত করে খননের দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিয়ে ডিসপ্লে বোর্ড প্রদান ও জন তদারকি করার ব্যবস্থা জরুরী বলেও দাবি করা হয়েছে।