Site icon suprovatsatkhira.com

এক নারীর ধর্ষণের ভিডিও চিত্র সংগ্রহ করে ব্লাকমেইল

নিজস্ব প্রতিনিধি: এক নারীর ধর্ষণের ভিডিও চিত্র সংগ্রহ করে তাকে ব্লাকমেইল করার অভিযোগে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদহা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম মোশাররফ হোসেন ও পর্ণগ্রাফি ভিডিও চিত্র ধারণকারি রাজীব হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার রাত ১০টার দিকে তাদেরকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত মোশাররফ হোসেন(৪৫) বাঁশদহা ইউনিয়নের রেউই বাজার এলাকার মৃত রজব আলীর ছেলে ও ইউনিয়ন আ’লীগের বহিস্কৃত সভাপতি। গ্রেপ্তারকৃত অপর আসামী রাজীব হোসেন (৩০) সদর উপজেলার কাওনডাঙা গ্রামের সামছুর রহমানের ছেলে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদহা ইউনিয়নের কামারবায়সা গ্রামের ২২ বছরের এক নারী বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সদর থানায় বসে এ প্রতিবেদককে জানান, পার্শ্ববর্তী কাওনডাঙা গ্রামের সামছুর রহমানের ছেলে রাজীব হোসেন (৩০) রাস্তা ঘাটে ও মোবাইলে তাকে বিভিন্ন সময়ে উত্যক্ত করতো। আট বছর আগে থেকে মা সৌদি আরবে থাকায় নির্মাণ শ্রমিক বাবা তাকে ও তার ছোট বোনকে নিয়ে হাওয়ালখালি গ্রামের মামার বাড়ির পাশে আরিজুলের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ছোট বোন খুলনায় নার্সি ট্রেনিং এ ভর্তি হলে বাবা তাকে নিয়ে সাতক্ষীরা শহরের মুন্সিপাড়ার নূর হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে রাজীব হোসেন তাদের বাসায় এসে বাবা বাড়িতে না থাকার সুযোগে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। বিষয়টি কাউকে জানালে ধর্ষণের সময় ধারণকৃত ভিডিও ইন্টারনেটে ও স্বজনদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় রাজীব। বিষয়টি বাড়িওয়ালার স্ত্রীকে জানালে তিনি তাদের ঘর ছেড়ে দিতে বলেন। এক পর্যায়ে বাবা মামার বাড়ির পাশে (হাওয়ালখালিতে) জনৈক পলাশের বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে তাকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ১৩ আগস্ট রাত ১১ টার দিকে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে মায়ের সঙ্গে কথা বলার সময় রাজীবসহ দুইজন তাকে জোরকরে ধরে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। পরপর দুই দিন তাকে আটক রেখে ধর্ষণ করে রাজীব। জাকির হোসেন তার বন্ধু রাজীবের মোবাইল ফোর দিয়ে ধর্ষণের ভিডিও এবং স্থির চিত্র ধারণ করে।

বাবা ও মামারা তাকে খোঁজাখুজি শুরু করলে ১৫ আগস্ট রাত ২টার দিকে তাকে হওযালখালি গ্রামের খালার বাড়ির পাশে ফেলে রেখে চলে যায়। ধর্ষণের ছবি ইন্টারনেটে ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে রাজীব তাাকে বিভিন্ন স্থানে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে। বাধ্য হয়ে তিনি বাদি হয়ে ১৮ আগস্ট রাজিবসহ দুইজনের নাম উলে¬খ করে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(১),৭/৩০ ধারায় ও ২০১২ সালেল পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে অভিযোগ দায়ের করেন। দুর্ভাগ্য মামলা রেকর্ড হওয়ার পর তাতে পর্নোগ্রাফি আইনের ধারা উল্লেখ নেই বলে জানতে পারেন। এমনকি মামলার পরদিন থেকে কয়েকদিন থানায় এসে ডাক্তারি পরীক্ষার কথা বললেও আলামত নষ্ট করতে ১০ দিন পর সদর হাসপাতালে তার ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। এরপর রাজীব জামিনে মুক্তি পেয়ে তার বন্ধু হাওয়ালখালি গ্রামের জাকিরকে নিয়ে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া শুরু করে। রেউই বাজারের নয়নের কম্পিউটার দোকান থেকে তার নগ্ন ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চায় ধর্ষক রাজীব হোসেন।

হাওয়ালখালি গ্রামের জাকির হোসেনও তাকে ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার নাম করে তাকে কু’প্রস্তাব দিতো। ধর্ষক রাজীব হোসেন কয়েক দফায় তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা আদায় করে। তার ধর্ষণের ভিডিও চিত্র বিভিন্ন গণযোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার নাম করে বাঁশদাহ ইউপি’রন সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মোশারফ হোসেন গত ১৫ সেপ্টেম্বর মোবাইল ফোনে তাকে কু’প্রস্তাব দেয়। তার ডাাকে সাড়া না দেওয়ায় মোশাররফ তার নিজ ফেইসবুক আাইডি থেকে অশ্লীল ভাষা রিখে তাকে ম্যাসেজ দিতো। কোন উপায় না দেখে তিনি থানায় মামলা করনার চেষ্টা করলে প্রভাবশালী মোশাররফ হোসেন ও তার নিকটের লোকজনের প্রভাবের কারণে তিনি বারবার থানায় যেয়েও মামলা করতে পারেননি।

এক পর্যায়ে বুধবার রাত ৮টায় তিনি রাজীব, জাকির ও মোশাররফ হোসেনের নাম উলে¬খ করে মঙ্গলবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ রাজীবকে আটকের পর নয়নের কম্পিউটার, রাজীবের মোবাইল ফোন জব্দ করে নগ্ন ভিডিও চিত্র পায়। বুধবার রাতে মামলা রেকর্ড করার পরপরই পুলিশ ইউপি চেয়ারম্যান মোশররফকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার করার পর মোশাররফ চেয়ারম্যানের স্বজনরা তার (ধর্ষিতাকে) ও কাওনডাঙা বাজারের মুদি ব্যবসায়ি মামাকে খুনের হুমকি দিয়েছেন। এখন তিনি, তার বাবা ও মামা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
এ ব্যাপারে গ্রেপ্তারকৃত মোশররফ চেয়ারম্যানে কাছে বৃহস্পতিবার দুপুরে থানা চত্বরে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে চাননি।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, এ ঘটনায় কামারবায়সা গ্রামের এক নারী বাদি হয়ে বুধবার রাজিব, জাকির ও মোশাররফ হোসেনের নাম উলে¬খ করে ২০১২ সালের পর্ণোগ্রাফি আইনে বুধবার রাতে মামলা দায়ের করেছেন। বুধবার রাজীব ও মোশাররফকে গ্রেপ্তারের পর তাদের মোবাইল পরীক্ষা করে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এপেন্ডিসাইটসের প্রচÐ ব্যাথার কারণে গ্রেপ্তারকৃত রাজীবকে পুলিশ প্রহরায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মোশাররফকে বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামী জাকিরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

https://www.facebook.com/dailysuprovatsatkhira/
Exit mobile version