ডিসেম্বর ১৮, ২০২২
স্মরণ: একেএম আনিছুর রহমান চাইতেন সুপ্রভাত সাতক্ষীরার দায়িত্ব নিক সুভাষ চৌধুরী ......... তানজির কচি
অনেকটা নীরবেই কেটে গেল দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক একেএম আনিছুর রহমানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৫৬ বছর বয়সে একেএম আনিছুর রহমান সবাইকে কাঁদিয়ে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। গত এক বছর তার সাথে আমার ব্যক্তিগত স্মৃতি নানাভাবেই সামনে এসেছে, মনে পড়েছে। তাকে নিয়ে মানুষকে কত গল্পই না শুনিয়েছি, যারা আমাদের সম্পর্ক সম্পর্কে জানতেন, তারা বিশ্বাস করেছে, যারা জানতেন না, তারা আজগুবি গল্প ভেবেছে। যাকে চিনতামই না, তার সাথে বছর দুয়েক কত যে ঘনিষ্ঠতা তা বলে শেষ করার মতো স্বল্প বিষয় নয়। আবার দু’বছর ঘুরতেই নানা সমীকরণের মুখে দাড়িয়ে সম্পর্কের টানাপোড়েন, কত যে তিক্ততা- সেটিও ছোটখাট কোন বিষয় ছিল না।
টানাপোড়েনের মধ্যেই একেএম আনিছুর রহমানের অকাল প্রয়াণ। তিনি নেই এটা ভাবতেও অবাক লাগে। একদিন বেলা ১১টার দিকে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বসে কাজ করছি, হঠাৎ শামীম পারভেজ এসে পাশে বসলেন। বললেন, তানজির আনিছ ভাই সাজেক্রীসের (সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থা) নির্বাচন করবে, একটু কাজ করতে হবে নে। আমি প্রশ্ন করলাম কোন আনিছ ভাই, আনিসুর রহিম (সম্পাদকমÐলীর সভাপতি, দৈনিক পত্রদূত) স্যার? বললেন না, চায়না বাংলার মালিক আনিছ। আমি বললাম আপনার কেমন ভাই, বললেন হ্যাঁ আমার ভাই। আমি বললাম, আপনার ভাই- অবশ্যই কাজ করবো। এরপর দু’এক দিন কেটে গেল। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় শামীম পারভেজ বললেন, আজ আর বাইরে কোথাও যাব না, আনিছ ভাইয়ের ওখানে যাব। তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছেন। শামীম পারভেজের সাথে গেলাম চায়না বাংলা শপিং কমপ্লেক্সে। তখন তিনি তিনতলায় বসতেন। গেলাম, গিয়ে দেখি এরিয়ান্স ক্লাবের শানু মামাসহ ক্রীড়াঙ্গনের বেশ কয়েকজন। শামীম পারভেজ একেএম আনিছুর রহমানকে বললেন, ভাই এই তানজির, ওকে আনতে বলেছিলেন। এর আগে তিনি আমাকে কখনও দেখেননি, আমিও না। ছোট্ট করে বললেন বসো। অন্যান্যরা আড্ডায় মত্ত। আমাকে পাশে ডেকে নিয়ে বসিয়ে বললেন, আমি সাজেক্রীসের ভোট করবো। বিসিবি থেকে একটা বায়োগ্রাফি চেয়েছে। তোমরা যে স্টাইলে বিভিন্নজনকে নিয়ে ফিচার লেখ, ও রকম হতে হবে। আমি বললাম লিখে দেব। কিন্তু এতো হট্টগোলের মধ্যে না, আমাকে আধা ঘণ্টা সময় দিতে হবে সিঙ্গেলি। বললেন আচ্চা, তাহলে আজ না কাল রাত ১০টায়। কেউ থাকবে না তুমি আমি আর শামীম। আমি বললাম জি। পরের দিন গেলাম। তার সাথে বসে কফি’তে চুমুক দিতে দিতে তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য নোট বইতে লিপিবদ্ধ করলাম। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার শুরুতেই বললেন, শোন দুই একটা কিন্তু বানিয়ে বানিয়ে বলবো। আমি বললাম চলবে- সমস্যা নেই। যাই হোক, তথ্য উপাত্ত নিয়ে পরের দিন বেশ সময় ধরে তার উপর একটা ফিচার লিখে শামীম পারভেজকে মেইল করলাম। শামীম পারভেজ সেটি প্রিন্ট আউট করে পরের দিন রাতে একেএম আনিছুর রহমানকে দেখালেন। পরে শামীম পারভেজের মাধ্যমে জানতে পারলাম লেখাটি তার খুব পছন্দ হয়েছে। এরপর প্রায় দিনই শামীম পারভেজ রাতে তার ওখানে নিয়ে যেতেন। আমরা (আমি ও রাজীব আহসান) ওখানে ততটা স্বস্তি বোধ করতাম না, ওখানে সব সিনিয়র লোকজন, তাও বিভিন্ন ক্ষেত্রের। গেলে চুপচাপ বসে কফি ও নাস্তা খাওয়া ছাড়া কোন কাজ হতো না, বাইরে ঘোরাঘুরিও হতো না। নাস্তা শেষে বেশ রাত ১০টার দিকে শামীম পারভেজ বলতেন, তোমরা এবার যাও। আমি ভাইর সাথে কথাবার্তা বলে তাড়াতাড়ি বের হবো। নইলে আমার বাড়ি যাওয়া হবে না। এভাবে এক দিন, দুদিন পার হলো। সাজেক্রীসের নির্বাচন ঘনিয়ে এলো। একেএম আনিছুর রহমান সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হলেন। আমরা বেশ কয়েকদিন মাইক্রো ভরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গিয়েছি নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে। এর মধ্যে তাকে নিয়ে মিডিয়া ক্যাম্পেইনের দায়িত্ব আমার উপর। তাকে নিয়ে লেখা ফিচার বাংলানিউজ, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক পত্রদূত, সাতনদী ও দক্ষিণের মশাল-এ প্রকাশিত হলো। তবে, সবচেয়ে ইতিবাচক শিরোনাম হলো দৈনিক ইনকিলাব-এ। তারা সাপ্তাহিক স্পোর্টস ফিচার পাতায় আট কলাম জুড়ে প্রকাশ করলো ‘সাতক্ষীরার স্বপ্নবাজ একেএম আনিছুর রহমান’ শিরোনামে। সবমিলিয়ে তাকে সাজেক্রীসের নির্বাচনে জেতাতে আমাদের প্রচেষ্টাটা ছিল বেশ জোরেশোরে। আমরা ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিতজনদের সাথে কথা বলতাম, খবরাখবর দিতাম, নিতাম। একই সাথে গণমাধ্যমের সাপোর্টটি একেএম আনিছুর রহমানের পক্ষে আনতে জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন চ্যানেল আইয়ের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি, পত্রদূতের উপদেষ্টা সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের তৎকালীন সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। ভোট হলো, একেএম আনিছুর রহমান তার প্যানেলের বেশির ভাগ প্রার্থীকে নিয়ে জয়লাভ করলেন। আমাদের প্রার্থী জেতায় আমরা বেজায় খুশি হলাম। ভোটের ক্যাম্পেইনের মধ্যেই চায়না বাংলা শপিং কমপ্লেক্সের চতুর্থ তলায় চায়না বাংলা গ্রুপের কর্পোরেট অফিস তৈরি হয়েছে। ওদিকে সিবি হসপিটালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পর ভবন নির্বাচনের কাজ চলমান। ভোটের পরে একদিন রাতে শামীম পারভেজ নিয়ে গেলেন চায়না বাংলা শপিং কমপ্লেক্সের চতুর্থ তলায়। সেখানে একেএম আনিছুর রহমানের অফিস ও বিশ্রাম ঘর পাশাপাশি। কেউ নেই। রাত ১০টা বাজে। অফিস থেকে উনার বিশ্রামের ঘরে গেলাম আমরা তিনজন। টিভি ছেড়ে কফি-তে চুমুক দিতে দিতে বললেন, চাচ্চা ভোট তো হয়ে গেল। অনেক কাজ করেছ। এবার আমার একটা শখ পূরণ কর। আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম, এতো বিত্তশালী মানুষের শখ আমি কিভাবে পূরণ করবো। উনি বললেন, আমার একটা পত্রিকা বের করার শখ। ওটা তুমি দায়িত্ব নিয়ে বের কর। আমি উত্তর দিয়ে বললাম, সরি আংকেল আমি পারবো না। আমি আর লোকাল মিডিয়ায় রাত জেগে কাজ করতে চাই না। কাজ করলে আমি পত্রদূত ছাড়তাম না। কারণ টাকা পয়সা কম থাকলেও পত্রদূতকে আমি আইডিয়াল হাউজ মনে করি। (যদিও পত্রদূত ছাড়ার পর সাতনদী সম্পাদক হাবিবুর রহমানের অনুরোধে সাতনদী নতুন কলরবে বের করার জন্য ও দৈনিক দক্ষিণের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহীর অনুরোধে মশাল’র আত্মপ্রকাশের সময় অল্পদিন কাজ করতে হয়েছে।) আমার কথা শুনে উনি, কোন রিঅ্যাক্ট না করে বললেন, একটু দেখ, ভেবে দেখ। তারপর থেকে বেশ কিছু দিন পত্রিকা নিয়ে আমাদের আলাপ হয়নি। মাঝে মাঝেই তার ওখানে শামীম পারভেজের সাথে যাওয়া হতো। খাওয়া দাওয়া গল্প হতো। হঠাৎ একদিন, বাংলানিউজ অফিস থেকে তৎকালীন চিফ অব করেসপন্ডেন্ট সেরাজুল ইসলাম ফোন দিয়ে বললেন, ‘তানজির ভাই। আমরা সাতক্ষীরা আসছি। বাংলানিউজের ‘বছরঘুরে দেশজুড়ে’ শিরোনামে যে বিশেষ প্রোগ্রাম চলছে, ওটার দক্ষিণাঞ্চলের ভেন্যু হবে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সুশীলন টাইগার পয়েন্ট। আমরা বেশ কিছু স্পন্সর পেয়েছি। ইউএস বাংলা, সুশীলন, বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট কোম্পানি, খুলনা ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি- এরা স্পন্সর করছে। এখন সাতক্ষীরা থেকে আপনি একটু দেখেন স্পন্সর পাওয়া যায় কি না। তবে, আসিফ আজিজ (সাহিত্যিক অধ্যাপক গাজী আজিজুর রহমানের ছেলে, বাংলানিউজের তৎকালীন অ্যাসিসটেন্ট আউটপুর এডিটর) বলছিলেন, বরসা রিসোর্টের কথা। যেহেতু আমাদের প্রোগ্রাম পর্যটন নিয়ে, সেহেতু ওরা বেটার হতে পারে।’ আমি তো শুনে কিছুটা ভ্যাবাচকা হয়ে পড়লাম। আনিছ আংকেলের সাথে এতো ভাল সম্পর্ক। কিভাবে তার কাছে আমি স্পন্সরশিপের কথা বলবো- এটা ভেবে বিব্রত হলাম।। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে শামীম পারভেজের সাথে আলাপ করলাম। বললাম, অফিস বরসা রিসোর্টের কথা বলেছে, কি করবো, উনি বললেন আনিছ ভাইর সাথে আলাপ কর, সমস্যা হবে না।
আনিছ আংকেলকে বললাম, আংকেল অফিস থেকে আপনার কাছে আসতে চায়, আমি পরিস্থিতির শিকার, বিব্রত। ওরা আসলে, আপনি কিছু একটা বলে একটু ম্যানেজ কইরেন। উনি বললেন আসুক।
পরে আমরা প্রেসক্লাবে আসলাম। আসলেই প্রেসক্লাবে অবস্থানরত শামীম পারভেজ বললেন, কি এক লাখ দেছে, আমাকে ফোনে বলেছে, তানজিররে কিন্তু এক লাখ দিয়ে দিলাম। আমি বললাম হ্যাঁ। কিন্তু এতোটা করবে বুঝতে পারিনি। এতো দরকার ছিল। আমি নিজেও তো এখনো ওখান থেকে এতো টাকা সম্মানী পায়নি। এতো দিয়ে লাভ কি। বললেন ভাই তোমাকে খুব স্নেহ করে, তোমার যদি অফিসে এজন্য একটু গুরুত্ব বাড়ে, তাই আর কি। এভাবে চলতে চলতে একদিন চারতলায় আনিছ আংকেলের রুমে আমি ও শামীম পারভেজ বসা। হঠাৎ আনিছ আংকেল বলে উঠলেন, দেখ আমার শখ একটা পত্রিকা বের করা। আমি মনে প্রাণে চাইতাম সুভাষ দা পত্রিকাটার দায়িত্ব নিক। মানে সুভাষ চৌধুরী। কিন্তু দাদা রাজি হইনি। এর পর অনেকেই নিজে থেকে চেয়েছে পত্রিকার দায়িত্ব নিতে। কিন্তু তাদের আমার পছন্দ হয় না। তারাও সাংবাদিক, মাট্রিক পাস, কিন্তু ও হবে না। এখন তুমি একটু দেখ। শুনতে শুনতে আমি বলে বসলাম, আমি যেভাবে চাইবো, তা শুনলে তো আপনার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। উনি বললেন, কি চাও, আমার সব ধনসম্পদ দিয়ে দিতে হবে না কি। আমি বললাম না। গতানুগতিক পত্রিকা বের করে তো লাভ নেই। একশ, দুইশ, পাঁচশ বের করলাম, সরকারি অফিসে দিলেন, হয়ে গেল, এমন হলে বের করার দরকার কি। উনি বললেন, তা হবে কেন, ভাল করে বের করবা। আমি বললাম, সমস্যাটা ওখানেই। যারা ট্রাডিশনালি সাংবাদিকতা করে, কম, বেশি যাই হোক, তাদের দিয়ে এখন ভাল নিউজ ডেভলপ করা অসম্ভব। সব সি সি’তে চলে। উনি বললেন, তা তুমি কি করতি চাও। আমি বললাম, আমি দায়িত্ব নিলে আমার হাউজে পুরাতন কোন লোক থাকবে না। আমি ফ্রেশ অনার্স মাস্টার্স পড়া কয়েকটা ছেলে নেব, তাদের ছয় মাস সাংবাদিকতা শেখাব, তারপর তারা তৈরি হলে তখন ডামি পত্রিকা বের করবো, তারপর পত্রিকা মার্কেটে আসবে। কিন্তু এজন্য তো অনেক খরচ। উনি বললেন, খরচ সমস্যা না, তাই হবে তুমি তোমার ওয়ার্ক প্লান রেডি কর, কত খরচ হবে বল। আর সেই সাথে পত্রিকার ডিক্লারেশন এর জন্য কাগজপত্র রেডি করে জমা দাও। আমি বললাম এখনো ডিক্লারেশন হয়নি? তাহলে কিভাবে সম্ভব, কবে হবে তারও তো ঠিক নেই। আদৌ হবে কি না? উনি বললেন, তুমি তো ছয় মাস সময় চেয়েছ, তোমার লোকজন তৈরি করতে, আমার কাছ থেকে ছয়মাস পরে বুঝে নিও। এখন যতদ্রæত সম্ভব আবেদন জমা দাও ডিসি অফিসে। যারা পত্রিকার দায়িত্ব নিতে চাই, তারা কাগজ একবার রেডি করে দিছিল, কিন্তু তা অফিস চেঞ্জ করতে যেয়ে হারিয়ে গেছে। বললাম, ওকে।
পরের দিন প্রেসক্লাবে, আমি কালাম আংকেলকে ডেকে বললাম, আনিছ আংকেল পত্রিকার দায়িত্ব নিতে বলে, আসলে আমি পারবো কি না, আর আমি নতুনদের নিয়ে কাজ করার প্রস্তাব দিয়ে এসেছি। উনি সাহস দিলেন, পারবা। দায়িত্ব নাও। হেল্প আমি করবো, সমস্যা হবে না।
এদিকে, আমি একটা প্রোপজাল রেডি করে আনিছ আংকেলকে দিলাম। সেখানে টিমে নয়জনকে রাখা হলো। শর্ত সবাইকে সাংবাদিকতা ও গ্রাফিক্স এর কাজ হাতে কলমে শিখতে হবে। প্রথম ছয়মাস হবে প্রশিক্ষণ। আমি নিজেই প্রশিক্ষক। সবাই প্রশিক্ষণকালীন সময় থেকেই তাদের জন্য নির্ধারিত সম্মানী পাবেন। আমি শামীম পারভেজকে বললাম আমি সম্মানী নেব না। এমনিতেই আমার জন্য আনিছ আংকেল বাংলানিউজকে এক লাখ টাকা স্পন্সর করেছে। তিনি বলতেন, এটা শুনলে আনিছ ভাই রাগ করবে, এটা তার উপর ছেড়ে দাও।
যাই হোক, আমাদের প্রশিক্ষণ চলতে থাকলো। টিমের সবাই লিখতে শুরু করলেন। অ্যাসাইনমেন্ট কাভার করতে শুরু করলেন। হাতে কলামে গ্রাফিক্স এর কাজ করতে থাকলেন।
প্রায় সাড়ে তিন মাস পর আমরা পত্রিকা ডামি পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম। কিন্তু প্রিন্ট করতাম না। এর কিছুদিনের মধ্যেই খবর এলো পত্রিকার ডিক্লারেশন হয়ে গেছে। আরও আগে হতো, নাম নিয়ে জটিলতার কারণে একটু দেরি হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার প্রত্যেক উপজেলাসহ সম্ভাব্য সবজায়গায় প্রতিনিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপর আমরা ডামি প্রিন্ট করা শুরু করলাম। ঠিক হলো জুলাই মাসে পত্রিকা বাজারে আসবে। উদ্বোধনী সংখ্যা হবে ১৬ পাতার। ব্যাপক তোড়জোড় করে ১৬ পাতার উদ্বোধনী সংখ্যার প্রস্তুতি নেওয়া হলো। জুলাই মাসের শেষে পত্রিকা বাজারে আসলো। এরপর সংসদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতার সাথে রিপোর্টিং করে আমাদের পত্রিকা পাঠকের কাছে আস্থা অর্জন করতে শুরু করলো। তখন সুপ্রভাত সাতক্ষীরা মানে প্রতিদিন কোন না কোন নতুন আইটেম। এভাবে চলতে থাকলো পত্রিকাটি। এক পর্যায়ে ২০১৯ সালের ৩০ মে পত্রিকাটির দায়িত্ব ছেড়ে একেএম আনিছুর রহমান ও শামীম পারভেজের সাথে কথা বলে স্বেচ্ছায় বেরিয়ে আসি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তারপর একেএম আনিছুর রহমান, শামীম পারভেজ ও আহসান রাজীবের সাথে আমার দূরত্ব বেড়ে গেল যোজন যোজন। আমরা হয়ে উঠলাম একে অপরের শত্রু।
ভাবতাম কোন একদিন আবার সামনা সামনি বসে কথা হবে। সেদিন কথার পাঞ্জা লড়বো দুই বাপ-ব্যাটা। এরপরই আমার বড় ভাইয়া ফোন করে শুনতে চাইলো, বিষয়টি সঠিক কি না, ইতোমধ্যে আমি কালাম আংকেলের কাছে ফোন দিয়েছি খবর জানতে। এভাবে কেটে গেল বেশ কিছুটা সময়। মনের মধ্যে হু হু করতে ক্রদন হতে লাগলো। তারপরও অফিসে গেলাম। ফিরে এসে আর কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছিলাম না। মনকে কোন ভাবেই শান্ত করতে পারছিলাম না। সাতক্ষীরার হাজারো মানুষের কর্মস্থান গড়ার কারিগরের এমন অকাল মৃত্যু, আমাকে শুধু সেই দিন নয়, এখনো ঘুমাতে দেয় না। সুপ্রভাত সাতক্ষীরা ছাড়ার পর শামীম পারভেজ ও আহসান রাজীবের সাথে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, সেটা কমেছে। কিন্তু আনিছ আংকেল এখন নেই। তিনি আছেন কেবল মনে। যেখানেই যায়, মনের মধ্যে ভেসে ওঠে একেএম আনিছুর রহমানের মুখটি। লেখক: প্রতিষ্ঠাকালীন নির্বাহী সম্পাদক, সুপ্রভাত সাতক্ষীরা। 8,549,686 total views, 292 views today |
|
|
|