এম জালাল উদ্দীন, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : খুলনার পাইকগাছায় প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে অবাধে চলছে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির কারখানা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পরে অত্যন্ত সুচতুরভাবে কয়লা কারখানাগুলো পরিচালনা করছেন কারখানার মালিকরা। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বাড়ছে বায়ু দূষিত নানাবিধ রোগব্যাধির সংক্রমণ। এ নিয়ে কয়েক মাস পূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। খবর প্রকাশে সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসন পরিবেশ সুরক্ষায় উপজেলার চাঁদখালী অবৈধ কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির কারখানা বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
অবৈধ চুল্লি ধ্বংস বা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করেন খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. আসিফুর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম। এসময়ে ৬৯টি চুল্লির মধ্যে স্কেভেটর দিয়ে ৫টি ধ্বংস করা হয়েছিল। বাকী কয়লা চুল্লি গুলো বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। মানবিক কারণে ১ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ ও অপসারণ করার শর্তে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু শাহাজাদা ইলিয়াস সুপারিশ করায় কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেন। এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও বন্ধ হয়নি কয়লার চুল্লি, আবারও নড়েচড়ে বসেছেন মালিকপক্ষ। জানা যায়, একটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ থেকে ৩০০ মন পর্যন্ত কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিবার কমপক্ষে ২৫ হাজার মন কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিমাসে প্রত্যেকটি চুল্লিতে ৩ থেকে চারবার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করা হয়। ফলে প্রতিমাসে কয়লার চুল্লিতে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ফলে ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি সহ সামাজিক বন। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ।
বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকায় বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, প্রকৃতি ধ্বংসসহ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও কোন প্রতিকার মিলছে না। স্থানীয়রা জানায়, অধিক লাভজনক হওয়ায় সবদিক ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসায় নেমে পড়েছেন এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিও। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চুল্লির কারণে রাস্তা দিয়ে চলা যায় না। চোখ জ্বালা করতে থাকে। দম বন্ধ হয়ে আসে। এ সকল কাঠ কয়লার চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে পথচারীসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চোখের বিভিন্ন সমস্যাসহ শ্বাসতন্ত্র জনিত সমস্যা যেন লেগেই থাকে। চুল্লি মালিকরা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। কাঠের চুল্লিতে ব্যবহার, অধিক জনসংখ্যার চাপ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বন উজাড় হচ্ছে। বনজ সম্পদ রক্ষা করা না হলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে, যার প্রভাব পড়বে প্রকৃতিতে। দিনের পর দিন এমনি ভাবে বনজ সম্পদ কেটে চলেছে যার কারণে পরিবেশ আজ বিপর্যয়ের মুখে। কয়লা চুল্লির মালিক মিঠু’র কাছে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের বলেন, কোন ব্যবসা বৈধ নয় সব ব্যবসাই অবৈধ।
আমরা গরিব মানুষ সামান্য ছোট পরিসরে ব্যবসা করি। আমরা কোনো শিল্পপতি না। খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) মো. আসিফুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি ওইখানে নতুন করে আরো কিছু চুল্লি তৈরি হয়েছে। আমরা গতবার যখন অভিযান চালাই আমরা অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। কিছু নারীরা আমাদেরকে বাধা সৃষ্টি করেছিল। আমারা অতি শীঘ্রই অভিযান চালাব এবং এমন ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যাব। যেন সবগুলো ভেঙে দিতে পারি। পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতাজ বেগম বলেন, কাঠপুড়িয়ে কয়লা তৈরির ৬৯টি চুল্লির ভিতরে স্কেভেটর দিয়ে ৫টি ধ্বংস করা হয়েছিল বাকিগুলো মানবিক দৃষ্টিতে তাদেরকে এক মাস সময় দিয়েছিলাম সমস্ত কাঠের চুল্লি অপসারণ করার জন্য। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তারা অপসারণ করেনি। আমরা ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি খুব দ্রæতই পুনরায় অভিযান চালাব এবং সবগুলো চুল্লি অপসারণ করাব। পরিবেশ অধিদপ্তরকে বার্তা পাঠানোর প্রস্তুতিও নিয়েছি।