ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
কয়রায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ খাবার পনির সংকট!
মো. রউফ, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি : খুলনার কয়রা উপজেলায় গভীর নলকূপের পানিতে পাওয়া যাচ্ছে সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি লবণের উপস্থিতি। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানির স্তর ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের সংস্পর্শে আসায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানি সুপেয় পানির সংকটে পড়ে উপকূলবর্তী জেলাগুলোর বাসিন্দারা। বিশেষ করে স্কুলগুলোতে থাকা গভীর নলকূপের পানি পানের অযোগ্য হওয়ায় বিপাকে পড়ছে বিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত শিশু শিক্ষার্থীরা। ক্লাস চলাকালীন দীর্ঘ সময় পানি পান না করে বা সামান্য পানি পান করে কাটাতে হয় তাদের। যার ফলে শরীরে পানি শূন্যতার সৃষ্টি হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা দেখা দেয়। যেসব এলাকার শিশুরা এ ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের ভিতরে অন্যতম হলো খুলনা জেলার উপকূলবর্তী কয়রা উপজেলা। শিক্ষা অফিসের সূত্র বলছে, এ উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪২। এসব বিদ্যালয়ে ২২ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। স্কুল গুলোতে থাকা নলকূপ বা আশপাশের নলকূপের পানিতে লবণাক্ততা বেশি। কোথাও কোথাও আর্সেনিকের মাত্রা বিপদ সীমার ওপরে, কোনোটির পানিতে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে রয়েছে আয়রন। যার ফলে এসব নলকূপের পানি পানের অযোগ্য। এসব এলাকার বাসিন্দারাও সুপেয় পানির তীব্র সংকটে ভোগেন। স্কুলগুলোর পানিতেও রয়েছে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি লবণ, আর্সেনিক ও আয়রন। খড়িয়া মঠবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাখন লাল মন্ডল বলেন, তার বিদ্যালয়ে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পানির ট্যাংকির ব্যবস্থা করা হয়েছে তবে আগামী বর্ষা মৌসুম ছাড়া পানি সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা নেই। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে কয়রা উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত নলকূপের পানিতে ক্লোরাইড, আর্সেনিক ও আয়রনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। বাংলাদেশের বেশির ভাগ অঞ্চলের পানিতে লবণের সহনীয় মাত্রা প্রতি লিটারে ১৫০ থেকে ৬০০ মিলিগ্রাম। উপকূলের জন্য এ মাত্রা প্রতি লিটারে এক হাজার মিলিগ্রাম। পানি পরীক্ষাগারের তথ্য বলছে, কয়রা থেকে ২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নলকূপের পানি পরীক্ষা করা হয়। এতে তিনটি নলকূপের পানিতে লিটারে এক হাজার মিলিগ্রামের কম লবণ পাওয়া যায়। তিনটি নমুনায় দুই হাজারের কম, ১০ টিতে তিন হাজারের কম, সাতটিতে তিন হাজারের বেশি, বাকিগুলোতে প্রতি লিটারে চার-পাঁচ হাজার মিলিগ্রাম লবণ পাওয়া গিয়েছে। কয়রার আমাদি ইউনিয়নের দক্ষিণ চান্নির চক শিশু মেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। স্কুলের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ৩০০ লিটার ধারণক্ষমতার একটি ট্যাঙ্কে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয়। তবে তাতে বর্ষাকাল শেষে পরবর্তী এক মাসের জন্য পানির জোগান থাকে। বাকি সময় পুকুরের পানি ফিটকিরি দিয়ে শিশুদের পানের ব্যবস্থা করা হয়। প্রধান শিক্ষক জোছিমোন্নেছা জানান, তার বিদ্যালয়ে ১৯৩ শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয় চলাকালে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের পুকুর থেকে ১০ টাকার বিনিময়ে দুই কলস পানি এনে তা ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করে শিশুদের খাওয়ানো হয়। ১৯৩ শিশুর জন্য দুই কলস পানি খুবই অপ্রতুল হলেও তা দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে। সুপেয় পানির সমস্যা সমাধানে নতুন একটি নলকূপ স্থাপন করা প্রয়োজন। উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যলয়ে নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। ভাগবা বন ফুল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, তার বিদ্যালয়ে কোন পানির ব্যবস্থা নেই। গড়িয়াবাড়ি বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুকুমার থান্দার বলেন, ছেলে মেয়েদের বাড়ি থেকে পানি এনে পান করতে হয়। উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় কিছু স্কুল নিজেদের উদ্যোগে স্বল্প ধারণক্ষমতার ট্যাঙ্কে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করছে। তবে তাতে শুষ্ক মৌসুমে চাহিদা পূরণ হয় না। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কয়রার উপ-সহকারি প্রকৌশলী ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, গত দুই বছরে লজিক প্রকল্প সহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫ থেকে ২০টি বিদ্যালয়ের ছাদে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ট্যাঙ্ক স্থাপন করা হয়েছে। তা থেকে কিছুটা হলেও উপকৃত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিশুরা। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, অনেক বিদ্যালয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আর যে সকল স্কুলে পানির ব্যবস্থা নেই সে সকল বিদ্যালয়ে প্রকল্পের মাধ্যমে পানি সংরক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহনের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া কিছু এলাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে অবস্থানের সময় পানি পায় না। ফলে কেউ কেউ বাড়ি থেকে বোতলে করে পানি নিয়ে আসে। এ সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায় তার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। 8,572,830 total views, 600 views today |
|
|
|